শেষের পাতা
প্রযুক্তি আর প্রকৃতির শহরে হৃদয় জেতার সম্মেলন
সামন হোসেন, হাংজু (চীন) থেকে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারসবুজের সমারোহে ঘেরা হাংজু শহরটি শুধুই ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। শহরের বাসিন্দাদের অনেকে হাংজু শহরটাকে বাগানের নগরীও বলে থাকেন। এটি চীনের প্রযুক্তি শিল্পের অনানুষ্ঠানিক বাড়িও বটে, বিশেষ করে জ্যাক মা-এর আলিবাবার জন্মস্থান এখানে। এখানেই আলিবাবার সবচেয়ে বড় শো-রুমটি। চায়ের জন্য শহরটি এতটাই বিখ্যাত যে, ইতিহাস সংক্ষরণ করে আলাদা চায়ের জাদুঘর করা হয়েছে এখানে। চীনের রেশম চাষের আঁতুড়ঘরও বলা হয় হাংজু শহরকে। নানা নামে বিখ্যাত এই হাংজু এশিয়ান গেমসের কারণে এখন ক্রীড়ার নগরী। এশিয়ান গেমসের ১৯তম আসরকে সামনে রেখে পুরো হাংজু এখন উৎসবের নগরী। হৃদয় দিয়ে হৃদয় জেতার স্লোগানকে সামনে রেখে এশিয়ার ৪৫টি দেশের ৪৫ ডিসিপ্লিনে ১২ হাজার অ্যাথলেট অংশ নিবেন এবারের আসরে। ৫৪টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের এশিয়ান গেমস।
এবারই প্রথম এশিয়ান গেমসের আয়োজক নয় চীন। ১৯৯০ সালে প্রথমবার বেইজিংয়ে এবং ২০১০ সালে গুয়াংজুতে হয়েছিল এশিয়ার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় এই আসর। সৌন্দর্য এবং পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করতে আয়োজক হওয়ার পর হাংজু শহরকে বেছে নেয় চীন। এশিয়ান গেমসের জন্য হাংজু শহরে খুব একটা অবকাঠামো করতে হয়নি চীন সরকারকে। পর্যটনের নগরীখ্যাত শহরটি আগে থেকেই উন্নত। গেমসের ভেন্যু তালিকায় থাকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যেসবের সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেগুলোকে পুনর্নির্মাণ করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। হাংজুর ৫ হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে থাকছে নানা আয়োজন। তবে তাদের সেই পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারে বৈরী আবহাওয়া। গত ৩ দিন ধরে গোমরা করে আছে হাংজুর আকাশ। মাঝে মাঝে বৃষ্টিও পড়ছে। বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়াতে পারেনি ভারত নারী ক্রিকেট দলের কোয়ার্টার ফাইনাল। গতকাল হংকংয়ের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে পারেনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলও। গেমসের নিময় অনুযায়ী র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে ভারতের মতো সেমিতে উঠেছে বাংলাদেশ।
আজ তেমন কিছু ঘটলে বিকল্প তৈরি রেখেছে আয়োজকরা। বৈরী আবহাওয়ার খপ্পরে পড়লে পাশের ইনডোরে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যেখানে এক সঙ্গে ৫০ হাজার দর্শক উপভোগ করতে পারবে অনুষ্ঠানটি। ৪৫ দেশের প্রায় ১২ হাজার প্রতিযোগী ৬১ ডিসিপ্লিনের ৪৮১ পদকের জন্য লড়াই করবে। ১৭ ডিসিপ্লিনে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদের সংখ্যা ১৮০ জন। যার অর্ধেকের বেশি ফুটবল, ক্রিকেট, হকি আর কাবাডির মতো দলগত ইভেন্টে। মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করবেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু নিয়াজ মোরশেদ। সাবিনার হাত ধরে এরইমধ্যে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের। গতকাল তারা মুখোমুখি হয় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জাপানের। এই গেমসের মধ্যদিয়ে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক আঙ্গিনায় ফেরার প্রহর গুণছেন আরচার রোমান সানা। আর রেকর্ড চতুর্থবারের মতো এশিয়ান গেমস খেলার অপেক্ষায় আছেন হকি তারকা রাসেল মাহমুদ জিমি। যা বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ। টোকিও অলিম্পিকের পর স্বেচ্ছায় নির্বাসন কাটিয়ে প্রথম কোনো গেমসে অংশ নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। বরাবরের মতো এবারো সবেচেয়ে বেশি অ্যাথলেট চীনের। ১৯৮২ সাল থেকে প্রতিটি এশিয়ান গেমসে পদক তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন। এবারো স্বাগতিক দেশটি চাইছে শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে। এবারো চীনের মূল শক্তি সাঁতার। তাদের আছে কিন হাইয়াং।
২৪ বছর বয়সী কিন পুরুষদের ৩টি ইভেন্টেই স্বর্ণ জেতেন গত আসরে, ২০০ মিটারে একটি নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে। অ্যাথলেটিক্সে ভারতের অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়া জ্যাভলিন থ্রোতে ফেভারিট। এবারের আসরের মূল স্লোগান হচ্ছে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। পদকগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘শান শুই’ এবং একটি প্রাচীন সেতুর মতো হাংজুর ল্যান্ডস্কেপগুলোকে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনটি স্পোর্টস-প্লেয়িং রোবট, কংকং (হলুদ রং), লিয়ানলিয়ান (সবুজ) এবং চেনচেন (নীল) হলো গেমের মাসকট, যার প্রত্যেকটি শহরের একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে যুক্ত। কংকং লিয়াংঝু শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের প্রতিনিধিত্ব করে, লিয়ানলিয়ান শহরের পশ্চিম হ্রদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং চেনচেন গ্র্যান্ড ক্যানেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য। কোভিডের কারণে এক বছর পিছিয়ে শুরু হওয়া এই আসরের সমাপ্তি কেমন ঘটে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন
শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]