ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

মধ্যবিত্ত ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার, বাজেটেও উপেক্ষিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২০ জুন ২০২২, সোমবার

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, মধ্যবিত্ত এখন ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার। এগুলো হলোÑ বৈষম্যমূলক অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই ত্রিমুখী আক্রমণের শিকার মধ্যবিত্তের সুরক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু নেই। পাশাপাশি মধ্যবিত্ত শ্রেণি এই মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে প্রতিনিধিত্বহীন। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবেও মধ্যবিত্তের অভিভাবক নেই। আর প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটেও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। 
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম-এর আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩: পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কী আছে?’ শিরোনামে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ড.‌‌ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। রোববার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনের সম্মেলন কক্ষে আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিবর্গ আলোচনায় অংশ নেন। 
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে একদিকে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের জন্য কিছু দেয়া হয়নি, অন্যদিকে পাচারকারীদের সুবিধা দেয়া হলো। এতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে বাজেট ছিনতাই হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাজেট বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে মধ্যবিত্তরা এখন রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীন, সামাজিকভাবে অভিভাবকহীন এবং অবহেলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। উল্টো তাদের ওপর কর ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হলেও এর এক বড় অংশ বিদ্যুৎ খাতে চলে যাওয়ায় দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা তেমন সুবিধা পাবেন না। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দেও দরিদ্ররা উপেক্ষিত থাকছেন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, গত এক দশকে গড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে অবহেলা করা হয়েছে। উপরন্তু মধ্যবিত্তরা কর ফাঁকি দেয় বলে অর্থমন্ত্রী অভিহিত করেছেন। অথচ এই শ্রেণির মানুষের মেধা ও যোগ্যতাকে কতোটা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের প্রতি কতোটা সুবিচার করা হচ্ছে তার আলোচনা এই বাজেটে নেই। এই মধ্যবিত্তরা যে সমস্ত জিনিস ব্যবহার করে যেমন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র ও রেফ্রিজারেটরÑ সেগুলোর কর বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। দেশের উৎপাদনকারীদের সুরক্ষা দিতে এই ধরনের শুল্ক সুরক্ষা দেয়া হলে ব্যবহারকারী মধ্যবিত্তকেও অন্যভাবে সুবিধা দেয়া উচিত ছিল। বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। ড. দেবপ্রিয় বলেন, এ বাজেট দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য কিছুই দেয়নি বরং অর্থপাচারকারীদের সুযোগ দিয়েছে এবং সৎ করদাতাদের হতাশ করেছে। বাজেটে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটি অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। বাজেটে এই প্রস্তাব সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তিনি আরও বলেন, মাত্র ৭ শতাংশে করে পাচারের টাকা আনার সুযোগ সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া এতে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ৫৪ শতাংশ বাড়ানো হলেও এর বড় একটা অংশ চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জে। সামাজিক নিরাপত্তায় টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও জিডিপি ও বাজেটের আকারের তুলনায় কমেছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের বরাদ্দ বাদ দিলে সামাজিক নিরাপত্তায় প্রকৃত বরাদ্দ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৫০০ টাকার ভাতায় একটা পরিবার বা দুস্থ মানুষের কিছুই হয় না। আমরা প্রতিটি সুবিধাভোগীর জন্য ১০০০ টাকা ভাতার প্রস্তাব করেছিলাম। সেটা করা হয়নি। যুবকদের ভাতাও চালু হয়নি। সাধারণভাবে ভাতাও বাড়েনি। ২০১৮ সালে জাতীয় আয়ের অংশ হিসেবে এই মানুষগুলো ৪ শতাংশের কম ভাতা পেতো। এখন পাচ্ছে ২.১ শতাংশ। পুরো দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লো। তাদের কোনো বরাদ্দ বাড়লো না। এই মানুষগুলোর অপরাধ কি? হয় মাথাপিছু আয় বাড়েনি, নয়তো এই মানুষগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে খুবই সামান্য।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সুদ, পেনশন, প্রকল্প সহায়তাসহ এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলোর সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় দেখানো সঙ্গত নয়।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও এ খাতে কোনো বরাদ্দ নেই। এ লক্ষ্যে আইনেরও দরকার রয়েছে। এই আইন সামনে রেখে যে বরাদ্দ দরকার তা আমার চোখে পড়েনি বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর দিয়ে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনা যাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পাচারকারীদের এমন সুবিধা দিলেও ওইসব টাকা দেশে ফেরত আসবে না। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের অর্ধেকের বেশি ব্যবসায়ী হওয়ায় আগামী অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেট হয়েছে ধনী শ্রেণিবান্ধব। এই বাজেটের মাধ্যমে অনৈতিকতা, দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পাচারকারীদের সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে বাজেটে সংবিধানবিরোধী অবস্থানকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। ফলে বৈষম্য বাড়বে এবং আইনের শাসন নষ্ট হবে। সেই সঙ্গে যে প্রশ্নটি সামনে আসছে, তাহলো সরকার কি অর্থপাচার আইন বাতিল করে দিলো? এ সিদ্ধান্তের ফলে সরকার একদিকে দেশে যেমন সমালোচনার মুখে পড়ছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়বে। কারণ বাংলাদেশ অর্থপাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা, এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। পাচারকারীদের সুবিধা দিলেও দেশে পাচারের টাকা ফেরত আসবে না বরং এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে যেভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাচারের টাকা ফেরত আনা হয়েছে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলেছেন ইফতেখারুজ্জামান।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status