ঢাকা, ৯ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

কিশোরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, ১৫ গ্রামের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
২০ জুন ২০২২, সোমবার

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেই চলেছে। এরমধ্যে জেলার ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এই দুই উপজেলার বেশিরভাগ গ্রাম এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। এছাড়া অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, নিকলী ও তাড়াইল উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় করিমগঞ্জ ও ইটনা উপজেলার ১৫টি গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই ১৫টি গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের ১০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। পানি কমে গেলে পুনরায় বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হবে বলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এদিকে বন্যার্তদের জন্য জেলায় ১২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গত শনিবার থেকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্তদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইটনা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নই এখন কমবেশি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গতকাল বৃষ্টি না হলেও পানি বেড়েছে। এ উপজেলার সীমান্তবর্তী কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ১৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ধনু নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার একের পর এক গ্রাম। পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বেশিরভাগ বাজার ও সড়ক। ইটনা সদর, মৃগা, ধনপুর, জয়সিদ্ধি, বড়িবাড়ি, রায়টুটি, বাদলা, চৌগাংগা ও এলংজুরী ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামে এখন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্র এবং অপেক্ষাকৃত উঁচুতে থাকা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ভিড় করছেন। অনেকে গবাদিপশুসহ মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন মৃগার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। মিঠামইন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম পানির উপর ভাসছে। উপজেলার মিঠামইন সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ পল্লী, নবাবপুর, মিষ্টা, খিলাপাড়া, কলেজের পিছনের পাড়া নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ঘাগড়া, হোসেনপুর, খলাপাড়া, ভরা, সাবাসপুর, চমকপুর, শিহারা, ধোবাজোড়া, ডাইনগাঁও, সুলতানপুর, হাবিবপুর, আলগাহাটির বাড়িঘর পানিতে ভাসছে। ধোবাজোড়া, শিহারার প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ পানিতে তলিয়ে পানি এখন বাড়িতে ঢুকে পড়েছে। ঘাগড়া বাজার থেকে চমকপুর মাদ্রাসা পর্যন্ত অলওয়েদার সড়ক তলিয়ে গেছে। ঘাগড়া হাই স্কুল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত অলওয়েদার সড়ক অর্ধেক তলিয়ে গেছে। 
চমকপুর গ্রামের দক্ষিণের বেড়িবাঁধ তলিয়ে গেছে। গোপদীঘি ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম, ঢাকী ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম, কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম, কাটখাল ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম, বৈরাটি ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
কিশোরগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি অফিস সূত্র জানিয়েছে, করিমগঞ্জ ও ইটনা উপজেলায় হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় চৌগাংগা ও নিয়ামতপুর অফিসের অধীন এই দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছেÑ শান্তিপুর, চারিতলা, বালিয়াপাড়া, খাগশ্রী, সুতারপাড়া, বালিখলা, পাঁচকাহনিয়া, বড়িবাড়ি, এনসহিলা, দিয়ারকান্দি, বাদলা, কুর্শি, শিমুলবাঁক, টিয়ারকোনা ও চংনোয়াগাঁও। এসব এলাকায় লাইনের ক্লিয়ারেন্স কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে গত শনিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার হাওরাঞ্চলের প্রত্যেক জায়গায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বন্যাকবলিত লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যার্তদের মাঝে শুকনা খাবার, চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status