বাংলারজমিন
‘বাঞ্ছারামপুর এখন আর পানিশমেন্ট ট্রান্সফারের জায়গা নয়’
জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
২৪ নভেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
বাঞ্ছারামপুর অনেক দূর। জেলা শহর থেকে সেখানে যাওয়া-আসার ব্যাপার ছিল আঁতকে ওঠার মতো। সে কারণে ওই উপজেলা পানিশমেন্ট ট্রান্সফারের জায়গা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে জেলার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে। শাস্তিমূলক বদলির জন্য বেছে নেয়া হতো ওই উপজেলাকে। দিন পেরিয়ে যেতো বাঞ্ছারামপুর যেতে যেতে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল খুবই নাজুক। সেই বাঞ্ছারামপুরের চিত্র এখন অন্যরকম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উড়শীউড়া গ্রামের মো. হুমায়ুন কবিরের প্রথম কর্মস্থল ছিল বাঞ্ছারামপুরে। ২০০৬ সালের ২২শে জানুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. হুমায়ুন কবির জানান- তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে বা বাসে করে প্রথমে নরসিংদী যেতাম। সেখান থেকে লঞ্চে মরিচাকান্দি। মরিচা থেকে রিকশা বা টেম্পো করে বাঞ্ছারামপুর সদর। এই রাস্তাও ছিল জরাজীর্ণ। ভোর ৪টা বা ৫টায় রওনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর পৌঁছতে বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যেতো। অন্যপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লার দাউদকান্দি হয়ে গৌরীপুর। এরপর হোমনা হয়ে বাঞ্ছারামপুর। তাতে সময় লাগতো ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। একদিনে আসা-যাওয়া কল্পনা করা যেত না। মাসে একবার বাড়িতে আসতাম। এখনো অফিসের কাজে যেতে হয়। তবে সেই সময়ের সঙ্গে এখনকার ফারাক অনেক। জেলার ভেতর দিয়েই এখন সরাসরি যাওয়া-আসা করা যায় বাঞ্ছারামপুর। আড়াই-তিন ঘণ্টায় যেতে পারছি। মোটকথা যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কড়ুইকান্দি গ্রামের এম মনিরুল ইসলাম বলেন-বাঞ্ছারামপুরে পোস্টিং হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে আসতে চাইতেন না। সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে চলা যাবে- এমন অবস্থা ছিল না। চারদিকে নদী-আর খাল। ২০০১ সালে তিতাস নদীর ওপর বাঞ্ছারামপুর-হোমনা সেতু হয়। এরপর শলফা এবং সলিমগঞ্জে তিতাস নদীর ওপর সেতু হয়। এভাবে তিতাস নদীর ওপর ওয়াই আকৃতির একটি বিশেষ সেতুসহ ১০টি সেতু নির্মিত হয়। উপজেলার ভেতরের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল খুব বাজে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নের, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে যাওয়ার কোনো কানেকটিভিটি ছিল না। নৌকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। আর এখন পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার জন্যে রয়েছে পাকা রাস্তা। শতভাগ সড়ক পাকা।
সময় পরিক্রমায় সেই বাঞ্ছারামপুরের ওপর দিয়ে এখন ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন কাজ অগ্রগামী হচ্ছে। বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজারের মধ্যে ৩য় মেঘনা সেতু নির্মাণ হলেই উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার এই নতুন দুয়ার। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে এই সেতু। এরইমধ্যে বাঞ্ছারামপুর-আড়াইহাজার সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১১ সালে ফেরি চলাচল শুরু হয় মেঘনা নদীতে কড়ুইকান্দি-বিশনন্দীর মধ্যে। সেতু নির্মিত হলে এদিক দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেটের দূরত্ব কমবে ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়াও গত ১৫ বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রসর হয়েছে এই উপজেলা। কয়েকশ’ ভবন নির্মিত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। কৃষি ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সরজমিন গেলে স্থানীয়রা জানান- বাঞ্ছারামপুরকে আদিগন্ত বদলে দেয়ার কারিগর হচ্ছেন ক্যাপ্টেন অব. তাজুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু করেন উন্নয়ন যাত্রা। ক্যাপ্টেন অব. তাজ ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসন থেকে। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিমন্ত্রী করা হয় তাকে। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিবারই বাঞ্ছারামপুরকে সমৃদ্ধ করতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। সমৃদ্ধ এবং মানবিক বাঞ্ছারামপুর গড়ে তোলা হয়ে উঠেছে তার লক্ষ্য। সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অব. এবি তাজুল ইসলাম বলেন- আমার সার্বিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় আমি মনে করি আগে যারা বিএনপি’র সমর্থক বা ভোটার ছিলেন তারাই এখন আমাকে ভোট দেবেন। বিএনপি’র সঙ্গেও আমি খারাপ ব্যবহার করিনি। অথচ তারা আমার মায়ের লাশ নিয়ে যেতে দেয়নি। তারপরও আমি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। ভালো ব্যবহার এবং ন্যায় বিচারের কোনো বিকল্প নেই। আমি সেটা করেছি। দ্যাট ইজ দি মটো। আর উন্নয়নের বিষয়ে বলবো এটি যদি শিল্পকলা হয় তাহলে আমি শিল্পী।