খেলা
তামিম-সাকিব ইস্যুতে গভীর রাতে নাটক
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
বিশ্বকাপ খেলতে আজ দেশ ছাড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গতকাল দল ঘোষণা করা হয়। তবে তার আগে ছিল জমজমাট নাটক। বিশেষ করে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত এই নাটক চলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ঘটনার সূত্রপাত সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালের একটি মন্তব্য নিয়ে। জানা গেছে বিসিবিকে তামিম জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি মাত্র ৫ ম্যাচ খেলতে পারবেন। তাও শেষের দিকে। আর এতেই ভীষণ ক্ষেপেছেন অধিনায়ক ও প্রধান কোচ। সাকিব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন ইনজুরি আক্রান্ত কোনও ক্রিকেটার নিয়ে তিনি বিশ্বকাপে যাবেন না। তার সঙ্গে একমত হাথরুসিংহেও। এ নিয়ে চলে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে লম্বা আলোচনা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সমাধান কী! জানা গেছে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে তামিমকে না রাখলেই হবে এই সমস্যার সমাধান! আবার সাকিব স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যদি শেষ পর্যন্ত তামিমকে দলে রাখা হয় তিনি বিশ্বকাপ দল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নিবেন। শুধু তাই নয়, কোচের দায়িত্ব ছাড়ার হুমকি দেন হাথুরু। বোর্ডের কয়েকটি সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
গতকাল বিকাল ৪টায় বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ দল। গোহাটিতে পৌঁছে ২৯শে সেপ্টেম্বর খেলবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ। এরপর একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কিন্তু দেশ ছাড়ার আগের দিন বিকাল পর্যন্ত দল ঘোষণা করতে পারেনি বিসিবি। আর তার একমাত্র কারণ সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব। আর মাত্র আট দিন পর শুরু হবে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। মূলপর্বে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ৭ই অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অন্যদিকে রাতের নাটকের ছিল গতকাল সকালেও। এদিন মাাঠে আসেন সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। ধারণা করা হয়, তাকে ডাকা হয়েছিল এই সমস্যা সামাধানে করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে। তবে এ বিষয়ে তামিম ইকবাল বেশ নমনীয় বলেই জানা গেছে। বোর্ডকে দেশসেরা এই ওপেনার জানিয়েছেন যদি সাকিব না চায় তাহলে তিনি বিশ্বকাপে যাবেন না।
এই নাটকের সূত্রপাত মূলত এ বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ থেকে। ইনজুরি আক্রান্ত তামিম ইকবাল দলে ফিরলেও খেলতে পারেননি আফগানদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে। এরপর ওয়ানডেতে তিনি প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন আনফিট অবস্থায়। সেই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান ম্যাচ খেলেই ফিটনেস কেমন তা জানবেন। এতে চটে গিয়ে বিসিবি সভাপতিকে কল করে নিজের রাগ ঝারেন হাথুরুসিংহে। তার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন ডেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তার সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়। এরপর দেড় মাসের ছুটি নিয়ে দলের বাইরে থাকা তামিম ইংল্যান্ড থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরলেও এশিয়া কাপের আগে ছেড়ে দেন নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, খেলা হয়নি এশিয়া কাপেও। এরপরই জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব। তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আবারো শুরু হয় দু’জনের দ্বন্দ্ব নিয়ে আলোচনা। চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফেরার পর থেকেই শুরু হয় তাকে নিয়ে ফের আলোচনা। কিউইদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৪৪ রান করেন তামিম। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি ফিরবেন বিশ্বকাপ দলেও। কিন্তু সেখানে তার মাত্র ৫ ম্যাচ খেলার বক্তব্যের পর পালটে যায় দৃশ্যপট! যার জেরেই সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে বিসিবি সভাপতির বাসায় দীর্ঘ বৈঠক।
বিশ্বকাপের আগে দেশের ক্রিকেট নিয়ে এমন ঘটনা মানতেই পারছেন না দেশের ক্রিকেটভক্ত ও ক্রিকেট বোদ্ধারা। তারা মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট কারো কাছে জিম্মি নয়। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে বিসিবিকেই দায়ী করছেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।