প্রথম পাতা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে ভিসা বিধিনিষেধের সম্পর্ক নেই
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবারপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যের সঙ্গে মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে বাংলাদেশ। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যেও কোনো প্রভাব পড়বে না। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে তৃতীয় আন্তর্জাতিক নগর ও অঞ্চল-পরিকল্পনা সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গত শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেয়া শুরু করার ঘোষণা দেয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ তথ্য জানায়।
এই ভিসা বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, বাণিজ্যের সঙ্গে এই ভিসা বিধিনিষেধের কোনো সম্পর্ক নেই। আমেরিকা আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ সুবিধা দেয়নি। সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকতে হয়। আমার জন্য যে এটা সবচেয়ে বড় বাজার সেটা আমাদের ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট কোম্পানি, শ্রমিক যারা আছেন তাদের ক্রেডিট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আমাকে স্পেশাল জিএসপি ও শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। ইউকে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তো দেয় নাই। আমি প্রতিযোগিতা করে সেখানে ঢুকেছি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা বিধিনিষেধ সরকার কীভাবে দেখছে-এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে। তারা বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার বলেছে, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বাধা দিতে চাই না।’ যারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা স্যাংশন হবে। সরকার পক্ষ থেকে আমরা সবসময় বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তার বক্তব্যেও এটা বলেছেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তারা শুধু বাধা না, সহিংসতার কথাও বলেছে। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ-ভায়োলেন্স। ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের (বিরোধী দল) নামও আছে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। গত বুধবার চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ইইউ’র পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মোটেও না। ‘পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা, সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা সংবিধান মেনে নির্বাচন করবো। আমাদের নির্বাচন কমিশন শতভাগ স্বাধীন। তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও সেটাই চাই।’
ইইউ’র সঙ্গে একমত পোষণ করে সালমান এফ রহমান বলেন, তারা স্বচ্ছ নির্বাচন চান। আমরাও বলেছি, স্বচ্ছ নির্বাচন করবো। এখন তাদের পর্যবেক্ষক আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এলো কি এলো না সেটা তাদের ব্যাপার। এতে আমাদের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।
নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ছিল। শেখ হাসিনা সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ থেকে সরিয়ে স্বাধীন একটি নির্বাচন কমিশনের রূপ দিয়েছেন। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স করেছি।’
এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘থার্ড ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন আরবান অ্যান্ড রিজওনাল প্ল্যানিং’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি খাত অনেক এগিয়ে গেছে। ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান হচ্ছে। তবে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে কৃষি জমি দিনদিন কমে যাচ্ছে। অতীতে বাংলাদেশের শিল্পায়ন অপরিকল্পিতভাবে হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পায়নকে পরিকল্পনার অধীন আনার উদ্যোগ নেন। এর পথ ধরে প্রথমে তৈরি হয় ইপিজেড এবং এখন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ইকোনমিক জোন। এর মাধ্যমে দেশের মূল্যবান কৃষি জমি রক্ষার পাশাপাশি শিল্প খাতের সঙ্গে সব খাতের সমন্বয় সম্ভব হচ্ছে।’
বর্তমানে উদ্যোক্তারা নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমি ভরাট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। এখনো দেশের উপজেলা পর্যায়ে কীভাবে নগরায়ন হবে, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা হয়নি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এতে দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, যা মোকাবিলায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ নামে অভিহিত রাজধানীর নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ রয়েছে। তারা সবাই নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে চায়। তারপরও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রস্তাব আমলে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, দেশে সৌর বিদ্যুতের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সৌর বিদ্যুতের জন্য অনেক জমি প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে জমি দুষ্প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করার কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জার্মান দূতাবাসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফ্লোরিয়ান হলেন এবং ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান সেটেলমেন্টস প্রোগ্রামের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মায়মুনাহ মোহাম্মদ শরীফ। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. আকতার মাহমুদ।