ঢাকা, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩, সোমবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

শিশুর কৃমি সংক্রমণ

ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
১ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার

কৃমি হলো একধরনের পরজীবী (Parasite) কীট, যা সাধারণত সাদা রঙের হয় এবং বিভিন্ন উপায়ে এর ডিম পাকস্থলীতে প্রবেশ করার পর মলদ্বার অঞ্চলে অবস্থান করে। তবে চরহড়িৎস বা সুতা কৃমি এগুলো পায়ুপথের রাস্তায় এসে প্রচণ্ড অস্বস্তি তৈরি করে এবং শিশুকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। কৃমি ২ থেকে ১২ মি.মি. আকারের হতে পারে এবং কেবল মানুষই এই কীটের একমাত্র প্রাকৃতিক বাহক। কৃমি যে ডিম পাড়ে তা স্বচ্ছ এবং খালি চোখে দেখা যায় না। কৃমি হলে শিশুর খাবারের প্রতি রুচি কমে যায়। স্বাস্থ্য খারাপ হয়, ওজন বাড়ে না। কেননা, সে যা খায়, তার এক-তৃতীয়াংশই কৃমি খেয়ে ফেলে। শিশু রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হয়। একটা কৃমি প্রতিদিন শরীর থেকে শূন্য দশমিক ১ মিলিলিটার রক্ত শোষণ করে থাকে। শুধু কৃমির কারণেই দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগে।

কৃমি সংক্রমণের কারণ
স্কুল পড়ুয়া শিশু যাদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে এসব শিশুর কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বিজ্ঞাপন
মূলত সংক্রমিত শিশু অন্য কোনো শিশুর সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে এলেও কৃমির সংক্রমণ ঘটে। সংক্রমিত শিশুদের পরিবারের সদস্য পিতা-মাতা ছাড়াও শিশুর সেবক যেমন, আয়া, দাদা-দাদি যারা শিশুকে কোলে নেয় তারাও কৃমি সংক্রমিত হয়ে থাকেন। তাই কৃমি সংক্রমিত রোধ এবং নির্মূল করা দুটিই কঠিন। এ ছাড়া ২ থেকে ৩ বছরের শিশুরা হাত বা খেলনা বা সামনে যা পায় তাই মুখে দেয়। শিশুর ব্যবহার্য এইসব জিনিস পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত কঠিন। এসব বাচ্চার প্যান্ট যদি ফুটানো না হয় এবং সাবান পানিতে না ধোয়া হয়, তাহলে কৃমি সংক্রমণ রোধ করা কঠিন। শিশুকে যিনি দেখাশোনা করেন, তিনি বিশেষ করে খাওয়ার আগে হাত ঠিকভাবে ধুয়ে নিচ্ছেন কিনা, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ময়লা হাত, অনিরাপদ পানি, বাসি ও খোলা খাবার থেকেও কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। খালি পায়ে ময়লা মাটিতে হাঁটা কিংবা হাত দিয়ে মাটিতে কাজ করে সঠিক নিয়মে হাত না ধুলেও কৃমি সংক্রমণ হয়।

লক্ষণ
মলদ্বারে ঘন ঘন চুলকানি এবং অস্বস্তি, বিশেষত রাতে মলদ্বারের এলাকায় অস্বস্তির কারণে অস্থিরতা এবং ঘুমের সমস্যা হয়, মলদ্বারকে ঘিরে র‌্যাশ বা ত্বকের জ্বালা, মলদ্বারে দৃশ্যমান কৃমি দেখা পাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে পেটে ব্যথা, কখনো ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, অস্থিরতা। অন্যান্য অসাধারণ লক্ষণের মধ্যে- প্রচণ্ড মাথাব্যথা, দীর্ঘমেয়াদি কাশি, চোখে চুলকানি, রক্ত স্বল্পতা, লিভারে সমস্যা প্রভৃতি।

কৃমি সংক্রমণ নির্ণয়
যদি শিশুর মলের মধ্যে সাদা কৃমি থাকে তবে সহজেই সংক্রমণ বোঝা যায়। এটি পরীক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় হলো শিশু সকালে ঘুমের মধ্যে যখন পায়ুপথে হাত দেবে তখনই সে স্থান দেখতে হবে। এবং সহজেই কৃমি দেখতে পাবেন। সাদা কৃমি পরীক্ষা করতে আপনি আপনার সন্তানের মলও পরীক্ষা করতে পারেন।

পরিত্রাণের উপায়
খাওয়ার আগে শিশুর ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে, টয়লেট ব্যবহারের পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে, পানি ভালো করে ফুটিয়ে পান করাতে হবে, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুকে খাওয়াবেন না, স্বাস্থ্যকর উপায়ে পরিষ্কার হাতে শিশুর খাবার তৈরি ও পরিবেশন করবেন এবং খাবার ঢেকে রাখবেন, নোংরা জায়গায় শিশু খালি পায়ে হাঁটবে না, দুই বছর বয়স থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়ান, বাড়ির গৃহকর্মীসহ পরিবারের সবাই এই ওষুধ খাবেন এবং কৃমি দেখতে পেলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

কৃমির ওষুধ নিয়ে জানা-অজানা
প্রতি ছয় মাস পরপর পরিবারের সবাই একটি করে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করতে পারেন। মেবেনডাজল হলে খেতে হবে পর পর তিন দিন। সাত দিন পর আরেকটা ডোজ খাওয়া যায়। শিশুদেরও একইভাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে। দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কৃমি হলে পায়ুপথ চুলকায় বলে শিশুরা সেখানে হাত দেয়। পরে আবার সেই হাত মুখে দেয়। এভাবেই সংক্রমণ ছড়াতে থাকে। তবে পায়ুপথ চুলকানো মানেই কৃমি সংক্রমণ নাও হতে পারে। কৃমি সংক্রমণের আরও উপসর্গ আছে। যেমন- ওজন না বাড়া, পেট ফাঁপা, পেট কামড়ানো, আমাশয়, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি।

গরমকালে কৃমিনাশক খাওয়া যাবে না, এমন ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই। গরম, শীত, বর্ষা যেকোনো সময়ই কৃমিনাশক খাওয়া যাবে। তবে খাওয়ার পর বা ভরা পেটে খাওয়া ভালো।
কৃমিনাশক ওষুধ নিরাপদ। এর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে কারও কারও পেট ফাঁপা বা বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় কৃমিনাশক খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার যে খবর পাওয়া যায়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারজনিত।

কেবল গ্রামে বা রাস্তায় থাকা শিশুদের কৃমি হয়- এই ধারণাও ভুল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যে কারও কৃমি সংক্রমণ হতে পারে। তাই অপুষ্টি এড়াতে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াই ভালো।

লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ,রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার : ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার,
শাহ মখদুম, রাজশাহী।
মোবাইল-০১৯৮৪১৪৯০৪৯

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status