প্রথম পাতা
সাধারণের নাগালে নেই ইলিশ
তামান্না মোমিন খান
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার
জাতীয় মাছ ইলিশ আর এখন সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। ভর মৌসুমেও ইলিশের কাছে ঘেঁষা যাচ্ছে না বাজারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে এমনিতে ক্রেতাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে ইলিশের উচ্চমূল্যের কারণে কম আয়ের মানুষ আর ইলিশ কিনতে পারছেন না। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম বাজারভেদে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরচেয়ে ওজন বেশি হলে দাম বাড়ে দ্বিগুণ হারে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জ্যোতি হাজরা শিক্ষকতা করেন। জ্যোতি বলেন, ইলিশ কেনার শখ থাকলেও সাধ্য নেই সবার। যেভাবে ইলিশের দাম বাড়ছে এটা যেন সোনার হরিণ। আমাদের পূজার সময় তো ইলিশের দাম আরও বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, বাংলাদেশের বেশির ভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজার সময় দাম চড়ার কারণে ইলিশ কিনতে পারে না।
শেষ কবে ইলিশ মাছ কিনেছেন ভুলে গেছেন সিরাজুল ইসলাম। পাঙ্গাস, তেলাপিয়া আর ফার্মের মুরগি ছাড়া আর কোনো মাছ বা মাংস কেনা হয় না তার। ৩ সন্তানের জনক সিরাজুল বলেন, চাকরি করে মাসে বেতন পাই ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে ঘরভাড়া ১১ হাজার টাকা বাকি টাকায় খাওয়া-দাওয়া, বাচ্চাদের লেখাপড়া সহ সংসারে সব খরচ চালাতে হয়। বাচ্চারা ইলিশ মাছের নাম জানে কিন্তু খাইতে কেমন সেটা জানে না। এজন্য তারা ইলিশ খাওয়ার জন্য কোনো দিন বায়না ধরে না।
রিকশাচালক আবদুল মজিদের কাছে ইলিশ মাছ শেষ কবে কিনেছেন জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইলিশ মাছ কেনা তো বহুদূর, হাত দিয়া ধইরাও তো দেখি নাই কতো বছর। আমাগো মতো কম আয়ের মানুষের ইলিশ কেনা আর সোনার গহনা কেনা সমান। মজিদ বলেন- পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছই কিনতে পারি না আর ইলিশ! এই মাছ বড়লোকদের মাছ। বাসাবাড়িতে কাজ করেন রুপালী। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। বছরেও একটা ইলিশ মাছ কিনতে পারেন না। রুপালী বলেন, ইলিশ কি আর আমাদের খাবার। আমাদের দেশের মাছ যদি আমরাই খাইতে না পারি তাহলে ইলিশ মাছ কেমনে জাতীয় মাছ হয়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন সবুজ। এবছর একটি ইলিশও কিনতে পারেননি তিনি। সবুজ বলেন, প্রতি সপ্তাহে ছুটির দিনে বাজারে যাই। ইলিশ দেখি, দাম করি তারপর দাম শুনে মাথা নিচু করে চলে আসি। আসলে বাজারে যে এত ইলিশ এগুলো কাদের জন্য। দেশের একটি শ্রেণির মানুষ ছাড়া কেউ ইলিশ কিনতে পারে না। তাহলে কেন আমরা ইলিশকে জাতীয় মাছ বলবো? যেটার স্বাদ আমরা নিতে পারবো না। এখন বড় ইলিশ দেখলেই ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস আসে।
ওদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে দেড় কেজি ওজনের ইলিশও মিলছে। দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি। ৮০০ বা ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকায়। এ ছাড়া ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
পাঠকের মতামত
Grrina লাগে এই দুর্নীতি গ্রস্থ দেশের দুর্নীতি বাজ মানুষদের
ভারত থেকে ডিম আনা গেলে মিয়ানমায় থেকে ইলিশ আনতে পারি না কেন ?
আমি কোনদিন ইলিশ মাছ রপ্তানির পক্ষে না।
শুধু ইলিশ কেন, অন্য যে কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় সামর্থের মধ্যে নেই ।
গরুর খাবারের দাম বেড়েছে বলে গোস্তের দাম বাড়ানো হয়, ইলিশ মাছকে কি খাবার খাওয়াতে হয় যে এত দাম? দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ দেশ কি আর করা...
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য ভালো জিনিস নিজেরা না খেয়ে অতিথিদের খাওয়াই, খেতে বসলে মাছের ভালো অংশটা তাদের পাতে তুলে দিই, পাশের বাড়ির লোকজন যদি শক্তি সামর্থ্যে বড়ো হলে তো কথাই নাই পুকুরের বড়ো মাছটা তাদের দিয়ে দিই নিজের বাল বাচ্চাদের না খাওয়ায়ে তাদেরকে খাওয়াই, ইলিশ মাছ আমাদের দাদারাই খাবেন, এতে আর দুঃখ করার কাম কি !
ইলিশ এখন শুধু রপ্তানির জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। এটা তো খাবে বাবুরা - আমাদের মতো আর্থিক টানাপোড়েনে জর্জরিত কাবু’রা নয়।
একটা নির্দিষ্ট পরিমান ইলিশ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে নিশ্চিত করে ইলিশ রপ্তানী করার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।