খেলা
সেলিম থেমেছেন, তবে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বক্সিং
সামন হোসেন, হাংজু (চীন) থেকে
৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবারকাল সন্ধ্যায় ছিল হাংজুর জিমনেশিয়ামে বক্সিং ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণির কোয়ার্টার ফাইনাল। যেখানে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে জাপানের সুদেয়ি হারাদার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের সেলিম হোসেন। তার আগে ভারতের বক্সার শচীনের বিপক্ষে রিংয়ে নামেন স্বাগতিক চীনের লিও পিং। স্বাগতিক বক্সারকে উৎসাহ দিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল হাংজু জিমনেশিয়াম। ভরা দর্শকের সামনে জাপানের বক্সারের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের সেলিম। এই বক্সিংয়ে ব্যক্তিগত ইভেন্টে একমাত্র পদকটি জিতেছিলেন মোশারফ হোসেন। কাল জাপানের প্রতিযোগীকে হারাতে পারলে মোশারফের কাতারে নাম লেখাতেন সেলিম। রিংয়ে সেলিম চেষ্টা করেছেন। জাপানের প্রতিযোগীর সঙ্গে তুমুল লড়াই করেছেন। তবে অভিজ্ঞতা আর সুযোগ সুবিধায় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের এই বক্সার শেষ পর্যন্ত পারেননি। ৩-০ ব্যবধানে হেরে থেমেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। তবে তিন বাউটেই বিচারকের রায়ে এক পয়েন্ট করে পিছিয়ে ছিলেন সেলিম।
মাত্র চার মাসের টেনিং সেলিমের। এর মাঝে আবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রিংয়ের বাইরে ছিলেন সপ্তাহ দু’য়েক। অসুস্থতার সঙ্গে ট্রেনিংয়ে ঘাটতি এসবের মাঝেও শ্রীলঙ্কা ও তাজিকিস্তানের প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নেন বক্সার সেলিম। কাল সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলেই ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। সেটা না পারলেও হতাশা কাজ করছে না সেলিমের। জাপানের শক্তিশালী প্রতিযোগীর কাছে হেরে মিক্সড জোনে এই বক্সার বলেন, ‘আলহামদুল্লিাহ, সকল প্রশংসা উপরের আল্লাহর। আমাকে এই পর্যন্ত এনেছেন, এইজন্য শুকরিয়া আদায় করি আল্লাহ পাকের। আমি যা করেছি তাতে খুশি।’ কোনও গেমস এলেই টনক নড়ে বাংলাদেশের। নামকা ওয়াস্তে টেনিং করিয়ে অ্যাথলেটদের ঠেলে দেন কঠিন প্রতিযোগিতার মাঝে। সেলিমও তাদের একজন। এর আগে দুই মাসের প্রস্তুতিতে বার্মিংহাম কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন তিনি। খেলেছেন এশিয়ান বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে। আগের দুটি আসরে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারলেও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। যা দিয়েই এখানে পদকের আশা জাগিয়েছিলেন তিনি। হয়নি, তবে এখানেই থামতে চান না এই বক্সার, যেতে চান বহুদূর। তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়ে সেলিম বলেন, ‘আমি যতটুকু ট্রেনিং করছি, আমার ফেডারেশন অলিম্পিক আমাকে যতটুকু সুবিধা দিয়েছে, সাপোর্ট করেছে এই হিসেবে এতো বড় আসরে আমার পারফরমেন্সে আমি খুশি। সামনে অলিম্পিক যদি বিদেশি কোচ দেয়, বিদেশে ট্রেনিং করার ব্যবস্থা করে তাহলে আমি না পারলেও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এশিয়াডে পদক এনে দিতে পারবে।’ রিংয়ে জাপানের প্রতিপক্ষ নিয়ে সেলিম বলেন, ‘জাপানি প্রতিপক্ষ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু জাপানের খেলোয়াড়ের গতি আমার চেয়ে বেশি। কৌশলেও অনেক এগিয়ে ছিল। মাত্র চার মাসের ট্রেনিংয়ে তাই ওর সঙ্গে আমি কুলিয়ে উঠতে পারিনি।’ পদক হারিয়ে মুখ ফুটে আফসোস না করলেও সেলিম বলেন, ‘আফসোস যে হচ্ছে না, এটা বললে মিথ্যা বলা হবে। প্রতিটি অ্যাথলেটই স্বপ্ন দেখে পদকের। আমিও স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু কাউকে বলিনি। আমি আমার ট্রেনিংটা চালিয়ে গেছি। তার ফল এটা। পদক হয়তো পাইনি। কিন্তু এখান থেকে যা নিয়ে যাচ্ছি তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে।’ সেলিম ছাড়াও বক্সিংয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন আবু তালহা। অথচ এদের নিয়ে কোনও আশা ছিল না ফেডারেশন কিংবা অলিম্পিকের। তারা আশা করেছিলেন আমেরিকা প্রবাসী জিনাত ফেরদৌসকে নিয়ে। তিনি হতাশ করেছেন।