ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বহুলালোচিত কথিত রহিমা অপহরণ মামলার তদন্তে সিআইডি মাঠে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার

খুলনার বহুলালোচিত কথিত রহিমা বেগম অপহরণ মামলার তদন্তে মাঠে নেমেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট(সিআইডি)। দেশব্যাপী আলোচিত কথিত অপরহণ মামলায় আত্মগোপনে থাকা রহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ী থেকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় এক বছর আগে ২৪শে সেপ্টেম্বর উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। উদ্ধারের পর পিবিআই ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে চলতি বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। মামলার বাদী পিবিআই এর তদন্ত প্রতিবেদনের উপর না রাজি দিলে আদালত মামলাটি সিআইডিতে তদন্তের জন্য প্রেরণ করে। সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) রবিউল ইসলাম গত ১৭ই জুলাই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। রোববার খুলনা মেট্ট্রো এন্ড জেলার সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন দেশের আলোচিত এই মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে। 

মামলা এবং পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদন সুত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৭শে আগস্ট খুলনা মহানগরীর  দৌলতপুর থানাধিন মহেশ্বরপাশা বনিকপাড়া (খানাবাড়ী) নিজ বাড়ী থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। ওই রাতে রহিমার ছেলে রিয়াজ আল সাদী দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। পরদিন ২৮শে আগস্ট রহিমা বেগমের কন্যা আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় অপরহণের একটি মামলা করে। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী মহিউদ্দিন, তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম পলাশ, তার ভাই মো. জুয়েল, হেলাল শরীফ এবং কথিত রহিমা বেগমের স্বামী বেল্লাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে। অনেক নাটকিয়তার মধ্যে দিয়ে সন্দেহভাজনদেরকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। দেশব্যাপী যখন ব্যাপক আলোচনায় স্থান পায় ঘটনাটি ঠিক তখন ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত ৩০-৩২ বছরের একটি নারীর অর্ধগলিত মরহেদকে মরিয়ম মান্নান নিজের মা রহিমা বেগম বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মরিয়ম মান্নান কথিত অপহরণের বিষয়ে দেশের মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা কল্পকাহিনী সাজিয়ে মানুষের ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ঝড় তুলে দেয়। দোষারোপ করে আইন শৃংখলা বাহিনীসহ মিডিয়াকে। এরপর ঘটনা ভিন্নখাতে মোড় নেয় । 

একদিন পরই ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ী থেকে সুস্থ ও অক্ষত অস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পিবিআই। রহিমাকে উদ্ধারের পর ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি দেশের বহুল আলোচিত এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করেন। কথিত অপহরণের পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসাবে মরিয়ম মান্নানকে দেখানো হয়। প্রতিবেদনে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নান এ নাটক সাজায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। খুলনা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত ভিকটিম রহিমা বেগম নিজের পক্ষের মেয়ে আদুরী আক্তার ও মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে বিক্রিত জমি রক্ষায় নতুন অপকৌশলের অংশ হিসাবে ভিকটিম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়ে কথিত অপহরণ নাটকটি সাজায় এবং সে ঘটনায় জমিক্রেতার সাথে পুর্বশত্রুতার জের ধরে আসামী মহিউদ্দিন, মো. গোলাম কিবরিয়া, মো. রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো. নুরুল আলম ওরফে জুয়েল, মো. হেলাল শরীফদের বিরুদ্ধে অপহরণের যে মামলা দায়ের করে তা সম্পূর্ণ সাজানো। প্রতিবেদনে মামলার আসামী ৬ জনকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক আলোচ্য মামলার বাদী আদুরী আক্তার (২২), তার মা রহিমা আক্তার (৫২) এবং মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান (২৪) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের এবং দায়ের করানোর জন্য প্রকাশ্যে আদালতে বিচারার্থে কেএমপি খুলনার দৌলতপুর থানা চুড়ান্ত রিপোর্ট (মিথ্যা) নং-১ তারিখ ৮/২/২৩ ইং ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ্‌িবজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। আদালতে এ বিষয়ে শুনানিতে বাদী পক্ষ না রাজি দিলে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডির নিকট হস্থান্তর করলে মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। 

এ ব্যাপারে কথিত অপহরণের মামলায় কারাভোগকারী মো. মহিউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আইন শৃংখলা বাহিনী এবং দেশবাসীকে ধোকা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে মরিয়ম মান্নান গং। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব রটিয়ে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীকে চাপে ফেলে আমাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জেল খাটিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল দেশের আলোচিত এই মামলার বাদী আদুরী আক্তার, তার বোন মরিয়ম মান্নান ্‌এবং তার মা রহিমা বেগম। তিনি বলেন, পিবিআই’র মতো সিআইডিও তাদের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন এমনটাই আশা করছি। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের আস্থাশীল পুলিশের বিশেষ শাখা সিআইডি। আমরা আশা করি সিআইডি দ্রুত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে মিথ্যা অপহরণের নাটকবাজরা বিচারের মুখোমুখি হতে কালক্ষেপন করতে এখন বিভিন্ন ফন্দি আটছে। 
এ ব্যাপারে সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম জানায়, আলোচিত এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল ১০টায় আলোচিত এই মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খুলনা মেট্ট্রো এন্ড জেলার সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status