বাংলারজমিন
কুলাউড়ায় গণধর্ষণের পর মোবাইলে ভিডিও ধারণ, অতঃপর...
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২০ নভেম্বর ২০২৩, সোমবারমৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চণ্ডী ইউনিয়নে কথিত সালিশের নামে গভীর রাতে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ধর্ষকরা ধর্ষণের ঘটনাটি মোবাইলে রেকর্ড করে এবং ছবি তুলে রাখে। ঘটনাটি কাউকে জানালে স্বামী-সন্তানকে হত্যার হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। পাশাপাশি নগ্ন ভিডিও এবং ছবি দেখিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৫ই নভেম্বর রাত আনুমানিক ১টায়। পরদিন ওই গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১২ই নভেম্বর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওই গৃহবধূ কুলাউড়া থানায় এসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পর পুলিশ শাকিব মিয়া (২২) নামে এক আসামি গ্রেপ্তার করলেও আসামিরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর থানায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গৃহবধূর স্বামীর বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায়। তিনি শ্বশুরবাড়িতে এসে শহরে এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে ভুলক্রমে অন্য বাসায় ঢুকে পড়েন। বাসার মালিক জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলিম উদ্দিন বিষয়টি নিষ্পত্তির নামে গৃহবধূর স্বামীকে নিয়ে গৃহবধূর বাবার বাড়িতে যান। সেখানে সালিশের নামে সময়ক্ষেপণ করে রাত আনুমানিক ১টায় আসামিরা গৃহবধূকে তার স্বামী খারাপ লোক তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে কাদিপুর ইউনিয়নের পূর্ব মনসুর গ্রামের ছিদ্দিক আলীর ছেলে সুন্দর আলী (৩২), স্থানীয় লৈয়ারহাই গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে শাকিব মিয়া (২২) ও রায় গ্রামের কানাইলাল ঘোষের ছেলে রণধীর ঘোষ (৪০)গৃহবধূকে জোরপূর্বক বাথরুমে নিয়ে ওড়না ও জামা দিয়ে হাত মুখ বেঁধে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও এবং স্থির চিত্র ধারণ করে। এদিকে গৃহবধূর ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে রণধীর ঘোষ গৃহবধূকে ছেড়ে দেয় এবং ধর্ষণকারী এই ঘটনা কাউকে জানালে তার স্বামী সন্তানকে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ধর্ষণকারীরা ঘটনার পরদিন গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে ভিডিও এবং স্থির চিত্র দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করে। গৃহবধূর মা মান সম্মানের ভয়ে নগদ ৪০ হাজার টাকা এবং দুটি চেক প্রদান করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানায়, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী হওয়ায় গৃহবধূ মামলা করতে সাহস পাননি। কিন্তু ঘটনা জানাজানি হলে রহস্যময় কারণে স্থানীয় মেম্বারকে বাদ দিয়ে মামলা নেয় কুলাউড়া থানা। এ ব্যাপারে জয়চণ্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আলিম উদ্দিন জানান, আমি ধর্ষণের ঘটনা কিছুই জানি না। তারাও আমাকে কিছু বলেনি। পরের দিন টাকা নিয়েছে শুনেছি। কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) তাকে ফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি শুনেছেন। কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শাকিব মিয়া (২২)কে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।