শেষের পাতা
সিলেটের আদালতে মামলা, থানায় জিডি
ঢাকায় জমিতে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব সোহেল
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবাররাজধানী বনানীর টিএন্ডটি’র পাশে প্রায় ২০ বিঘা জমি। শতকোটি টাকা মূল্যের ওই ভূমি। ভূমির মালিক দাবিদার নুরুল ইসলাম ও তার স্বজন রফিকুল আলম ওই ভূমিতে বিনিয়োগের কথা বলে সিলেটের ব্যবসায়ী সোহেদ আহমদ চৌধুরী সোহেলের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বার বার ভূমি বিক্রির প্রস্তুতি নেয়া হলেও কৌশলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এখন টাকা চাওয়ায় হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় সোহেল চৌধুরী বাদী হয়ে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা করেছেন। তবে মামলায় কেবল চেকের মালিক রফিকুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। হুমকির
ঘটনায় শাহপরান (রহ.) থানায় জিডিও করেছেন। সেখানে অভিযুক্ত করা হয়েছে ভূমির মালিক নুরুল ইসলামকে। ব্যবসায়ীক সূত্র ধরে সিলেটের আখালিয়া বড়বাড়ির বাসিন্দা ও চাল ব্যবসায়ী সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকার নয়াটোলা চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও ফেনীর ফুলগাজী থানার বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে রফিকুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম ঢাকার বনানীর গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে এল নং-সি,এস ২৭ নং এসএ ১০৭ নং. আর এস ৩৫ নং ঢাকা সিটি জরিপে ১৮ নং কড়াইল স্থিত, খতিয়ান নং-সিএস ১৫ নং-সে এ-০৮ নং আর এস ৩৯ নং ঢাকা সিপি জরিপে ৬৫ নং খতিয়ানে লিখিত, দাগ নং সিএসে ও এস ৫ নং ও ১০ নং আর,এস ও ৫ নং ঢাকা সিটি জরিপে ৫০১ নং ও ৫০২ নং ও ৫০৩ নং দাগে প্রায় ২০ বিঘা ভূমি তারা বিক্রি করবে বলে জানায়।
ওই ভূমির খাজনা সহ নামজারি করতে না পারার কারণে তারা বিক্রি করছেন না। খাজনা ও নামজারি খরচে সোহেলকে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সোহেল আহমদ জমির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিনিয়োগ করার আশ্বাস দেন। মামলার এজাহারে সোহেল চৌধুরী উল্লেখ করেন-২০২২ সালের ১লা ডিসেম্বর আসামি রফিকুল ইসলাম, ভূমির মালিক নুরুল ইসলাম সহ তিন জন সিলেটে তার বাড়িতে আসেন। ওই দিন রাত যাপনের পর পরদিন তারা স্ট্যাম্পে জমি বিনিয়োগ ও বিক্রির ব্যাপারে দুটি চুক্তি করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে নগদ সহ ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা প্রদান করেন সোহেল চৌধুরী। এর বিপরীতে আসামি রফিকুল আলম লভ্যাংশ সহ ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন। সোহেল চৌধুরীর সঙ্গে চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল ভূমির প্রকৃত মূল্য প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। ওই ভূমি বিক্রির পর বিনিয়োগকারী সোহেলকে ৫০ কোটি টাকা এবং ভূমির মালিক ১২০ কোটি টাকা পাবেন। চুক্তি অনুযায়ী সোহেল ও মামলার সাক্ষী আশরাফুল ইসলাম, আলী আহমদ ও আব্দুর রাজ্জাক ভূমি বিক্রি করতে পারবেন। পরে ভূমি বিক্রি করার জন্য একটি ‘বিক্রয় প্রস্তাবনা পত্র’ প্রেরণ করেছেন নুরুল ইসলাম।
এদিকে; চুক্তিপত্রে উল্লেখ ছিল ভূমিতে বিনিয়োগের অংশ হিসেবে সোহেল চৌধুরী চলতি বছরের ১লা আগস্ট জমা রাখা চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারবেন। এই অবস্থায় গত ৮ই আগস্ট ওই অ্যাকাউন্টে চেক দাখিল করেন সোহেল চৌধুরী। কিন্তু পর্যাপ্ত ব্যালেন্স না থাকার কারণে রফিকুল আলমের অ্যাকাউন্ট থেকে চেকটি ডিজঅনার হয়। এরপর ১০ই আগস্ট রফিকুল আলমকে লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে নোটিশের যে জবাব পাঠানো হয়; সেখানে বর্ণনায় রফিকুল আলম সবকিছু অস্বীকার করেন। এদিকে লিগ্যাল নোটিশের পর রফিকুল ইসলাম ও নুরুল ইসলাম মোবাইল ফোনের একাধিক নাম্বার থেকে সোহেল চৌধুরীকে হুমকি প্রদান করেন। এতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় তিনি গত ১৭ই আগস্ট শাহপরান থানায় মামলা করেন। সর্বশেষ তিনি গত মঙ্গলবার সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনার মামলা করেছেন।
মামলার আইনজীবী কাজী কাবুল হাসান জানিয়েছেন- আদালত দায়ের করা মামলা গ্রহণ করেছেন এবং আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। ডিসেম্বরে পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সোহেল চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রায় ৫ কোটি টাকা বিভিন্ন সময় তারা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। আমার ব্যবসা বাণিজ্য ছিল, এখন কিছুই নেই। আরও কয়েকজনের কাছ থেকে ধার করে এনে আমি টাকা দিয়েছি। এখন ওরা আমার ফোন ধরছে না। তিনি বলেন- ওই ভূমি দেখিয়ে বিনিয়োগের কথা বলে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয়। ওরা চিহ্নিত প্রতারক চক্র। প্রতারণা করাই ওদের কাজ। এভাবে বহু মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে- সোহেল আহমদ চৌধুরীকে চিনলেও তার কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নুরুল ইসলাম। মামলা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। চেক ডিজঅনার মামলার আসামি রফিকুল আলম জানিয়েছেন, চেকের ঘটনায় তিনি হাতিরঝিল থানাতে সোহেলের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। সোহেল চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আদালতে যে মামলা করেছে সেটির আইনি লড়াই তিনি চালিয়ে যাবেন বলে জানান।