বাংলারজমিন
একহাতের উপর চলছে জীবন যুদ্ধ
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার
ভিক্ষা নয়, পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন একহাতবিহীন দিনমজুর শাহ আলী (৪৪)। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই যোদ্ধার উপর নির্ভরশীল পরিবারের ৪ সদস্য। শাহ আলী পেশায় একজন দিনমজুর। তার ঘরে ৪ মেয়ে সন্তান ও এক স্ত্রী আকলিমা বেগমকে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার। এরমধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হওয়ায় দিনমজুরির আয়ে কোনো রকমে চলে শাহ আলীর পরিবার। প্রায় ৩ বছর আগে বগুড়ায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাম হাতটি হারিয়ে ফেলেন এবং একই বছরে একমাত্র সম্বল বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তবে তিনি থেমে থাকেননি। নিজেকে প্রতিবন্ধী না ভেবে একহাত নিয়েই ধরেন সংসারের হাল।
শাহ আলী জানান, আমার জমিজমা বলতে ১৬ শতক ভিটেমাটি ছাড়া কিছু ছিল না। অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে সংসার চলতো। তিস্তা নদী আমার ভিটেমাটি কেড়ে নেয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় দ্বীপ চরে বছরে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় ১০ শতক জমিতে কোনো রকমে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। ৪ মেয়ে এবং স্ত্রীসহ ৬ জনের সংসার। এরমধ্যে দুটি মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার একহাত নেই বলে আগের মতো কেউ আর কাজে নিতে চায় না। তবুও ভিক্ষাবৃত্তির মতো নিচু কাজ করবো না।
শাহ আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম বলেন, আগে মোটামুটি ভালো ছিলাম। স্বামীর হাত হারানোর পর প্রায় ৩ বছর ধরে আমরা কষ্টে আছি। আমাদের ৪টা মেয়ে, একটা ছেলে সন্তান নাই যে সংসারের হাল ধরবে। দিন যতই যাচ্ছে সংসারে খরচ ও দুঃশ্চিন্তাও বাড়ছে। আল্লাহ জানে-ভবিষ্যতে আমাদের ভাগ্যে কি আছে? ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. কুদ্দুস বলেন, দুর্ঘটনায় একহাত হারিয়ে শাহ আলী পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন। তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে পরিবার চলার মতো কোনো সহযোগিতা পেলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, দুর্ঘটনায় হাত হারানো শাহ আলীর বিষয় জানতে পারলাম। আরও খোঁজখবর নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তাসহ তাকে কীভাবে স্বাবলম্বী করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।