শেষের পাতা
পশ্চিমতীরে ‘দ্বিতীয় যুদ্ধ’
মানবজমিন ডেস্ক
২৭ নভেম্বর ২০২৩, সোমবারগাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও হামলা করছে ইসরাইল। তাতে বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন।কিন্তু ফিলিস্তিনের আরেক ভূখণ্ড ইসরাইলের দখলে রয়েছে। তা হলো পশ্চিমতীর। এ অঞ্চল ফিলিস্তিনের ভূমি হলেও এর বৃহৎ অংশ ইসরাইলের বসতি স্থাপনকারীদের দখলে। ওই অঞ্চলে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না তারা। প্রায় ক্ষণে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের গবাদিপশু, ভূমি কেড়ে নিচ্ছে। ফলে আতঙ্কে বসবাস করছেন সীমান্তের কাছাকাছি ফিলিস্তিনিরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৃটেনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেছেন, বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে। শান্তিতে বসবাস করতে হলে এসব বন্ধ করতে হবে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, শহর এলাকার কাছাকাছি, যেমন জেনিন সিটি এবং শরণার্থী ক্যাম্পে ইসরাইলি সেনাদের অভিযান জোরদার করতে দেখা গেছে। মাত্র এক সপ্তাহে তারা সেখানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে হত্যা করেছে ১০ জনকে। আহত হয়েছেন ২০ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৭ই অক্টোবর থেকে দখলীকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৩৭ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৮৫০ জন। ক্যাম্প থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে বাড়ি কৃষক আয়মান আসাদ (৪৫) ও তার পরিবারের। তারা পরিষ্কার হামলার শব্দ শুনতে পেয়েছেন। কয়েক সপ্তাহে স্ত্রী, ৫ সন্তান ও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে তিনি। আয়মান আসাদ বলেন, বাচ্চারা আতঙ্কিত। তারা খেলতে ঘরের বাইরে যায় না আর। বাইরের পরিবেশ বিপজ্জনক। শরণার্থী শিবিরে হামলার শব্দ শুনতে পাই আমরা। বিস্ফোরণ হয়। বন্দুকের গুলি ছোড়া হয়। বাচ্চারা আর স্কুলে যাচ্ছে না। কারণ, স্কুলে যাওয়ার পথ নিরাপদ নয়। বিভিন্ন সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছে ইসরাইলি সেনারা। সব ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু তার মুরগির খামার পশ্চিমতীর থেকে দূরে এরিয়া-সি’তে। সেই খামার নিয়ে চিন্তিত আয়মান আসাদ। তার ভয়, সেই খামার এবং জমি দখল করে নেবে ইসরাইলিরা।
অলিভ অয়েল এবং সবজির জন্য সুপরিচিত ফিলিস্তিন। এসবই তারা রপ্তানি করে। নিজেদের জমিতে টিকে থাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক এই অলিভ গাছ। কিন্তু ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর দখল করে আছে ইসরাইল। তখন থেকেই ফিলিস্তিনি ভূমিতে বেআইনিভাবে বসতি স্থাপন করেছে প্রায় সাত লাখ ইসরাইলি। তখন থেকেই অলিভ, কৃষিজমি এবং বিভিন্ন সম্পদ চুরি করে নিচ্ছে এসব বসতি স্থাপনকারীরা। এই ধারা সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীরা অভিযান জোরালো করেছে। ফিলিস্তিনিরা যখন কারফিউর অধীনে, তখন তাদের সম্পদ এভাবে কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রামাল্লায় প্যালেস্টাইনিয়ান ফার্মার্স ইউনিয়নের পরিচালক আব্বাস মিলহেম। তার নিজের পরিবারের খামার এমন টার্গেটে পরিণত হয়েছে। মাত্র দু’সপ্তাহ আগে তার খামারে আক্রমণ করেছে ইসরাইলিরা। যেসব মানুষ অলিভ তুলছিলেন তাদের দিকে গুলি ছুড়েছে তারা। ওই ফার্মে কাজ করছিলেন ইমান আবদাল্লাহ জাওয়াব্রি (৪৫)। এ সময় সেখানে উপস্থিত হয় ৫ বসতি স্থাপনকারী। তিনি বলেন, তারা আমাদের দিকে গুলি ছোড়ে। তারপর কাছে এগিয়ে আসে। আমাদের ফোন নিয়ে যায়, যাতে তাদের ছবি তুলতে না পারি। এরপর সবাইকে চলে যেতে বলে। পুরুষদেরকে আঘাত করে। তাদেরকে অলিভ গাছের নিচে বসে থাকতে বাধ্য করে। এরপর সব অলিভ নিয়ে যায় তারা। বর্তমানে ওই খামারটি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যদিও তা এরিয়া বি’তে অবস্থিত। সেখানে বেসামরিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। এভাবেই ইসরাইলিরা দখলীকৃত পশ্চিমতীরে দ্বিতীয় যুদ্ধ করছে।