শেষের পাতা
ঢাকার দুই প্রবেশমুখে বিএনপি’র সমাবেশ
‘কেএম হাসানকে তারা মানেনি আমরা কেন আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মানবো’
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার
সরকার পতনের একদফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর দুই প্রবেশমুখ গাবতলী ও সাইনবোর্ড এলাকায় সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশ দুটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ড. আবদুল মঈন খান। তারা বলেন, দেশের জনগণ বিএনপি’র আন্দোলনের পক্ষে আছে। শুধু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক দল নয়, পুরো বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো এই সরকারকে দেখতে চায় না। আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। তারা বলেন, ২৬ বছর আগে বিএনপি করার অভিযোগে বিচারপতি কেএম হাসানকে আওয়ামী লীগ মানেনি, এখন কেন আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে মানবো।
গাবতলীর সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতির কারণে সরকার বিপদে আছে বোঝা যায়। পত্রিকা পড়লে দেখা যায় তারা চাপাবাজি করে। বহুজনের ছেলে-মেয়েরা আমেরিকা যেতে পারছে না। বহুজনের ছেলে-মেয়েরা ফিরে আসছে। বড় বড় সরকারি কর্মকর্তা ভিসার দরখাস্ত দিয়ে রিজেক্টেড হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে ক্রন্দন চলছে। আর বাইরে এসে গলাবাজি করছেÑ এসব স্যাংশন আমরা পরোয়া করি না। পরোয়া না করলে এভাবে সারাদিন কথা বলছেন কেন। আপনারা ভয় পেয়ে গেছেন। কিন্তু ভিসা স্যাংশনের কারণে আমরা লজ্জিত জাতি হিসেবে। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন একদফার। ৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ছিল না। আওয়ামী লীগের দাবির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক মানছে না। কারণে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। তিনি বলেন, আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম করেছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব গণতান্ত্রিক দল দাবি করেছেÑ এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
তিনি বলেন, ২৬ বছর আগে বিএনপি করার কারণে বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায়নি আওয়ামী লীগ। এখন কেন আমরা আওয়ামী লীগ সভাপতির অধীনে নির্বাচন মানবো। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের দাবি ন্যায্যা, জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। সবাই পরিবর্তন চায়। এই সরকারের পতন অবশ্যই হবে। পুরো গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই সরকারকে দেখতে চায় না। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুুল খায়ের ভুইয়া, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিমউদ্দিন আলম, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েল প্রমুখ।
এদিকে সাইনবোর্ড এলাকায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ড. মঈন খান বলেন, আমরা রাজপথে নেমেছি, রাজপথে থাকবো। আমাদের দায়িত্ব দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করা। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবো, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবো। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ খুন-গুম করে অপশাসন চালিয়ে আসছে। এই সরকার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে। সেই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার হতে পারে না। মঈন খান বলেন, টাকা ছাপিয়ে তারা অর্থনীতির কি অবস্থা করেছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রস্ফীতির কারণে দেশের গরিব মানুষের কি অবস্থা হয়েছে। বৈদেশিক সঞ্চয় লোপাট করে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে আইএমএফের কাছে হাত পেতেছে। তারা অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছে। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবার লুটপাট করে দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছিল। আওয়ামী লীগ একই কায়দায় কতগুলো পরিবার সৃষ্টি করেছে যারা মানুষের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। মঈন খান বলেন, এই সরকারকে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আন্দোলন করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। সাইনবোর্ড এলাকায় ফতুল্লা থানা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, বেনজির আহমেদ টিটু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মাহমুদুর রহমান সুমন, মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান প্রমুখ।