বাংলারজমিন
শ্রীমঙ্গলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে খামখেয়ালির অভিযোগ
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবারমৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে খামখেয়ালির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন। জানা যায়, শিশু রিহানের বয়স ৩ বছর ৭ মাস। গত ২৮শে আগস্ট সে খাট থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। ওইদিন শিশুর পিতা আশরাফুল ইসলাম লিয়াকত মৌলভীবাজার জেলা শহরের লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে তার পুত্রের আঘাতের স্থান এঙ-রে করান। এঙ-রেতে ঋৎধপঃঁৎব খঃ যঁসবৎধষ পড়হফুষব রিপোর্ট আসে। সাথে সাথে তার শিশু পুত্রকে মৌলভীবাজার লাইফ লাইন হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন কলে ওইদিনই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো. সার্জারি) ডা. আব্দুুল্লাহ আল মামুন লাইফ লাইন হাসপাতালে এসে তার শিশুপুত্রকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এরপর ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন আকস্মিক শিশুপুত্রের হাত ধরে প্রচণ্ড জোরে টান দেন। এতে বিকট শব্দ হয় এবং শিশু রিহান উচ্চস্বরে চিৎকার করে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। তখন শিশুর পিতা লিয়াকত ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বলেন, ‘আপনি এটি কি করলেন স্যার? আমার মনে হয় আমার ছেলের পুরো হাতই ভেঙে ফেলেছেন আপনি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ডা. মামুন লিয়াকতের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
এরপর ব্যথায় কাতর ও বিপর্যস্ত অবস্থায় তিনি শিশু রিহানের বাম হাত প্লাস্টার করে করে বিদায় দেন। ওইরাতে শিশু রিহান হাতের অসহ্য যন্ত্রণায় সারারাত বাসায় ঘুমাতে পারেনি। পুত্রের সারারাতের কষ্ট দেখে লিয়াকত পরদিন ২৯শে আগস্ট সকালে প্লাস্টার থাকাবস্থায় তিনি আবারো তার পুত্রের বাম হাত এঙ-রে করান। এঙ-রে রিপোর্ট আসে টহফবৎ পধংঃভৎধপঃঁৎব খঃ যঁসবৎঁং। ২৮ ও ২৯শে আগস্ট তারিখের দু’টি রিপোর্ট তিনি তার পূর্ব-পরিচিত ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ড সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলামকে পাঠান। তিনি রিপোর্ট দু’টি দেখে ওই চিকিৎসক লিয়াকতকে জানান, ‘রিহানের হাতের হাড় আগে ছিল ফাটা এবং এখন দেখা যাচ্ছে হাড় ভেঙে দুই ভাগ হয়ে গেছে’। এ অবস্থায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপারেশন না করলে ভবিষ্যতে শিশুটি পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। ওইদিন রাতেই লিয়াকত তার শিশুপুত্রকে নিয়ে ঢাকায় ধানমণ্ডিস্থ জেনারেল অ্যান্ড কিডনি হসপিটালে যান। পরদিন অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম শিশু রিহানের হাতের অপারেশন করেন। অপারেশনের পরে রোগ নির্ণয় হয় ঈষড়ংবফ উরংঢ়ষধপবফ ঝঁঢ়ৎধপযড়হফুষধৎ ঋৎধপঃঁৎব ড়ভ ষবভঃ যঁসবৎঁং। এরপর লিয়াকত দীর্ঘ সময় চিকিৎসা শেষে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে শিশুর ফ্র্যাকচার হাড় দুই ভাগ করে দেয়ার অভিযোগ এনে চিকিৎসকের খামখেয়ালিপনার বিচার দাবি করে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত আবেদন করেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (অর্থো. সার্জারি) ডা. আব্দুুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাতের হাড় আগে ছিল ফাটা, আমি টেনে হাড় ভেঙে দুই ভাগ করে দিয়েছি, এ কথা শতভাগ মিথ্যা। সেই ডাক্তার পয়সার জন্য এ কথা বলে অপারেশন করেছেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় আমি ডাক্তার এবিএম গোলাম মোস্তফাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কিন্তু এবিএম মোস্তফা সাহেব সহযোগী অধ্যাপক হয়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়ে গেছে। তদন্ত শেষে কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।