দেশ বিদেশ
এক বৈঠকেই সিলেটে স্বস্তি
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৯ জুলাই ২০২৫, বুধবারনানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা। এর শেষ হচ্ছিল না। বরং সংকট দানা বাঁধছিল। শেষপর্যন্ত ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি এসেছিল। ক্ষোভ ছিল সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মোরাদের বিরুদ্ধেও। তার অপসারণও দাবি করা হয়েছিল। এতে হস্তক্ষেপ করলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী। ডাকলেন সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকসহ পেশাজীবীদেরও। এক বৈঠকেই সিলেটে এলো স্বস্তি। খোলামেলা আলোচনা হলো। প্রশাসনিক দমনপীড়নের জন্য ক্ষোভ ঝাড়লেন ব্যবসায়ীসহ পরিবহন শ্রমিকরা। এই বৈঠকটি গত মঙ্গলবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। টানা সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে সিলেটের নানা সেক্টরের মানুষজন তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার। তার আগে তিনি মনোযোগ সহকারে সবার কথা শোনেন। বক্তব্যে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন- মানুষ বাঁচলে সব হবে। মানুষের জন্যই সব। সুতরাং মানুষের কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ থেকে সবারই বিরত থাকা উচিত। আইনের কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এসব বিধিনিষেধের থাকা মানতে হয়। সিলেটের সংকটের সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এ জন্য তিনি উদ্যোগ নেবেন। অবশ্যই কথা বলবেন। সিলেটের মানুষের দাবি নিয়ে যাতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ইতিবাচক মনোভাব আসে সেক্ষেত্রে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এ জন্য সময় প্রয়োজন। তিনি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সবকিছু করবেন বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করেন। বিভাগীয় কমিশনারের আগে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বক্তব্যে তিনিও তাগিদ দেন আলোচনার। সরকারের শীর্ষ মহল পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়া সিলেটের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে একটি প্রতিনিধিদল ঠিক করার ওপর তাগিদ দেন তিনি। একইসঙ্গে সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে আলোচনার পূর্বপর্যন্ত সিলেটে অভিযানে ভাঙচুর ও নিরীহ শ্রমিকদের ধরপাকড় বন্ধের আহ্বান জানান। নিরাপত্তার স্বার্থে সিলেটের ক্রাশার মিলগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলেন। তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে বলেন- ‘আপনারা সিলেটের মানুষের মনের কথা বুঝুন। সিলেটে অনেক জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাদের সঙ্গে এখনো সিলেটের মানুষের যোগাযোগ রয়েছে। তারাও সিলেটের প্রতি টান অনুভব করেন।’ সিলেটে স্টোন ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন- বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঊর্ধ্বতনদের জানিয়ে অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। আর বিচ্ছিন্ন থাকা বিদ্যুতের লাইন চালু রাখতে তিনি ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ কোনো কিছু করা যায় কিনা সে বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তার বক্তব্যের সময় ব্যবসায়ীরা জানতে চান কবে বিদ্যুতের মিটার চালু হবে। তবে জেলা প্রশাসক কোনো মন্তব্য করেননি। বিভাগীয় কমিশনারের সিদ্ধান্তের জন্য রাখা হয়। এদিকে বৈঠকে সিলেটের ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও নগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম। শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি উত্থাপন করেন জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ময়নুল ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে ৫ দফা দাবির নানা দিক তুলে ধরে বলেন- পথে পথে শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। অভিযানের নামে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি জানান। পদে পদে সিলেটের মানুষের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বৈঠক শেষে শ্রমিকদের আন্দোলনের সমন্বয়ক শাব্বির আহমদ ফয়েজ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘বিভাগীয় কমিশনারের বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট। তার সঙ্গে বৈঠকের আগেই সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছিল। পরে বিকালে বৈঠকে আমাদের জানানো হয়েছে আগামী দু’দিনের মধ্যে বসে আমাদের ঘোষিত ৬ দফা দাবি নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন। আমরাও এতে রাজি হয়েছি। আশা করা হচ্ছে; সিলেটের প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মিলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে।’