বাংলারজমিন
মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর কথা বলে যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বাণিজ্য, ফোনালাপ ফাঁস
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে গুরু চন্দ্র সরকার নামের এক ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর তদবিরের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহান। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ঢাকায় কর্মরত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের আত্মীয়। ইতিমধ্যে ওই সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহানের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এই ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে এসেছে। নারী নেত্রী সালেহা জাহান একাধারে সিংগাইর উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় মানিকগঞ্জ-২ আসনের এমপি মমতাজ বেগমের আস্থাভাজন হওয়ায় টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা করছেন ওই নারী নেত্রী।
শুধু তাই নয়, উল্টো তার স্বামী শ্রমিক লীগের উপজেলার সভাপতিসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন যুবক নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো কথা না বলতেও হুমকি ধামকি দেন যুব মহিলা লীগ নেত্রী সালেহা জাহান। তবে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সালেহা জাহান টাকা নেয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তার দাবি মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো সম্ভব না হওয়ায় টাকা ফেরতও দেয়া হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি এখনো তার কাছে আরও ৭০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সালেহা জাহানের ওপর ক্ষুব্ধ।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী গীতা সরকার জানান, ২০২১ সালে উপজেলার ধল্লা এলাকার বাসিন্দা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালেহা জাহানের প্রলোভনে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন। স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের ফাঁকে তিনি টিউশনির জমানো টাকা, বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা দেড় লাখ টাকা এবং স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সালেহা জাহানকে টাকা দেয়া হয়। গীতা সরকার তার ব্যক্তিগত স্থানীয় রূপালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে সালেহা জাহানের ব্যাংক এশিয়ার একটি হিসাব নম্বরে আরটিজিএস’র মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। আর নগদে দেন ২০ হাজার টাকা। দাবি করেছিলেন মোট পাঁচ লাখ টাকা। এক মাসের মধ্যে তার বেহালা বাদক বাবা গুরু চন্দ্র সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২ বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো তো দূরের কথা উল্টো চাপের মুখে রেখেছেন সালেহা জাহান। গীতা জানালেন, তার সত্তর বছর বয়সী বাবা এখনো বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেহালা বাজান। সালেহা জাহানের ফাঁদে পড়ে এমন কাজটি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরিবারের মান ইজ্জতের হানি হয়েছে বলেও জানান।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোমিন উদ্দিন খান মানবজমিনকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে যদি কোনো টাকা পয়সা লেনদেন হয়ে থাকে সেটা গর্হিত অপরাধ। সত্যতা পাওয়া গেলে ওই নারী যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।