বাংলারজমিন
লোমহর্ষক
হোমনায় শিক্ষার্থীকে ইস্ত্রির ছ্যাঁকা মুহতামিম পলাতক
হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
কুমিল্লার হোমনায় মাদ্রাসার মুহতামিমের বিরুদ্ধে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে হেফজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীর দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা পুড়িয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনে সহযোগিতার অপরাধে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, গ্রেপ্তার শিক্ষক মো. আতিকুল ইসলামসহ আরও তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় ২৭ পারা হেফজ করা আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে ছ্যাঁকা দিয়ে শাস্তি দেয়। এতে তার দুই নিতম্ব এবং পায়ের তলা ঝলসে যায়। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নয়াকান্দি মমতাজিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। হেফজ বিভাগের নির্যাতিত শিশু আব্দুল কাইয়ুম (১৮)-এর মা সোমবার বিকালে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা, হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন ওই মাদ্রাসা পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনায় সোমবার রাতে মা হাফেজা বেগম মূল অভিযুক্ত মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মো. সাইফুল ইসলাম হাবিব, সহযোগী শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা করেন। মূল অভিযুক্ত মুহতামিম ও আসামি তিন শিক্ষার্থী পালিয়ে গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুছ ছালাম সিকদার বলেন, দেখে মনে হয়েছে, দশ-বারো দিন আগেই পুড়েছে। পোড়া দুই নিতম্বেই গভীর ঘা হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল মঙ্গলবার তাকে ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় এবং শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সহপাঠীদের সঙ্গে দুষ্টুমি করার সময় পরনের লুঙ্গি খুলে যায় আবদুল কাইয়ুমের। এ কথাটিই তারা মুহতামিমকে জানালে তিনি রাতের বেলা গ্রেপ্তার শিক্ষক আতিকুল ইসলামসহ আরও তিন শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় শিশু আবদুল কাইয়ুমকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে পাশবিক নির্যাতন করেন। গত ১০ দিন শিশু আবদুল কাইয়ুমকে একটি বদ্ধরুমে একাকী আটকে রেখে মুহতামিম সাইফুল ইসলাম চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে কেউ এতদিন মুখ খুলেনি। সোমবার বিকালে কাইয়ুমের মা হাফেজা বেগম ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গেলে প্রথমে তাকে সাক্ষাৎ করতে দেয়নি। পরে অনেক চেষ্টার পরে তাকে দেখতে দেয়া হয়। মা হাফেজা বেগম বলেন, বিষয়টি আমার প্রবাসী স্বামী এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়ে হোমনা থানায় অভিযোগ করি। ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, তাদের কাছে জেনে মাদ্রাসা কমিটিকেও বলেছি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে বরখাস্ত করা যেতে পারে। রাতে থানায় মামলা হয়েছে। আমরা নজর রাখছি। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।