শেষের পাতা
বিএনপি’র আন্দোলন
সিলেটে মাঠ দখলে নিতে নেতারা মাঠে
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩০ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবারসিলেটের রাজপথে অবরোধ ও হরতালের প্রভাব কিছুটা কমছে। এই অবস্থায় মাঠ দখলে মরিয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার রাত থেকে তারা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাড়াচ্ছেন শক্তিও। কর্মসূচি স্বতঃস্ফূর্ত পালন করতে চান বলে জানিয়েছেন নেতারা। রাজপথে নামছেন সিনিয়র নেতারাও। গতকাল নগরীর দুটি স্থানে নগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মিছিল ও পিকেটিং করা হয়েছে।
সিলেট বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন; চলমান আন্দোলনে ধরপাকড় এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। জেলা ও নগর ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা মামলায় জর্জরিত হয়ে বাড়ি নেই। এমনকি বিদেশে থেকেও মামলার আসামি হচ্ছেন অনেকেই। একই সঙ্গে পুলিশের ধরপাকড়ও চলছে সমানতালে। প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে করে বিএনপি নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে মাঠে থাকতে পারছেন না। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন; মামলা, গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার গ্রেপ্তার হলে রিমান্ডে নিয়েও নির্যাতন করা হচ্ছে। যারা গ্রেপ্তার হচ্ছে তাদের সহায়তার জন্য আইনি সেল গঠন করা হয়েছে। এদিকে- মঙ্গলবার রাত থেকে রাজপথে শক্তি বাড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। রাতে সিলেট ছাত্রদলের উদ্যোগে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় মশাল মিছিল করেছে। একই সময় মিরাবাজারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামালের নেতৃত্বে মশাল মিছিল করা হয়। এর আগের দিন নগরের সুবিদবাজারে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা মশাল মিছিল বের করে রাস্তায় চলাচলকারী একটি এম্বুলেন্স ও একটি সিএনজি অটোরিকশাতে আগুন দেয়। এ ঘটনার পর থেকে নগরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল অবরোধের শুরুতে সিলেট সদর উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীরা টুকেরবাজার এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে তারা পিকেটিংয়ের পাশাপাশি চলাচলকারী যানবাহনে পিকেটিং করে। এ কারণে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল কমে আসে। বেলা ২টার দিকে নগর বিএনপি’র সভাপতি নাসিম হোসাইনের নেতৃত্বে নয়াসড়ক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মীরবক্সটুলা থেকে কাজিটুলা পর্যন্ত ওই বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা মঈনুদ্দিন সোহেল, আনোয়ার হোসেন মানিক, শামীম আহমদ, মামুনুর রশীদ চেয়ারম্যান, দেলোয়ার হোসেন দিনার, ফজলে রাব্বি আহসান। পরে বেলা আড়াইটার দিকে নগরীর কাজিটুলা এলাকায় নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বেরা করা হয়। এতে করে ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। সড়কে যানবাহন চলাচল কমে আসে। নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি’র নেতারা রাজপথে সক্রিয় আছেন, থাকবেনও। পুলিশ দিয়ে এ আন্দোলন দমানো যাবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি শুয়াইব আহমদ শোয়েব, ২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মামুন ইবনে রাজ্জাক মাসুম, যুবদল নেতা লিটন আহমদ, ওলি আহমদ আলম, ছাত্রদল নেতা তোফায়েল। দুপুরে নগর বিএনপি’র সাবেক সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে নগরীর চৌহাট্টা এলাকা থেকে মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিলটি নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় সমাবেশ করে। মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন- বিএনপি’র আন্দোলন কর্মসূচি পালনে সিলেট বিএনপি’র সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সরকার না হটানো পর্যন্ত সবাই মাঠে থাকবেন। তফসিল বাতিল করে সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি। এদিকে- বাদ জোহর নগরের শিবগঞ্জের ফরহাদ খাঁ পুলের কাছে মিছিল বের করার খবরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশের দুটি দল অবস্থান নিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালায়। তল্লাশির খবরে বিএনপি কর্মীরা আর ওই এলাকায় অবস্থান নেয়নি।
সিলেট মহানগর জামায়াতের মিছিল: সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জনদাবিকে উপেক্ষা করে বাকশালী সরকার তাদের দলদাস নির্বাচন কমিশন ও আজ্ঞাবহ প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারো একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। কোনো দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী জনগণ এই ভোটে অংশ নিবে না। গতকাল দুপুরে জামায়াত আহূত ৮ম ধাপের টানা ২৪ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথা বলেন। গতকাল দুপুরে নগরীর সিলেট-তামাবিল রোডের শিবগঞ্জ এলাকায় অনুষ্ঠিত পিকেটিং পরবর্তী মিছিল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, জামায়াত নেতা শামীম আহমদ ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সেক্রেটারি শরীফ মাহমুদ প্রমুখ।