বাংলারজমিন
বাইক্কা বিলে লুটের উৎসব ২০ বছরে ১০ কোটি টাকা গচ্চা
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২৮ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরের অন্তর্গত বাইক্কা বিলে চলছে হরিলুট। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিচালিত মাছের অভয় আশ্রমের এ জলাশয় তৈরির ২০ বছর অতিবাহিত হলেও লুটপাটের কারণে সরকার এ পর্যন্ত হারিয়েছে কোটি টাকার রাজস্ব। একটি প্রতিবেদনে বিল পরিচালনাকারী সংগঠনের অসঙ্গতি পাওয়া গেলেও তারা এখনো বহাল আছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাছের অভয় আশ্রম নামের প্রজেক্টটির কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। খোদ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘এ বিলের যারা রক্ষক তারাই এখন ভক্ষক।’ সূত্র আরও জানায়, ইজারা প্রক্রিয়ায় গেলে সরকার প্রতি বছর সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব পেতো। এ হিসেবে ২০ বছরে পাওয়া যেতো প্রায় ৬ কোটি টাকা। উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাজিপুরস্থ ‘বড় গাঙ্গিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠন’ বিলটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছে। মাছের নিরাপদ আশ্রয়ে অভয়দান ও বিল সুরক্ষার জন্য এ সংগঠনটিকে শুধু দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বছরের পর বছর মাছ লুট, বিদেশি পাখি শিকার ও দর্শনার্থীদের টিকিট বিক্রির টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন সংগঠনের সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা আরও জানান, অভয় আশ্রম মানে নিরাপদ আশ্রয়। তবে এখানে স্থানীয়দের চোখে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। মাছেরা বিলে ইচ্ছেমতো ঘুরবে, খাবে, খেলা করবে। কিন্তু বাইক্কায় হয়েছে তার উল্টোটা। মাছ না থাকার কারণে বিলে শীত মৌসুমে বিদেশি পরিযায়ী পাখি অনেকাংশে কমেছে। বিলে মাছ বিক্রি বছরে সর্বনিম্ন ৫০ লাখ টাকা ধরা হলে কুড়ি বছরে ১০ কোটি টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু এখন বিলটি একেবারে ফাঁকা মনে হয়। লুট হয়েছে কোটি কোটি টাকা। হাজিপুর এলাকার জাকির হোসেন বলেন, বাইক্কা বিলে প্রতিনিয়ত মাছ চুরি হয়। বড় গাঙ্গিনা সংগঠন এদের দমন করতে পারে না। বাহিরের মানুষ এসে এখানে মাছ চুরি করার প্রশ্নই ওঠে না। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে একটি অংশ সরাসরি মাছ চুরির সঙ্গে জড়িত। সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের সভাপতি পিয়ার আলী বলেন, বিলে ৪ জন পাহারাদার রাখা হয়েছে। তারা এসব দেখেন। এরপরেও চুরি রোধ করা যাচ্ছে না। পাহারাদার মাছ চুরি করছে এমনটা জানতে পারলে কান ধরে বের করে দেবো। অডিটে কোনো গলদ পাওয়া যায়নি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মতো একটা অংশ জেলা প্রশাসক ও মৎস্য কর্মর্তার নামে ব্যাংকে এফডিআর করে জমা আছে। এখান থেকে বিলের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। কমিটিতে দীঘদিন ধরে অনিয়ম হয়ে আসছে। অডিট কমিটি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। বিলে মাছ ও পাখি শিকার হয়ে আসছে। সকল পেশার লোকজনকে নিয়ে স্বচ্ছ একটি কমিটি করলে অনিয়ম বন্ধ হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, বিলে দুর্নীতি হয়েছে এমনটা শুনেছি। তখন আমি ছিলাম না। আগে কেউ এমনটা করে থাকলে আমার জানা নাই। সম্প্রতি মাছ চুরির ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি আসার পর বিলে আগত দর্শনার্থীর কাছ থেকে চাঁদা নেয়া বন্ধ করেছি। এখন বিলে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। যারা দোষী হবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাবেক জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সময়ে সংগঠনের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হলে হিসাবের মধ্যে বড় ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এ ছাড়াও সংগঠনের অডিট প্রতিবেদনে সকল বিষয়ে অসঙ্গতি পেয়ে জেলা প্রশাসককে লিখিত অবহিত করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য অফিস, কৃষি, সমাজসেবা, যুব উন্নয়ন ও উপজেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তারা।