শরীর ও মন
অপচিকিৎসায় বিভ্রান্ত না হয়ে পাইলসের সঠিক চিকিৎসা নিন
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২৫ নভেম্বর ২০২৩, শনিবারপাইলস মলদ্বারের নিচের দিকে অবস্থিত, এটি রক্তনালী দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং মল ও বাতাস ধরে রাখতেও সাহায্য করে। আর যখন পাইলস মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসে, মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায় বা ব্যথা ও অস্বস্তি লাগে, তখন পাইলস রোগ হয়েছে মনে করা হয়। তবে নিশ্চিত হতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। সাধারণত দুই ধরনের পাইলস হয়ে থাকে। (১) বহিঃস্থ পাইলস ও (২) অভ্যন্তরীণ পাইলস।
১. বহিঃস্থ পাইলস
মলদ্বারের মুখে ও বাইরে হয় এবং চামড়ার নিচে থাকে ও ব্যথা অনুভূত হয় না। মলত্যাগের সময় চাপ দিলে বা বেশিক্ষণ ধরে মলত্যাগ করলে বাইরের পাইলসের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে তা শক্ত হয়ে যেতে পারে এবং ব্যথা করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ফেটে রক্ত বের হতে পারে। অনেকদিন ধরে এই পাইলস থাকলে মলদ্বারে চুলকানি ও মলদ্বার পরিষ্কার করতে অসুবিধা হতে পারে।
২. অভ্যন্তরীণ পাইলস
মলদ্বারের ভেতরে থাকে। এই ধরনের পাইলসের প্রধান উপসর্গ হলো মলদ্বার দিয়ে রক্তপড়া ও মলদ্বার বের হয়ে আসা। এই ধরনের পাইলসে ব্যথা হয় না।
যদি ভেতরের পাইলস মলদ্বার দিয়ে বাইরে চলে আসে এবং ভেতরে ঢুকানো সম্ভব না হয় তাহলে ব্যথা হতে পারে।
যেসব কারণে পাইলস হতে পারে: মলত্যাগে সর্বদা চাপ দেয়া, দীর্ঘক্ষণ ধরে মলত্যাগ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, গর্ভাবস্থা, অনিয়মিত মলত্যাগ, বার্ধক্য, খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, বংশগত ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন।
করণীয়: যদি পাইলসের সমস্যা কম হয়, শাক-সবজি, সালাদ, আঁশ জাতীয় খাবার ও তরল খাবার বেশি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। একইসঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য পরিহার করা, মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ না দেয়া, বেশিক্ষণ ধরে মলত্যাগ না করলে রক্তপাত ও মলদ্বার বের হয়ে আসা ইত্যাদি উপায়ে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অনেক সময় মলদ্বারে ব্যথা থাকলে সিজ বাথ নিলে আরাম লাগে। সাধারণত এই নিয়মগুলো মেনে চললে বহিঃস্থ পাইলসের ব্যথা ও ফোলা ২-৭ দিনের মধ্যে কমে যেতে পারে। বহিঃস্থ পাইলসে বেশি ব্যথা হলে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসাসমূহ
ব্যান্ড লাইগেশন: এটি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। ব্যান্ড লাইগেশনের মাধ্যমে পাইলসের উপরে একটি ব্যান্ড পরিয়ে দেয়া হয়, এর ফলে পাইলসের রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পাইলস ও ব্যান্ড ঝরে পড়ে যায়। ১-২ সপ্তাহের মধ্যে ঘা শুকিয়ে যায়। এই চিকিৎসার পর কিছু ক্ষেত্রে রক্ত যেতে পারে ও মলদ্বারে অস্বস্তিও হতে পারে।
ইনজেকশন এবং ইনফ্রারেড: যদি পাইলস মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে না আসে সেসব ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা করা হয়, যা চিকিৎসা সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত।
অপারেশন পদ্ধতি: অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে আরামদায়কভাবে পাইলস সম্পূর্ণ কেটে নিয়ে আসা হয়। এটি একটি কার্যকরী অপারেশন। যদি ব্যান্ড লাইগেশন করা বা ইঞ্জেকশন দেয়ার পর পাইলস আবার হয় বা যদি অনবরত রক্তপাত হতে থাকে বা পাইলস যদি ভেতরে ঢুকানো সম্ভব না হয়, তাহলে কেটে পাইলস অপারেশন করতে হয়। মূলত বহিঃস্থ পাইলসের ভেতরে বার বার রক্ত জমাট বেঁধে গেলে পাইলস অপারেশন করে ফেলতে হবে।
লংগো অপারেশন: এই পদ্ধতিতে একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পাইলস কেটে নিয়ে আসা হয়। এই অপারেশনের পর রক্তপাত বা পাইলস বের হয়ে আসে না। অপারেশনের ৩-৪ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজ করা যায়।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: একে কমপ্লেক্স, অগ্রণী ব্যাংক ভবন, গ্রিন রোড, ঢাকা।
যোগাযোগ-০১৭১২৯৬৫০০৯।