ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

আওয়ামী লীগ নেতা জেমস্‌-এর নেতৃত্বে ২০০ কিডনি বিক্রি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারmzamin

দালালের ফাঁদে পা দিয়ে কিডনি বিক্রি করছে গ্রামের অভাবী মানুষেরা। একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা, দাদন ব্যবসায়ীর চাপ ও নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা কিডনি বিক্রি করেন। এই সুযোগে বাজারে মাছ ও মাংসের মতো দরদাম করে প্রকাশ্যে কিডনি বেচাকেনার হাট বসিয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম হোসেন জেমস্‌। মোনায়েম হোসেন জেমসের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ২০০ মানুষের কিডনি বিক্রি করা হয়েছে। 

তরুণদের প্রতিটি কিডনি ৬-৭ লাখ ও মধ্যবয়সীদের ২-৪ লাখ টাকার মধ্যে কিডনি বেচাকেনা হয়। এসব কিডনি প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন ক্লিনিকে গিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। আর এর সবকিছু প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গ্রামের বেকার, দিনমজুর, ভ্যানচালক, হতদরিদ্র সহজ সরল মানুষগুলোকে টার্গেট করে দালাল চক্র ও দাদন ব্যবসায়ীরা। অভাবের কারণে কিছু টাকা চড়া সুদে ধার দেন দালাল চক্রটি। তাদের ধার ও সুদের টাকা সময় মতো না দিতে পারলে শুরু হয় শরীর থেকে কিডনি নেয়ার অভিনব সুকৌশল। এই কিডনি বিক্রেতারা সামান্য নগদ অর্থ হাতে পেলেও সিংহভাগ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা জেমস্‌ বাহিনী নামে একটি দালাল চক্র। এই চক্রের মূলহোতা তাড়াশ উপজেলার হোমনগর গ্রামের আবুল ওয়াহাবের ছেলে ও উপজেলা  আওয়ামী লীগের সদস্য মোনায়েম হোসেন জেমসের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজির একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া একাধিকবার প্রতিবেশী দেশেও যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই চক্রের অন্য সদস্যরা ও বিক্রেতারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম হোসেন জেমসের নেতৃত্বে একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট তরুণদের টার্গেট করে কিডনি সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাটোরের গুরুদাসপুরে এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ’ মানুষের কিডনি বিক্রি হয়েছে। কিডনি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দরিদ্র ও অসহায় মানুষরা তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। সিন্ডিকেটের দেখানো আর্থিক প্রলোভনে এসব মানুষরা কিডনি বিক্রি করেছেন। কিডনি চক্রের সদস্য গুরুদাসপুরের আব্বাসের মোড় এলাকার রশিদ জানান, তাড়াশ উপজেলার মোনায়েম হোসেন জেমসের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে কিডনি বেচাকেনার সিন্ডিকেট চলছে। তিনি ঢাকায় থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিডনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের টার্গেট করে কিডনি কেনার লোক ঠিক করা হয়। এরপর দরিদ্র মানুষদের টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি কেনা হয়। বাজারে সব থেকে তরুণদের কিডনির চাহিদা বেশি। চাচকৈড় বাজারের মধ্যমপাড়া এলাকার খৈবার ও কয়েকজন কিডনি বিক্রেতা জানান, তারা জেমস, রশিদ ও আব্বাসের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। এজন্য তাদের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। অভাবের কারণেই তারা এ কিডনি বিক্রি করেছেন। কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে ফিরে আসা একই এলাকার জিল্লুর রহমান বলেন, আব্বাস ও জেমসের প্রলোভনে কিডনি বিক্রিতে রাজি হয়েছিলাম। পরে ভুল বুঝতে পেরে ফিরেও এসেছি।

এই চক্রের অন্য সদস্য আব্বাস ওরফে কিডনি আব্বাস জানান, তিনি নিজের কিডনি বিক্রি করেছেন। এজন্য অনেকেই তার কাছে কিডনি বিক্রির বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন। কেউ আসলে পরামর্শ দেন। তবে চক্রের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে তিনি জানান। গতকাল দুপুরে অভিযুক্ত মনোয়ার হোসেন জেমস জানান, আমাকে ঘিরে কিডনি বিক্রি সংক্রান্ত যে সকল অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়টি আমি জানি না। এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িতও নই। তিনি আরও বলেন, যারা কিডনি বিক্রি করেছেন তাদের আমি চিনি না, কোনো দিন  দেখিনি। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই এ ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার জানান, এ বিষয়ে এখনো কোনো ব্যক্তি আমাদের কাছে অভিযোগ দেননি। তবে ঘটনাটি সত্য নাকি মিথ্যা বিষয়টি উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে পারবে না। প্রমাণ হলেই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কিডনি বেচাকেনার বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তথ্য পেলে আপনাদের জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, কিডনি পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, কয়েকদিন আগে বিষয়টি অবগত হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সঙ্গে যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status