বাংলারজমিন
খুলনায় স্যালাইন সংকট
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিনে দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। এদিকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এনএস বা নরমাল স্যালাইন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে এই স্যালাইনের। বিষয়টিকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছে কতিপয় অসাধু ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দাম নিচ্ছেন দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ। আর এতে দিশাহারা রোগীরা।
গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় নতুন করে সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে খুমেক হাসপাতালে একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩ জন এবং মৃত্যু হয় ৪৬ জনের। গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজন লিটন সরকার বলেন, গত তিন দিন ধরে তার ফুপাতো ভাই রুম্মান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। খুমেক হাসপাতালের সামনে কোথাও স্যালাইন পাননি। পরে হেরাজ মার্কেট থেকে ১৮০ টাকায় এনএস স্যালাইন কিনেছেন। যা তিনি তিন মাস আগে ৮৭ টাকায় কিনেছিলেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী মাসুদ খান বলেন, তার ছোট ভাই আলাউদ্দিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। কিন্তু এই এলাকায় নরমাল স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। খুলনায় অনেক দোকান ঘুরে একটি মাত্র স্যালাইন কিনতে পেরেছেন। যার দাম ২০০ টাকা নিয়েছে। যদিও তার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দু’টি স্যালাইন প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, দেশব্যাপী ডেঙ্গুর বিস্তারে নরমাল স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট অসাধু ব্যবসায়ীরা সৃষ্টি করেছেন। এতে সাধারণ রোগীরা কিছুটা হলেও ভোগান্তিতে পড়েছে। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইনের পর্যাপ্ত মজুত আছে। খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্যালাইন সংকট নেই বলে দাবি করেছেন খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সজিবুর রহমান। তবে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন সংকট আছে কিনা তার কাছে এ ধরনের তথ্য নেই। সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, তার হাসপাতালে স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। আপাতত স্যালাইনের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এক মাস ধরেই স্যালাইন সংকট রয়েছে। চাহিদা দিলেও তারা এখন পর্যন্ত পাননি। কেমিস্ট এ- ড্রাগিস্ট সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম কবির উদ্দিন বাবলু বলেন, খুলনায় সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে স্যালাইন সংকট চরম আকারে দেখা দিয়েছে। ওষুধ কোম্পানিগুলো চাহিদা মোতাবেক স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন না। কোনো ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ যদি বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজন হলে সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নোটিশ জারি করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডা. সুমন রায় (মেডিসিন) বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে রক্তের জলীয় অংশ কমে যায় এবং ঘনত্ব বেড়ে যায়। তখন তারল্য ঠিক রাখতে একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি স্যালাইন দেয়া প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য স্যালাইনের ঘাটতি দেখা গিয়েছে।