প্রথম পাতা
সপরিবারে মার্কিন দূতাবাসে ডিএজি এমরান, অতঃপর...
স্টাফ রিপোর্টার
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবারদিনে চাকরি থেকে অব্যাহতি। বিকালে সপরিবারে মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় প্রার্থনা। রাতে বাসায় ফেরা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নেয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মেদ ভূঁইয়াকে নিয়ে গতকাল ঘটেছে এসব নাটকীয় ঘটনা। ড. ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে শোনা যাচ্ছিলো কয়েকদিন ধরেই। গতকাল দিনের প্রথমভাগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিশ্চিত করেন তা। বিকালে খবর আসে এমরান আহমেদ সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকার বারিধারাস্থ মার্কিন দূতাবাসে। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার মানবজমিনকে বলেন, এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে আপডেট জানানোর মতো কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। তবে গণমাধ্যমে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় এমরান বলেন, আমি পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য মার্কিন দূতাবাসে বসে আছি। বাইরে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। গতকাল আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে গত ৪-৫ দিন ধরে অনবরত হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এই সরকার ভালোবাসার প্রতিদান দেয় জেল দিয়ে। আমার আমেরিকার ভিসা নেই। স্রেফ ৩টা ব্যাগে সামান্য কাপড় নিয়ে আমার ৩ মেয়েসহ কোনোমতে বাসা থেকে বের হতে পেরেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। পরে সেখান থেকে লালমাটিয়ার বাসায় যান তিনি।
পরিবার নিয়ে এমরান নিরাপত্তা চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যাওয়ার বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এই জন্যই তো নাটক সাজিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চায়, বিষয়টি আমি দেখছি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এমরানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, উনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দ্য বাংলাদেশ ল’ অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২ এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নিয়োগাদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
গতকাল সকালে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গণমাধ্যমে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জানান- আমার আগে জানা ছিল না যে, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা মিডিয়ায় কথা বললে আগে অ্যাটর্নি অফিসের অনুমতি নিতে হবে। তবে আজ আমি এ বিষয়টি মাত্র জানতে পেরেছি। তাই আমি যেহেতু বিষয়টি এখন অবগত। তাই এই বিষয়ে এখন আর কোনো মন্তব্য করবো না। ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন। আর ড. ইউনূসকে নিয়ে কথা বলার পরে কোনো চাপ ছিল কিনা জবাবে এমরান বলেন, না এ বিষয়ে আমার এবং আমার পরিবারের ওপর সরকার থেকে কোনো চাপ ছিল না।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন। এ বিষয়ে গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান। তিনি বলেন, আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি। শতাধিক নোবেলজয়ীদের ওই খোলা চিঠির বিপরীতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে, এমন দাবি করে এমরান আহম্মদ বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে কর্মরত সবাইকে এতে স্বাক্ষর করার জন্য নোটিশ করা হয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করবো না। এর পরদিন ৫ই সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি (এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া) অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ডিএজি (ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল)। তিনি যদি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন, তাহলে তাকে হয় পদত্যাগ করে কথা বলা উচিত, অথবা অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি নিয়ে কথা বলা উচিত। তিনি সেটি করেননি। তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল এম এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে দিয়েছেন, তিনি হয়তো কাউকে খুশি করার জন্য বলেছেন।