খেলা
বিশ্বকাপ দল
বিতর্ক অস্বীকার নান্নুর,জানালেন ইনজুরির কারণেই বাদ তামিম
ইশতিয়াক পারভেজ
(১ বছর আগে) ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩৮ অপরাহ্ন

গেল এক বছর ধরেই জোরালো গুঞ্জন ছিল, বিশ্বকাপে জায়গা হবেনা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। বিশেষ করে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার পর এই গুঞ্জন আরো জোরালো হয়। আর অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে রিয়াদের দ্বন্দ্বের কথাতো ওপেন সিক্রেটই ছিলো। তবে এর মধ্যে অনেক জল গড়িয়েছে। নেতৃত্ব থেকে সরে দাড়িয়েছেন তামিম। ধারণা করা হচ্ছিল বিশ্বকাপে ফিরবেন, কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেলো সব চিত্র। সেই রিয়াদই দলে আর বাদ পড়েছেন তামিম।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিতর্কের বাতাস ফের ভাড়ি হয়ে উঠে। জানা যায় তামিম খেললে খেলবেন না সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসাতে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে লম্বা বৈঠক। সেখানে অধিনায়ক সাকিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে। এরপর গতকাল দুপুরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে তামিমকে ছাড়াই ঘোষণা হবে বিশ্বকাপ দল, হলোও তাই। আর রাতে জানা গেলো কোন বিতর্কিত কারণে নয় ইনজুরির কারণেই দল থেকে বাদ পড়েছেন সাবেক অধিনায়ক ও দেশসেরা ওপেনার।
সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তিনি বলেন, ‘তামিম ইকবালের কিন্তু অনেকদিন ধরেই ইনজুরি কনসার্ন। এটা কিন্তু আমরাও জানি, আপনারা অনেকেই জানেন। ও ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ করছিল, নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে ফিটনেস ফিরে পেয়েছে। এক ম্যাচ খেলার পর কিন্তু আবার একটা অভিযোগ এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে, সব বিবেচনা করে, ওর ইনজুরি নিয়ে যে কনসার্ন আছে এসব চিন্তা করেই ওকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছিল।’
কিন্তু গতকাল সারাদিন আলোচনা ছিল তামিম বিশ্বকাপে ৫ টি ম্যাচ খেলবেন এমন প্রস্তুাব দিয়েছেন বিসিবিকে। আর এতে ক্ষেপেছেন সাকিব ও হাথুরু। তারা কোন আনফিট ক্রিকেটারকে নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে চান না। আর যদি তামিম দলে থাকে তাহলে সাকিব খেলবেন না আর কোচও বিদায় বলে চলে যাবেন। অন্যদিকে জানা গেছে সাকিব না চাইলে তামিমও খেলতে রাজি নয়। তবে এমন বিতর্কের কথা অস্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচক।
নান্নু বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের ক্লিয়ারলি বার্তা দেই যে, এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। তামিম ৫টা ম্যাচ খেলবে বা অন্য কিছু কোনো তথ্যই ছিল না। তামিমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তবে সব তো আর জানানো যায় না। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ইনজুরি আছে যেগুলো নিয়ে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। একটা খেলোয়াড়কে দলে নিয়েছি সে গিয়েই ইনজুরিতে পড়ে গেছে তখন কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট বেকায়দায় পড়ে যায়। এটাও কিন্তু একটা রিক্স। তো এসব চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজে প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচ খেলেছে এরপর কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে ওকে বিশ্রাম দিতে হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে পুরোপুরি ফিল্ডি-ব্যাটিং করেছিল তারপর ওর কিন্তু একটু পেইন আসছিল। এসব চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
তাহলে তামিম খেলবেনা এই সিদ্ধান্ত কবে নেয়া হলো! প্রধান নির্বাচক জানিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচের আগে তামিম বিশ্বকাপে খেলবেনা এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নান্নু বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড সিরিজে ওকে নেওয়া হয়েছিল ফিটনেস দেখার জন্য। অনেকদিন ধরে কিন্তু ও ইনজুরিতে সাফার করছিল। বৃষ্টির জন্য প্রথম ম্যাচটা ভেসে গেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটি পুরোপুরি খেলেছে এরপরের ম্যাচে তৃতীয় ম্যাচে খেলতে পারেনি। তখন মেডিকেল টিমের সঙ্গে আমরা সবাই আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপডেট পেয়েছি। তারপরই তো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই জিনিস ক্লিয়ার করছি, এ কারণেই আমরা ওকে স্কোয়াডে রাখিনি।’
দেশসেরা ওপেনার তামিমের পরিবর্তে দলে এসেছে তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। এছাড়াও দলের আরেক ওপেনার লিটন দাস। এ দু’জনের কেউ ইনজুরিতে পড়লে দলের তৃতীয় ওপেনার কে! এ নিয়ে প্রধান নির্বাচকের বক্তব্যের পুরোটাই ধোঁয়াশা। তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো ওপেনার আমরা দেখেছি। অনেকগুলো ওপেনার আমরা ট্রাই করেছি, তানজীদ তামিম আমাদের হাই পারফর্মেন্স দলে অনেক দিন ধরেই ছিল। ইমার্জিং কাপে যথেষ্ট ভালো খেলেছিল সেই সুবাদে সে সুযোগ পেয়েছে। আমরা আশাবাদী ওকে যদি সামনে আমরা আরও কিছুদিন ট্রাই করি ইনশাল্লাহ ও স্ট্যাবালিশ হতে পারবে। আমরা আশা করছি বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।’
এছাড়াও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে নেয়ার ব্যাখ্যাতে প্রধান নির্বাচক পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি। তার পরিবর্তে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো একটা ক্রিকেটারকে দেখব এটাই আমাদের প্ল্যান। সুতরাং এই প্ল্যানে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ওর ফিটনেস দেখেছি। এই জন্য আমরা তাকে দলে ইনক্লুড করেছি।’
তবে দেশের কথা ভেবে প্রধান নির্বাচক যে ১৫ সদস্যের দল দিয়েছেন তাদেরকে সমর্থন দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জোরালো ভাবে। তিনি বলেন, ‘এখন যাদের ১৫ জনের স্কোয়াড দিয়েছি তারা আমাদের দেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে। আমাদের সবার দায়িত্ব দেশকে সাপোর্ট করা। আমরা চাইবো, ওদের সাপোর্ট দরকার, ভালো ক্রিকেটটা আমরা ওদের কাছে আশা করছি। ইনশাল্লাহ এই বিশ্বকাপে ওরা আমদের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে।’