শেষের পাতা
বিমানে উঠা জুনায়েদ যা বললো
ফাহিমা আক্তার সুমি
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, রবিবার
বিনা বাধায় বিমানবন্দরের বহু স্তরের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে বিমানে উঠেপড়া জুনায়েদ মোল্লা এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়েও চলছে সমালোচনা। অনেকের আগ্রহ কে এই শিশু? কীভাবে সে বিমান পর্যন্ত যেতে পারলো। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই শিশুর মা আঠারো মাস বয়সে তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর বাবা অরেকটি বিয়ে করেন। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ইমরান মোল্লার সন্তান সে। সৎ মায়ের কাছেই বড় হয়। স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। তবে প্রায়ই ঘর ছাড়তো জুনায়েদ। কাউকে কিছু না বলে বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঘুরতে যেতো।
এরপর বাসে উঠে চলে যায় শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে। যাত্রীদের সঙ্গে সোজা চলে যায় ভিতরে। সোমবার রাত তিনটার দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে পাসপোর্ট, ভিসা, বোর্ডিং পাস ছাড়াই শিশুটি উঠে পড়েছিল কুয়েতগামী এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে। প্রায় এক ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর ধরা পড়ে। পরে এ ঘটনা নিয়ে বিমানবন্দরজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
জুনায়েদ ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা করে মানবজমিনকে বলে, বিমানে উঠার পরে ভালো লেগেছে। এর আগে আমি কখনো বিমানে উঠিনি। এখন পাইলট হওয়ার খুব ইচ্ছা করছে। উঠার আগে ভয় করেছিল। বিমানে উড়তে পারলে আরও ভালো লাগতো। বিমানবন্দরের ভিতরে গিয়ে দেখি অনেক যাত্রী যাচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমারও বিমানে উঠতে মন চায়। এসব লোকজনের সঙ্গে আমিও ভিতরে যাই। বিমানবন্দরে উপরের তলায় উঠতে গেলে বাধা দেয়। তারপর অন্যপাশ ঘুরে সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয়তলায় যাই। এরপর প্রবেশের সময় একজন চেক করে আমাকে। তারপর চেক শেষে ভিতরে ঢুকি। ভিতরে গিয়ে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। পরে শুনতে পাই বিমানে উঠার জন্য ডাকছে। তখন আমিও বিমানে গিয়ে বসি। পরে একজন এসে বলে- এটা আমার সিট তুমি বসেছো কেন? তারপর আমি উঠে যাই।
এরপর বিমানের একজন এসে আমাকে বলে তুমি একা নাকি অন্য কেউ আছে? তখন আমি বলি লোক আছে আমার সঙ্গে। তখন একজনের নামও বলি আমি। তারপর সেই নাম ধরে মাইকে ডাকে। কেউ সাড়া না দিলে বিমান থেকে বাইরে নিয়ে আসে। পরে পাইলটের সঙ্গে থাকা একজনকে ডাকে। তখন সে এসে বলে ওর সঙ্গে যে লোক ছিল তাকে খুঁজে পাইতেছে না। কিন্তু আমার সঙ্গে তো কেউ ছিল না। পরে অফিসাররা এসে আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়। বিমানে এক ঘণ্টার মতো বসে ছিলাম। সবাইকে দেখে সখ করে আমিও ভিতরে যাই। ভাবছি আমিও বিমানে উঠবো, সখ করে গেছি তারপর সত্যিই বিমানে উঠতে পারছি। উড়লে আরও ভালো লাগতো। জুনায়েদ বলে, বাড়ি ভালো লাগতো না। পড়াশোনা করতে কষ্ট লাগতো। ঘুরতে ভালো লাগতো। কোথায় এয়ারপোর্ট এইটা দেখার জন্য নামি। প্রথমে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশেই আমার খালার বাসায় যাই। সেখান থেকে মুকসুদপুর যাই। এরপর ঢাকার বাসে উঠি। বাস থেকে সায়েদাবাদ নেমে আরেকটি বাসে উঠি। তারপর শপিংমলে ঘোরাঘুরি করি।
জুনায়েদের চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, জুনায়েদ যেটা করেছে সেটি ও ইচ্ছাকৃতভাবে করেনি। ও নিজেও হয়তো বুঝতে পারেনি যে, সে কি করছে। সে আগে থেকেই পড়াশোনার কথা বললে এভাবে বাড়ি থেকে পালাতো। বাড়ির পাশে একটি আলিয়া মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়েছে। গত এক-দুই মাস আগে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়। এর আগে কয়েকটি কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। পড়াশোনা করতে গেলে ওর নাকি মাথাব্যথা করতো। তবে জুনায়েদের ব্রেন অনেক ভালো পড়লে সহজে ধরে রাখতে পারতো। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জুনায়েদ সবার বড়। জুনায়েদের বাবা স্নাতক পাস। তিনি চাকরির জন্য চেষ্টা করে না পেয়ে এখন কৃষিকাজ ও সবজি বিক্রি করেন। অন্যের জমিতে চাষবাস করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে তাদের। জুনায়েদের আরেক ভাই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
সাতদিন আগে জুনায়েদ বিকাল পাঁচটার দিকে বেরিয়েছিল। আগের মতো আমাদের কাউকে কিছু না বলে চলে গিয়েছিল। এরপর আত্মীয়রা ফোন দিলে সেখানে গিয়ে দেখি নেই। এইরকম করতে করতে সাতদিনের মাথায় ঢাকা চলে যায়। ঢাকা থেকে বিমানবন্দর থানায় যখন সোপর্দ করা হয় তারপরে আমরা জানি এই ঘটনা সম্পর্কে।
পাঠকের মতামত
Mr Junayed needs a care from an educated individual who could nurture his desires and could guide him accordingly. There are lots of buds like Mr Junayed is destroying at the early life due to lack of proper guidelines. Genius comes from poverty, not from riches!?
ফিউচার ডাবল এজেন্ট / ট্রিপল এজেন্ট
এতটুকু ছেলের এত সাহস বিশ্বাস হচ্ছে না
ছোট ছেলে, না বুঝে করেছে। দায়ী হলো যারা নিরাপত্তায় আছে। এই ধরনের শিশুদের বিমানের প্রতি একটা আকর্ষণ থাকে।