ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

সাধারণের নাগালে নেই ইলিশ

তামান্না মোমিন খান
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
mzamin

জাতীয় মাছ ইলিশ আর এখন সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। ভর  মৌসুমেও ইলিশের কাছে ঘেঁষা যাচ্ছে না বাজারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে এমনিতে ক্রেতাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে কম আয়ের মানুষ আর ইলিশ কিনতে পারছেন না। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম বাজারভেদে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরচেয়ে ওজন বেশি হলে দাম বাড়ে দ্বিগুণ হারে। 

মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জ্যোতি হাজরা শিক্ষকতা করেন।  জ্যোতি বলেন, ইলিশ কেনার শখ থাকলেও সাধ্য নেই সবার।  যেভাবে ইলিশের দাম বাড়ছে এটা যেন সোনার হরিণ। আমাদের পূজার সময় তো ইলিশের দাম আরও বেড়ে যায়।  দেখা যায় যে, বাংলাদেশের বেশির ভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজার সময় দাম চড়ার কারণে ইলিশ কিনতে পারে না।

বিজ্ঞাপন
অথচ পূজার সময় টনের পর টন ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আমাদের ইলিশ আমরা খেতে পারি না। কিন্তু অন্য দেশের  মানুষ আমাদের চেয়ে অনেক কম দামে ইলিশ কেনে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী রিপন বলেন, এবছর বাজারে গেলেও ইলিশের ধারের কাছেও যাই না। দাম শুনলে মেজাজ ধরে রাখতে পারি না। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই মাছ উৎপাদনে কোনো খরচ হয় না। আহরণ করতে যে খরচ সেটা ছাড়া। তাহলে এই মাছের দাম এত হয় কীভাবে? কেন ইলিশ মাছের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোনো মনিটরিং সেল গঠন করা হয় না। যেখানে দেশের মানুষের পাতে ইলিশ উঠে না সেখানে কেন ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে কঠোর মনিটরিং করা হলে আজ দেশের মানুষ সবাই ইলিশ খেতে পারতো। 
শেষ কবে ইলিশ মাছ কিনেছেন ভুলে গেছেন সিরাজুল ইসলাম। পাঙ্গাস, তেলাপিয়া আর ফার্মের মুরগি ছাড়া আর কোনো মাছ বা মাংস কেনা হয় না তার। ৩ সন্তানের জনক সিরাজুল বলেন, চাকরি করে মাসে বেতন পাই ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ঘরভাড়া ১১ হাজার টাকা বাকি টাকায় খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাদের লেখাপড়া সহ সংসারে সব খরচ চালাতে হয়। বাচ্চারা ইলিশ মাছের নাম জানে কিন্তু খাইতে কেমন সেটা জানে না। এজন্য তারা  ইলিশ খাওয়ার জন্য কোনো দিন বায়না ধরে না। 

রিকশাচালক আবদুল মজিদের কাছে ইলিশ মাছ শেষ কবে কিনেছেন জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,  ইলিশ মাছ কেনা তো বহুদূর, হাত দিয়া ধইরাও তো দেখি নাই কতো বছর। আমাগো মতো কম আয়ের মানুষের ইলিশ কেনা আর সোনার গহনা কেনা সমান। মজিদ বলেন- পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছই কিনতে পারি না আর ইলিশ! এই মাছ বড়লোকদের মাছ। বাসাবাড়িতে কাজ করেন রুপালী। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। বছরেও একটা ইলিশ মাছ কিনতে পারেন না। রুপালী বলেন, ইলিশ কি আর আমাদের খাবার। আমাদের দেশের মাছ যদি আমরাই খাইতে না পারি তাহলে ইলিশ মাছ কেমনে জাতীয় মাছ হয়। 

একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন সবুজ। এবছর একটি ইলিশও কিনতে পারেননি তিনি। সবুজ বলেন, প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে বাজারে যাই। ইলিশ দেখি, দাম করি তারপর দাম শুনে মাথা নিচু করে চলে আসি। আসলে বাজারে যে এত ইলিশ এগুলো কাদের জন্য। দেশের একটি শ্রেণির মানুষ ছাড়া কেউ ইলিশ কিনতে পারে না। তাহলে কেন আমরা ইলিশকে জাতীয় মাছ বলবো? যেটার স্বাদ আমরা নিতে পারবো না। এখন বড়  ইলিশ দেখলেই ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস আসে।

ওদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে  দেড় কেজি ওজনের ইলিশও মিলছে। দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি। ৮০০ বা ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status