ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট ও শতাধিক বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি

দিনাজপুর প্রতিনিধি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট লঘু চাপে দিনাজপুরে টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটসহ নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। চারদিকে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এমনকি নিচু এলাকার বাসাবাড়ির ভেতরেও ঢুকে পড়েছে পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দিনাজপুরের অধিকাংশ জমিতে রোপা আমনের ক্ষেতও ডুবে গেছে। এদিকে জেলার প্রধান ৩টি নদী পুনর্ভবা, আত্রাই ও ইছামতীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। টানা বর্ষণের কারনে অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল রোববারও অনেক কম যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হননি।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শহরের কাঁচাবাজারসহ নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে ড্রেনগুলো। এতে রাস্তায় উঠে গেছে ড্রেনের ময়লা। কালীতলা-সর্দারপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ড্রেন-রাস্তাঘাটগুলো মেরামত না করায় শহরের এই অবস্থা হয়েছে। বৃষ্টিতেই দিনাজপুর শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের রামনগর এলাকার অটোচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত তিনদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় পানি উঠেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। তাই আমরাও যাত্রী পাচ্ছি না। বাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। কয়েকদিন থেকে খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। বিরল উপজেলার বেতুড়া এলাকার কৃষক পায়কাম আলী বলেন, টানা ৩-৪দিন ধরে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ধানের জমি। দীর্ঘদিন ধানের চারা পানিতে ডুবে থাকলে ক্ষতি হতে পারে। আর দু’-এক সপ্তাহ পরে ধান বের হবে। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, শুক্রবার দিনাজপুরে ২০ মিলিমিটার, শনিবার ২৩ মিলিমিটার ও রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি লঘুচাপ। আগামী বুধবার পর্যন্ত এ রকম বৃষ্টিপাত চলমান থাকতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া হয়নি। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরের ৩টি নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। জেলার পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, যেখানে বর্তমান এ নদীর পানি সমতল ৩১ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার। আত্রাই নদীর বিপদসীমা ৩৯ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, এ নদীর পানি সমতল বর্তমানে ৩৭ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। ইছামতী নদীর বিপদসীমা ২৯ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার, বর্তমানে সেখানে ২৮ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে। এসব নদীর পানি যে কোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দিনাজপুরের বিরামপুরে ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক বাড়িঘরের টিন উড়ে গেছে। গতকাল দুপুরে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, টিন ও নগদ অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে বিরামপুর দিওড় এলাকার বাঁশবাড়িয়া আশ্রয়ণসহ ২৮টি, নবাবগঞ্জ বিনোদনগর ও গোলাপগঞ্জ এলাকার শতাধিক এবং হাকিমপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া এলাকার ৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুপুরে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ ঘূর্ণি ঝড়ে সেখানকার ৪টি আশ্রয়ণের ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। কোনো ঘরের সামনের বারান্দার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত তাসনীম বলেন, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে বিরামপুর উপজেলার আশ্রয়ণের ৪টিসহ বেশকিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও বেশকিছুগাছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পরিদর্শন করে শুকনো খাবার, এত বান্ডিল টিন ও নগদ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ৩ হাজার টাকা, ১ বান্ডিল টিন ও শুকনো খাবার দেয়া হবে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status