খেলা
অজিদের কাছে এটি ২০১৫ বিশ্বকাপের চেয়েও বড় প্রাপ্তি
স্পোর্টস ডেস্ক
২১ নভেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারবিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়াম আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে এক তরফা সমর্থন পেয়েছে স্বাগতিক ভারত। তবে গ্যালারিভর্তি দর্শকদের চ্যালেঞ্জে উতরে গিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
আহমেদাবাদের নীল সমুদ্রকে বেদনায় ভাসিয়ে জিতে নিলো বিশ্বকাপ। এমন প্রতিকূল আবহে বিশ্বজয়কে ২০১৫ ওয়ার্ল্ডকাপের জয়ের থেকেও বেশি মাহাত্ম্যপূর্ণ মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার জশ হ্যাজলউড। আর বিশ্বকাপ জয় নিজের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বলছেন মার্নাস লাবুশেন। ২০১৫ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পঞ্চম শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের সেই স্মৃতি আনন্দঘন হলেও ভারতের মাটিতে তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুশিটাই অন্যরকম হ্যাজলউডের কাছে।
অজি পেসার বলেন, ‘আমি মনে করি, ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ের চেয়েও বড় এটি। অবশ্যই, আমরা ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে ওয়ার্ল্ডকাপ জিতেছিলাম। তবে ভারতে এসে আমরা যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি- এখানে এসে, তাদের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া এবং তাদের মতো দুর্দান্ত একটি দলের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা দুর্দান্ত।’ হ্যাজলউড বলেন, ‘বিশ্বকাপের ফাইনাল জেতাটা অসাধারণ। এমন ভিড়ের মধ্যে...। ভারতের দর্শকরাও অসাধারণ। শুরুতে কিছু দর্শক স্টেডিয়াম ত্যাগ করা শুরু করে। কিন্তু অনেক দর্শক শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা দেখেছে। আমি মনে করি, তারা এই দলটার ওপর অনেক বিশ্বাস করে।’
ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরাস্ত হয় অজিরা। টানা দুই হারে অনেকেই গ্রুপপর্ব থেকেই ব্যাগি গ্রিনদের বিদায় কল্পনা করছিলেন। কিন্তু এরপর টানা ৯ জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিলো অস্ট্রেলিয়া। জশ হ্যাজলউড বলেন, ‘প্রথম দুই ম্যাচে (ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) টুর্নামেন্টের সেরা দুটি দলের মোকাবিলা করি আমরা। (দুই হারের) এরপরই আমরা জ্বলে উঠি। আমার মতে, আজকের (রোববার) ম্যাচটিতে আমরা নিখুঁত খেলেছি।’
২০১৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া মার্নাস লাবুশেনের কাছে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন ভারত বিশ্বকাপ জয়। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াডে সুযোগ না পাওয়া এই ব্যাটার বলেন, ‘আমরা যা অর্জন করলাম, তা অবিশ্বাস্য। এই দলের হয়ে যা কিছু অর্জন করেছি আমি, তার মধ্যে এটি সেরা।’ লাবুশেন বলেন, ‘ভারত ১০ ম্যাচের সবকটি জিতেছে, একটিই কেবল বাকি ছিল... টুর্নামেন্টের সেরা দল ছিল তখনও, অবিশ্বাস্যভাবে খেলছিল তারা... তবে আমরা জানতাম, নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আমাদের সুযোগ আছে। আমাদের বোলাররা অসাধারণ খেলেছে। এরপর ট্রাভিস (হেড) তো দুর্দান্ত প্রদর্শনী মেলে ধরলো। এটির অংশ হতে পারা দারুণ।’
বিশ্বকাপের ১৫ জনের স্কোয়াডে তো নয়ই, ১৮ জনের যে বিস্তৃত স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতেই ছিলেন না লাবুশেন। টানা ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দল থেকে জায়গা হারান তিনি। বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের স্কোয়াডেও ছিলেন না। বরং তাকে পাঠানো হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলে, নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে। এরপর নাটকীয়তার শুরু। স্টিভেন স্মিথ চোট নিয়ে ছিটকে পড়ায় লাবুশেনকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বদলি হিসেবে পাঠানো হয়। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে যথারীতি একাদশে জায়গা পাননি তিনি। এরপর এক ম্যাচে ক্যামেরন গ্রিন চোট পাওয়ায় ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। সাত নম্বরে নেমে ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন লাবুশেন। এরপর বিশ্বকাপে অ্যাস্টন অ্যাগার ছিটকে গেলে ফের ডাক পড়ে তার। আর সুযোগ পেয়ে ফাইনালে ৫৮* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতালেন লাবুশেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমি খুব আত্মবিশ্বাসী মানুষ। ঈশ্বরের ওপর ভরসা আছে আমার। যেভাবে সবকিছু ঘটে গেলো, অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। এটা অসাধারণ। আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি।’