বাংলারজমিন
বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে অসহায় রূপজানের দুঃখের শেষ নেই
হাসান পিন্টু, লালমোহন (ভোলা) থেকে
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার
পঞ্চাশ বছর বয়সী রূপজান বেগম। ভোলার লালমোহন উপজেলার লালমোহন ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ফুলবাগিচা এলাকার বাসিন্দা তিনি। তার স্বামী হাদিস পরপারে পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৪ বছর আগে। রূপজানের বৃদ্ধ মা-বাবা থাকেন তার সঙ্গেই। তাদের নিয়ে একটি টিনশেড ঘরে থাকতেন তিনি।
তবে গত ৮ই মার্চ রূপজানের সেই বসতঘরে ক্ষোভের বশে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন জামাতা। মুহূর্তের মধ্যেই বসতঘরসহ ভেতরের চাল-ডাল, হাঁড়ি-পাতিলসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে আশ্রয় নেন প্রতিবেশীর ঘরে। পরে জামাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এ ছাড়া দুই বোন ও এলাকাবাসীর সহযোগিতা নিয়ে পুরনো ভিটায় আবার তোলেন টিনের ছাপড়া ঘর। ঘর তুললেও দুঃখ কমেনি স্বামীহারা অসহায় রূপজানের। এখন ঘরে নেই চৌকি বা খাট। তাই মাটিতেই বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে ঘুমাতে হয় তাকে। পরনের কাপড়-চোপড় কিছুই নেই তার। তাই বাধ্য হয়ে মানুষের পুরনো কাপড়-চোপড় খুঁজে খুঁজে পরছেন তিনি। দিন যত যাচ্ছে রূপজানের অসহায়ত্ব তত বাড়ছে। এক সময় এলজিইডি’র এলসিএস প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের কাজ করতেন তিনি। তবে এখন সে কাজও নেই।
নিজের অসহায়ত্বের জন্য এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সহযোগিতা তোলেন রূপজান। তিনি বলেন, আমার সবকিছু ছিল। স্বামীর রেখে যাওয়া ঘর। রাস্তায় কাজ করে জমানো টাকা ও চাল। স্বর্ণালংকার ও পরনের কাপড়-চোপড়। জামাই ঘরে আগুন দেয়ার পর আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত কয়েক মাস কাজের সন্ধানে অনেক জায়গায় ঘুরেছি। তবে কাজ পাইনি। তাই এখন বাধ্য হয়েই মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করেছি। মানুষের এই সহযোগিতার টাকায় আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আর নিজে কোনো মতে চলছি। রূপজান বেগম বলেন, আমার মা-বাবার নামে বয়স্ক ভাতা এবং আমাদের জন্য সরকারি বরাদ্দের চালের ব্যবস্থা করলে আর এমন কষ্ট করতে হতো না। এ সহযোগিতা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনামিকা নজরুল বলেন, দেশের অসহায় মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ওই নারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে।