শেষের পাতা
মোকাব্বিরকে নিয়ে জল্পনা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৭ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার
৫ বছর এমপি ছিলেন। তাকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা এলাকায়। ইলিয়াস পরিবারের কাঁধে ভর দিয়ে এমপি হন। এরপর ভুলে যান বিএনপি ও বিরোধী বলয়কে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি। বরং নানা সময় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে
বলে আলোচিত হয়েছেন। টিউবওয়েল বিতর্কে ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে। বড় উন্নয়ন তো দূরের কথা চোখে পড়ার মতো ছোটখাটো উন্নয়নও করতে পারেননি।
তিনি সিলেট-২ আসনের গণফোরামের এমপি মোকাব্বির খান। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন মানুষ। এ কারণে এখন আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি দলীয় এমপি’র আশায় পথ চেয়ে আছেন এ আসনের বাসিন্দারা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ দু’দলের কেউ-ই প্রার্থী হননি। এ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল আলোচনায় ভরা। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা প্রার্থী হয়েও হতে পারেননি। আইনে আটকা পড়েন তিনি। বিরোধী বলয়ে তখন প্রার্থী ছিলেন দু’জন। এরা ছিলেন- খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাছির আলী ও গণফোরামের মোকাব্বির খান। বিরোধী বলয় থেকে বেছে নেয়া হলো মোকাব্বির খানকে। তবে তার আগে নির্বাচনে মনোনয়ন দিলেও ঐক্যফ্রন্টের সমর্থন না পাওয়ায় হতাশ হয়ে লন্ডন ফিরে গিয়েছিলেন। শেষে ওখান থেকে ডেকে এনে তাকে ভোটের মাঠে নামানো হয়। ইলিয়াস পরিবারের হাত ধরে এমপি হন মোকাব্বির। কিন্তু নির্বাচনের পর সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেননি। এ কারণে স্থানীয় বিএনপি ও বিরোধী বলয় এখন তার ঘোর বিরোধী। সরকারের নিয়মিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর আওয়ামী লীগসহ সুশীল সমাজ ও এবং প্রশাসনের সঙ্গে বার বারই বিতর্কে জড়িয়েছেন মোকাব্বির খান।
স্থানীয়দের অভিযোগ; মাঠ পর্যায়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে মোকাব্বির খান মাঠ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েছেন উচ্চ পর্যায়ে। এ কারণে তাকে নিয়ে প্রশাসনের ভেতরেও এক ধরনের অস্বস্তি বিরাজ করে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এমপি মোকাব্বির খান এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। এই অবস্থায় তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন। সম্প্রতি তিনি বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে যাতায়াত ও কর্মকাণ্ডে পুলিশের প্রটেকশন চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তার সেই প্রস্তাব নাকোচ করা হয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- সম্প্রতি তিনি থানার ওসিদের কাছে প্রটেকশন চেয়ে ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া দেয়ার সুযোগ নেই। তার মতে, একে তো তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এর বাইরে হরতাল, অবরোধে পুলিশ ব্যস্ত। ফলে প্রটেকশন দেয়ার সুযোগ নেই। এরপরও পুলিশ যতটুকু পারছে সহায়তা করছে।
এদিকে- মোকাব্বির খানের পুলিশ প্রটেকশন চাওয়ার বিষয়টি চাউর হওয়া মাত্র এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন- বিগত ৫ বছর মোকাব্বির খানের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কেউ-ই স্বস্তিতে ছিলেন না। বিষয়টি শেষদিকে এসে অনুধাবন করতে পেরেছেন তিনি। এ কারণে এখন নিজেই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায়। গত শনিবার রাতে বিশ্বনাথের বাইপাস সড়কের পৌরসভার আনিকা কমিউনিটি সেন্টারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে এমপি প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে মোকাব্বির খানের মতবিনিময় সভা ছিল। কিন্তু এমপি যাওয়ার পর দেখেন ওই সেন্টার তালাবদ্ধ। কর্তৃপক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় সেন্টারের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষেধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ কারণে কয়েকজন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মোকাব্বির খান সেন্টারের ফটকে সভা করে ফিরে যান।
তবে তার আগে সভাস্থল তালাবদ্ধ দেখে এমপি ক্ষুব্ধ হয়ে তার বক্তব্যে বলেন- তিনি স্থানীয় ও সর্বস্তরের নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করার জন্য এই কমিউনিটি সেন্টারটি ভাড়া নেন। কিন্তু একটি কুচক্রী মহলের ভয়ে কর্তৃপক্ষ কমিউনিটি সেন্টারটি তালাবদ্ধ করে রেখেছে। কে বা কারা তার এই মতবিনিময় সভায় বাধা দিয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবেও মোকাব্বির খান স্পষ্ট করে বাধাকারীদের নাম প্রকাশ করেন নি। তবে তিনি বলেছেন- গত ৫টি বছর মহান জাতীয় সংসদ’সহ বিভিন্ন সভা সমাবেশে তিনি দুর্নীতি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এজন্যই সন্ত্রাসীরা কার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। নির্বাচনের আগেই যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে কি করে জনগণ নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। আজ তার সঙ্গে যে অবিচার করা হয়েছে সেই বিচার তিনি জনগণের কাছে রাখেন। বিষয়টি তিনি ঢাকায় গিয়ে উচ্চ মহলে জানাবেন বলে জানান।