প্রথম পাতা
টঙ্গীর ত্রাস
শরিফ রুবেল, টঙ্গী থেকে ফিরে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সোমবার
মতিউর রহমান মতি। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ঘুরেন অস্ত্র নিয়ে। সকালে এক গার্মেন্টে বিকালে আরেক কারখানায়। নিজস্ব বাহিনী নিয়ে যেখানে সেখানে হামলে পড়েন। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আদায় করেন চাঁদা। কেউ চাঁদা না দিলে করেন মারধর, অত্যাচার। মতের অমিল হলেই কারাখানার মালামাল, গাড়ি ও শ্রমিকদের আটকে দেন। ফ্যাক্টরির বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। শ্রমিকদের পথরোধ, মারধর করেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন, মারধর, দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, সালিশ বাণিজ্য, পদ বাণিজ্য, অস্ত্রবাজি যেন তার নিত্যসঙ্গী। এসব করেই টঙ্গীতে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১৪ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দখল করেছেন নানাজনের বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, তেলের পাম্প ও দোকান। নামে বেনামে খুলেছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার অত্যাচারে বসতভিটে ছেড়ে অনেকে পালিয়ে গেছেন এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা বলেন, নগদ টাকা দিলে সবকিছু করেন মতি। তবে টাকা ধার নিলে তা আর ফেরত দেন না। নগদে বিশ্বাসী মতি। বাকিতে কোনো কাজ করেন না। টাকা দিলে ভাড়ায় জমি দখলের কাজেও যান। টঙ্গী এলাকার গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিকদের জিম্মি করে নিয়মিত টাকা নেন। টাকা না দিলে গার্মেন্টে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার নজির রয়েছে। টঙ্গীর স্টেশন রোড, মিলগেট, কলেজ রোড, চেরাগ আলী, এরশাদ নগর , গাজীপুরা এলাকার বিভিন্ন নারীর ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারাও তাকে সমীহ করে চলেন। এসব সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা থাকে। গত কয়েকদিন টঙ্গী ও এর আশপাশের এলাকায় ঘুরে পাওয়া গেছে এমন সব তথ্য। তার হাতে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা অনেকে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না ভয়ে। ভুক্তভোগী বেশ ক’জন জানিয়েছেন, তাকে নিয়ে কথা বলে ফের নির্যাতনের শিকার হতে চান না তারা। সম্প্রতি হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হকের কিছু বক্তব্য ও অভিযোগ আসার পর মতিউর রহমানের অপকর্মের বিষয় সামনে আসতে শুরু করেছে। আদম তমিজী যে অভিযোগ করেছেন তা মূলত এই মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মতিউর রহমান তার প্রয়াত ভাই সাবেক এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টারের পরিচয় দিয়েই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। এ ছাড়া ভাতিজা যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের পরিচয়ও সামনে আনেন সুযোগ বুঝে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টঙ্গীর হিমারদীঘি এলাকায় পপুলার ওষুধ কোম্পানির কাছে ৫ বছর আগে চুক্তিতে একটি ওয়্যারহাউজ ভাড়া দেন হক গ্রুপ অব কোম্পানি। ওই ওয়্যারহাউজে পপুলার ফার্মা ওষুধ তৈরির কাঁচামাল রাখে। ভাড়া দেয়া হকের ওয়্যারহাউজটি প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা জমির উপর। জমিটি স্থানীয় কাউন্সিলর নুরুল হক নুরুর বাড়ির পাশেই। সম্প্রতি ওই ওয়্যারহাউজটির ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয়। তবে পূনরায় চুক্তি বর্ধিত করতে চায় পপুলার। এতে রাজি হননি হক গ্রুপের এমডি আদম তমিজী হক। এতেই বিপত্তি বাধে। পপুলার উঠেপড়ে লাগে ওয়্যারহাউজটির চুক্তি বাড়াতে। এ কাজে মতিউর রহমান মতি ও কাউন্সিলর নুরুল হক নুরুর সহায়তা নেন। পরে মতি-নুরু মিলে হক গ্রুপের চেয়ারম্যান আদম তমিজী হকের দ্বিতীয় স্ত্রী সাইরা হক ও কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মোশফাকুর রহমান রোমেলকে চাপ দেন। ডেকে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখান। দু’জনকে ৩০০ কোটি টাকার প্রলোভন দেখান। পরে ওই দুজন গোপনে পপুলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে আদম তমিজী হক দেশের বাহিরে গেলে এই সুযোগে মতি, নুরুল, সাইরা ও রোমেল মিলে হক গ্রুপের ৬ বিঘার ৩টি ওয়্যারহাউজ ৭০ বছরের চুক্তিতে পপুলারকে ভাড়া দিতে ফাইলপত্র তৈরি করেন। তবে গোপন চুক্তির বিষয়টি জেনে ফেলেন আদম তমিজী হকের ব্যক্তিগত সহকারী এহসান আহমেদ। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হককে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হন। এরপরেই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী রোমেলকে আটকের নির্দেশ দেন। ১৩ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এহসান কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে সাইরা ও রোমেলকে আটক করেন। পরে রোমেলকে বেধড়ক মারধর করা হয়। খবরটি কারখানার বাহিরে ছড়িয়ে পড়লে রাত ৯টায় ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। পুলিশ আসার পরেই তাদের উদ্ধার করতে অস্ত্র নিয়ে কারখানায় আসেন মতিউর রহমান মতি ও নুরু কাউন্সিলর। কারখানায় ঢুকে শ্রমিকদের জিম্মি করে সাদা কাগজে রোমেলের স্বাক্ষর নেন। ২ দিনের মধ্যে কারখানা বন্ধ করার হুমকি দেন। এরপরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১০০০ কোটি টাকার সম্পদ দখলের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ঝাড়েন আদম তমিজী হক।
টঙ্গীতে সব ধরনের রাজনৈতিক সভা সমাবেশের জন্য হক গ্রুপের কাছ থেকে টাকা নেয়ারও অভিযোগ আছে মতিউরের বিরুদ্ধে।
টঙ্গীর হিমারদীঘি এলাকায় হক গ্রুপের বিস্কুট কারখানার সামনে একটি বেসরকারি টেলিকম কোম্পানির অফিস। তাদের গাড়ি ও কর্মকর্তাদের বাধা দেয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা এসব নিয়মিত কাজ। যদিও নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটির তরফে কেউ কথা বলতে চান না।
এ ছাড়া টঙ্গী ব্যাংকের মাঠের কোনে মেঘনা টেক্সটাইল মিল ফ্যাক্টরি আশাপাশের জায়গা দখল করে ৫০টি দোকান তুলে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন মতিউর। এখান থেকে মাসে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ভাড়া তোলা হয়। এই ভাড়া তোলার কাজ করেন জাফর। মিলের ভেতরে একটি সুবিশাল গোডাউন তুলে ভাড়া দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে কাউন্সিলর নুরু ও মতি মিলে পুরো টেক্সটাইল মিলটি দখলের পাঁয়তারা করছেন। মতির নেতৃত্বে টঙ্গীর খাঁপাড়া এলাকায় এশিয়া তেলের পাম্প দখলে নেয়া হয়েছে। পাম্পের মালিককে মারধর করে রাতের আঁধারে এই পাম্প দখল করা হয়। এ ছাড়া মতির সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী শাকিল আহমেদকে বাসায় আটকে অস্ত্রের মুখে বাড়ি, ফ্র্যাট ও সম্পত্তি লিখে নেন। পরে মামলা দিয়ে শাকিলকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।
গেল বছর টঙ্গীর হিমারদীঘি এলাকায় তিস্তা ফ্যাক্টরি দখলের চেষ্টা করেন মতিউর ও তার সহযোগীরা। মাঝেমধ্যেই কিশোর গ্যাং দলবল নিয়ে গিয়ে কারখানা ঘেরাও করতেন মতিউর। পরে ফ্যাক্টিরির ১০ বিঘা জমি ৬০ কোটি টাকা দিয়ে নামমাত্র দামে বায়না দলিল করে ওই জমি পপুলার কোম্পানির কাছে ৮০ কোটি টাকায় বিক্রি করেন মতি। ওই সম্পত্তির মালিক ছিলেন আবুল খায়ের লিটু মিয়া। তাকে ১০০ কোটি টাকার জমি ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া পপুলারের উত্তর পাশে ৩ বিঘা খালি জায়গা দলে করে নেন মতিউর ও কাউন্সিলর নুরুল হক নুরু। ওই জমির এক অংশের মালিক ছিলেন শাহিন সিকদার। দখলের সময় মতি শত শত শ্রমিক নিয়ে এসে জমির সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেন। পরে টিনের বাউন্ডারি নির্মাণ করেন। দখলের আগে ওই জমিতে প্রায় ১৫০টি দোকান ছিল। পরে জমিটি অন্য একটি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ১৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া এর পাশে কেয়া কসমেটিকস, এপেক্সের জমিও একই কায়দায় দখল করে দেন। পপুলারের উত্তর পাশের এপেক্স বিল্ডিংটি বছর খানেক আগে দলবল নিয়ে দখল করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেন।
সূত্র জানায়, পপুলার ওষুধ কোম্পানির প্রতিমাসে প্রায় ৪ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় পণ্য বের হয়। এসব পণ্যের পুরোটাই নেন মতিউর। তিনি এই পণ্য নানা জনের কাছে বিক্রি করেন। এই পণ্য বিক্রি করবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আর পণ্য দেন না- এমন অভিযোগও আছে।
অভিযোগ আছে অপ্রয়োজনীয় পণ্য দেয়ার কথা বলে স্থানীয় মনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৩০ লাখ, টিটু রহমানের কাছ থেকে নেন ৭০ লাখ, নাসরিন আক্তারের কাছ থেকে নেন ১ কোটি ৭৫ লাখ, নুরুল হক ওরফে ড্রাম নুরুর কাছ থেকে নেন ১৮ লাখ, খায়রুলের কাছ থেকে ১৮ লাখ, শাহিন সিকদারের কাছ থেকে ৪০ লাখ ও রানা আহমেদের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নিয়েও কোনো পণ্য দেননি। আবার তাদের কাছ থেকে নেয়া টাকাও ফেরত দেননি। টাকা চাওয়ায় মামলা দেয়ার ঘটনাও আছে।
টঙ্গীর স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, মিলগেট, টঙ্গী বাজার, কলেজ গেট, এরশাদ নগর, বোর্ড বাজার ও গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত মতিউরের অনুগত বাহিনী আছে। তিনি নিজেই এই বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টঙ্গী রেল স্টেশনের পূর্ব পাশে সাত রং রোডে শাহিনের বাড়ির ৩ তলার মতিউরের আড্ডা দেয়ার একটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে। এই কক্ষে বিভিন্ন নারীদের ডেকে নিয়ে যান তিনি। টঙ্গী হাউজ বিল্ডিং এলাকায়, ৪৮ নং ওয়ার্ডের দত্তপাড়া সফি কাউন্সিলরের অফিসের সামনে ৬ তলা ভবনের ৩য় তলায়, বর্ণমালা রোডে রতনের ভাওয়াল রিসোর্টেও নিয়মিত যাতায়াত করেন মতিউর। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন প্রয়োজনে মতিউরের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে অনেক নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি। এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দি আছে এই প্রতিবেদকের কাছে। এ ছাড়া টঙ্গী স্টেশন রোডে হোটেল জাভানে প্রতিরাতে জুয়ার আসর বসান মতিউর। এখানে গাজীপুর ও ঢাকা থেকে জুয়াড়িরা গিয়ে আসর বসায়। এই হোটেল থেকে মাসে নির্ধারিত টাকা নেন তিনি।
চাঁদাবাজি তার নেশা: টঙ্গী স্টেশন রোডে আবেদা হাসপাতাল থেকে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নেন মতিউরের ডান হাত জসিম। পরে জসিম এই টাকা মতিউরকে বুঝিয়ে দেন। বছরখানেক আগে চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন আবেদা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে এককালীন ৫০ লাখ টাকা দাবি করলে মালিকপক্ষ দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে মতিউরের সহযোগী জাকির তার দলবল নিয়ে গিয়ে হাসপাতালটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে মালিক হাসপাতালটি বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ ছাড়া স্টেশন রোডের আল বারাকা জেনারেল হাসপাতাল, সেবা হাসপাতাল থেকেও মাসে লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ আছে। টঙ্গী স্টেশন রোড ও আশপাশে প্রায় ৩ হাজার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করে। এসব ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। মাসে ইজিবাইক প্রতি ১ হাজার টাকা নেয়া হয়। এসব টাকা তোলেন জাফর আহমেদ। পরে জাফরের মাধ্যমে এই টাকার একটি অংশ মতিউরের কাছে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া স্টেশন রোড, চেরাগ আলী, কলেজ গেট এলাকায় সকল গাড়ি, অটোরিকশা, সিএনজি, লেগুনা, ইজিবাইক থেকে মাসে কোটি টাকা তোলা হয়। এই টাকা তোলেন নিরব। পরে এই টাকা মতিউরের ঘনিষ্ঠজনের হাতে যায়। চাঁদার চাপে টঙ্গীর মিলগেটে বিদেশি একটি ওষুধ কোম্পানি তাদের ফ্যাক্টরি বিক্রি করে চলে যায় বলে তথ্য মিলেছে।
পদ বাণিজ্যের নানা অভিযোগ: আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদ দেয়ার কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে মতিউরের বিরুদ্ধে। পদের বিপরীতে কারও কারও কাছ থেকে কোটি টাকাও নেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। পদ দিতে না পারলেও কারও টাকা ফেরত দেননি তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ দেয়ার কথা বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী মনির সরকারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন মতিউর। টাকা ফেরত চাইলে হত্যার হুমকি দেন। যুব মহিলা লীগের পদ দেয়ার কথা বলে স্থানীয় জুট ব্যবসায়ী নাসরিন আক্তারের কাছ থেকে নিয়েছেন ৭ লাখ টাকা। তবে নাসরিন পদও পাননি; টাকাও ফেরত পাননি। থানা আওয়ামী লীগের পদ দেয়ার কথা বলে গাজীপুর জেলা জজ কোর্টের স্পেশাল পিপি এডভোকেট মো. শাহজাহানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ আছে। তবে তিনি পদ পাননি। অভিযোগ রয়েছে গেল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহায়তার কথা বলে টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানার ৬ জন কাউন্সিলরের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা নেন মতিউর।
মতিউর ১৫ বছরে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। টঙ্গীতে একাধিক বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট রয়েছে তার। উত্তরা ১২ নং সেক্টরের জমজম টাউয়ারের পশ্চিম পাশে ১০ তলা বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে মতিউরের ছেলে নিয়ন থাকেন। সম্প্রতি নিয়নের জন্য ৩ কোটি টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনে দিয়েছেন মতিউর। ঢাকার পোস্তগোলা ব্রিজের ওপারে স্ত্রীর নামে ৩০ বিঘা জমি আছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে নিয়ন স্টিল মিল নামে একটি কারখানা করেছেন।
যা বললেন মতিউর রহমান মতি: নিজের বিরুদ্ধে হক গ্রুপের সম্পত্তি দখলের অভিযোগের বিষয়ে মতিউর রহমান মতি বলেন, আদম তমিজী হক একটা পাগল। তার কারখানায় একজন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলতে গিয়েছিল। আমি তাকে উদ্ধার করেছি। এটা কি আমার অপরাধ? আর আমি তার ফ্যাক্টরি দখল করতে যাবো কেন? গাজীপুরে আমাদের সুনাম আছে। ওই পরিবারের লোক না আমরা যে কারও কিছু মেরে খাবো। আমার নামে আপনি কোনো অভিযোগ পাবেন না। আপনি স্পটে এসে দেখেন কেউ বলতে পারবে না আমি কোনো দখলবাজি, চাঁদাবাজি, লুটপাটের সঙ্গে জড়িত আছি। এসব আমার পরিবারের সঙ্গে যায় না। আমি সৎভাবে রাজনীতি করি। নাসরিন নামের একজন নারীর ১ কোটি ৭৫ লাখ ও শাহিন সিকদারের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাসরিনের সঙ্গে একটা ঝামেলা ছিল; তার সঙ্গে মিট হয়ে গেছে। জমি দখলের কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সব মিথ্যা। আমি কারও জমি দখল করিনি। আর পপুলারের হয়ে আমি কোনো চুক্তিতে সহায়তা করিনি।
পাঠকের মতামত
This is real character of Most of Awami Leader. We should boycott them.
আহসানুল্লাহ মাস্টারের মান-সম্মান একমাত্র মতি নুরুল ইসলাম নুরুই নষ্ট করবে
মতির মতো বাটপার এতো সাহস পায়, শুধু ওর ভাতিজা রাসেল এমপির জন্য। আহসান উল্লাহ ও এমন হ ছিলো।
কথা সত্যি। সর্বোচ্চ সাজার ব্যাবস্থা করা হোক।
মতি'কাকার বিরুদ্ধে দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি!
উত্তরা থেকে গাজীপুরের সব ছিন্তাইকারিদের সরদার এই মতি। বাসের মোবাইল ছিনতাই এর সিংহভাগ শেয়ার মতি পায়। প্রতিটা এলাকায় আছে তার নিজস্ব বাহিনী। এর ব্যাপারে ভালো করে তদন্ত করলে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে।
মতির মত খারাপ লোক টঙ্গীতে আর একটিও নেই।
এইসব সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী ও তাঁদের আশ্রয় প্রশ্রয়কারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শহীদ আহসান উল্লাহ স্যারের নাম ভাঙ্গিয়ে তার এসব অরাজকতা চলছে। আমি একজন সৌদি প্রবাসী অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে টঙ্গী বনমালা রেল গেইট সংলগ্ন ৩ টাকা জায়গা কিনি কিন্তু তা এখনো দখলে যেতে পারিনি। তার দাবি অনুযায়ী চাঁদা পরিশোধ করতে না পারার কারনে।
এতোদিনে বুঝলাম আদম তমিজি হক কেন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্প্রিক্ত হতে উঠেপড়ে লেগেছেন। কারণ তিনি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কাটা দিয়েই কাটা তুলতে হয়। অর্থাৎ এই ধরনের দুর্বৃত্তদের সায়েস্তা করতে হলে আওয়ামী রাজনীতির বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে জড়িয়ে যাওয়া দল এবং দেশ কারো জন্যই শুভকর নয়।
তাহলে কি আদম তমিজি হকের অভিযোগই সত্য ? এম পি রাসেল সাহেবের উচিৎ, নিজ উদ্যোগে এই সব অপরাধের তদন্ত করানো। কারণ; তার প্রয়াত পিতা মরহুম আহসান উল্লাহ মাস্টার (সাবেক এম পি) একজন সৎ মানুষ ছিলেন। আজকে তার পরিবারে এমন অসৎ মানুষ থাকবে এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। আমরা সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার চাই।
সে এখনো গ্রেফতার হচ্ছে না কেন?
আমেরিকা ভিসা স্যাংশন না দিলে এবং আদম তমিজি হকের সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা না হলে কোনো পত্রিকা কি এই ধরণের নিউজ করতে সাহস পেতো ? কম বেশী প্রায় প্রত্যেক এলাকায়ই এসব গজিয়েছে । কথাবলার স্বাধীনতা পেতে হয়েছিলো 52 এর ভাষা আন্দোলন, জুলুম এবং বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতে 71 এ হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধ। সবই হয়েছে । কিন্তু সাধারণেরা কিছুই পায়নি । মন খুলে কথা বলার বা লেখার স্বাধীনতাটা পর্যন্ত হরণ করা হয়েছে ! আহা দেশ! আহা রাজনীতি !
এই সব চাদাবাজি ও সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য র্যাব গঠন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু তারা আজ মুল কাজ বাদ দিয়ে অন্যকাজে ব্যস্ত।
প্রতিটি থানায় নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এই ধরণের হাজারো মতি এই ১৫ বছরে অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশে যতগুলো ইউনিয়ন আছে প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও এই মতির মতো কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। ন্যায় ও হক্ব কথা বলার মানুষ এই সমাজে খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর হয়ে গেছে।
কিভাবে এত অপরাধ করা যায়? এই রকম অপরাধীদের তথ্য নেয়ার কি কোন সংস্থা আমাদের দেশে নাই? এই রকম সকল অপরাধীদের বের করে চরম শাস্তির দাবি করছি।
খুঁজ নিলে এমন হাজারো মতি পাওয়া যাবে- যারা নিজেদের এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করে বিগত ১৪ বৎসরে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
Standard Awami league !!!!!!
কোন দেশে বাস করছি , এটা তো রাম রাজত্ত কে ছারিয়ে গেছে।সাধারন মানুষের নিরাপত্তা কোথায়। এই সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি করছে?
Great achievement! Superior than Alexander! UGC can Launch Faculty by his name "Contemporary Hero and His Achievements"
সমগ্র বাংলাদেশের এদের মতো হাজারো কুলাঙ্গার রাজনীতিবিদ আছে। আমরা নামেই মুসলমান জাতি,আজকে বাংলাদেশের সর্ব প্রধান থেকে একেবারে নীচ পযর্ন্ত দুর্নীতিবাজদ আর অসত লোকে ভরপুর। আমরা জাহিলিয়াতের সমাজে বসবাস করছি।
The very Standard Awami league character.
এইসব সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী ও তাঁদের আশ্রয় প্রস্রয়কারীদের প্রতিহত করা সবার দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।
এতো দেখি পুরাই রাম রাজত্ব বানিয়ে ফেলেছে সে ।
Profile of a future M.P ? Mayor ? Minister ?
অনেক নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেননি / এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দি আছে এই প্রতিবেদকের কাছে / পদের বিপরীতে কারও কারও কাছ থেকে কোটি টাকাও নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে / পদ দিতে না পারলেও কারও টাকা ফেরত দেননি তিনি / এপেক্স বিল্ডিংটি বছর খানেক আগে দলবল নিয়ে দখল করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করেন / দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ১৪ বছরে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ আছে / দখল করেছেন অসংখ্য বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, জমি, তেলের পাম্প ও দোকান / দেখা যাচ্ছে অভিযোগ এড়িয়ে গেলেও টঙ্গির জঙ্গি হয়েছেন মতিয়ুর নামের এ দুর্বৃত্ত দলবাজ।
আজ জানলাম আহসানুল্লাহ মাস্টারের পরিবারের বর্ণনা। অবশ্য এটা তার প্রাপ্য। প্রতিবেদকের সুবিধার জন্য বলছি, টঙ্গী থেকে বোর্ডবাজার পর্যন্ত আপনি জানালার পাশে মোবাইলে কথা বলা বা মোবাইল চাপতে পারবেন না। আপনার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ছিনতাই কারিরা আস্তে আস্তে হেটে চলে যাবে। পুলিশ নিজেও কিছু বলবেনা। তদন্ত করে দেখুন এরা সবাই এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
মন্তব্য করুন
প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন
প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]