ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

মান্নান-খসরু বাহাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৭ জুন ২০২২, শুক্রবার
mzamin

বাজেট আলোচনায় পরিসংখ্যান কারসাজি নিয়ে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও বিএনপি’র সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মধ্যে বাহাস হয়েছে। গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে তারা এ বাহাসে জড়ান। এতে পরিসংখ্যান নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও এম এ মান্নান।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, সরকার কারসাজি করে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। জবাবে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, পরিসংখ্যান কারসাজি করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ করা যায় না। আর দেশের মানুষের ঘরে ঘরে যে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বা মানুষের গড় আয়ু ৭০ পেরিয়ে গেছে, তাও পরিসংখ্যান কারসাজি করে অর্জন করা যায় না।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার পরিসংখ্যান নিয়ে ‘কারসাজি’ করছে। ২০০৭ সালে বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশের পরিসংখ্যান নিয়ে স্কোর ছিল ৭০, এখন সেটা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকার কারসাজি করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেখাচ্ছে। এ ছাড়া আমীর খসরু সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, একটি ‘অনির্বাচিত’ সরকারের বাজেট নিয়ে প্রশ্ন তোলার অনেক অবকাশ আছে।

আমীর খসরু মাহমুদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান বলেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যে ‘অনির্বাচিত’ শব্দটি বললেন, তা ক্লিচে হয়ে গেছে। এই কথা শুনতে শুনতে জনগণের কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। বর্তমান সরকার অনির্বাচিত নয়, কার্যকর সরকার। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বিএনপিকে নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ব্যবহৃত কারসাজি শব্দটি নিয়ে প্রবল আপত্তি করে তিনি বলেন, তার মতো একজন জ্যেষ্ঠ নেতার কাছ থেকে এমন ভাষা আশা করা যায় না। তিনি বলেন, সরকার নিশ্চয়ই কারসাজি করে পদ্মা সেতু বানাতে পারেনি, মেট্রোরেল বানাতে পারেনি, নদীর নিচ দিয়ে টানেল তৈরি করতে পারিনি। দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে সেই পরিসংখ্যান নিশ্চয়ই কারসাজি করে তৈরি করা যায় না বা মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর, তা নিশ্চয়ই কারসাজি করে বানানো হয়নি। 

এদিকে বাজেট নিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, সরকার ঠিক কোন ধরনের অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করছে, সেটা বোধগম্য নয়। যারা উন্নয়নে কোনো ভূমিকা পালন করছে না, বরং দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার করছে, তাদের সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তা অনৈতিক। যারা দেশে থাকছেন, বিনিয়োগ করছেন বা কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, তারা ২৫% আয়কর দেন। আর যারা দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে টাকা পাচার করছেন, তারা ৭ শতাংশ কর দিয়ে সেই টাকা বৈধ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

বিদেশে পাচার করা টাকা কর দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ইট ওয়াজ নট এ ডেস্পারেশন আনলেস ইট ইজ নট এ ক্রিমিনাল অ্যাক্ট। চুরি করা টাকা চোর না দেয়া পর্যন্ত আমি তো জানি না তিনি চোর না ডাকাত না সাধু।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। অনেকে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তিনি তা স্বীকার না করে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অনেক বড় পরিসরে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান তৈরি করে। সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। মন্ত্রী বলেন, নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আলাদা সূচক করার প্রয়োজনীয়তা আছে। সেটি করা গেলে বোঝা যাবে, তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব কতটা। তবে এটা সত্য, মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্নআয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অনুষ্ঠানে সিপিডি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশের মধ্যে রাখার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবসঙ্গত নয়। নিত্যপণ্যের চড়া দামের চাপে আছে দরিদ্র, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই বলেও মনে করে সংস্থাটি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের দামে অস্থিরতা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতাসহ, ৬টি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু মোকাবিলায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া পাচার করা অর্থ ফেরত আনার সুযোগ দেয়াকে অনৈতিক উল্লেখ করে সিপিডি বলছে এটিও সমর্থনযোগ্য নয়। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি বাড়লেও করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি বরং বিত্তবানদের অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়া হয়েছে। সিপিডি বলছে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে। এদিকে করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়লেও বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। যাকে কোনোভাবেই কাম্য মনে করছে না সিপিডি।

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, এসিআই চেয়ারম্যান আনিস-উদ-দৌলা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status