ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

লিভার ক্যান্সার: লক্ষণ চিকিৎসা ও করণীয়

ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবারmzamin

ক্যান্সার মানেই আতঙ্ক আর উদ্বেগের নাম। আর লিভার ক্যান্সার হলে তো মহাবিপদ। এ কথা সত্যি, শরীরের বেশির ভাগ ক্যান্সারের মতোই লিভার ক্যান্সার নিরাময় এখনও আমাদের সাধ্যের অতীত। পাশাপাশি বলা যায়, লিভার ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্প্রতি আমাদের বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নতি বা অগ্রগতিও কম নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আজ বাংলাদেশেই লিভার ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব। লিভার ক্যান্সার কেন হয়? সারা পৃথিবীতেই লিভার ক্যান্সার, ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ লোক এ রোগে আক্রান্ত হন। পুরুষের ক্ষেত্রে মোট ক্যান্সারের ৭.৫ ভাগ লিভার ক্যান্সার, আর নারীদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি ৩.২ ভাগ। আশঙ্কাজনক সত্যটি এই, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় লিভার ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব পৃথিবীর অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সারের মূল কারণ হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস আর অ্যালকোহল। আমাদের দেশে অবশ্য হেপাটাইটিস-বি মূল খলনায়ক, কারণ এদেশে প্রায় ৮০ লাখ লোক এ ভাইরাসের বাহক। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৫ থেকে ১০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

লিভার ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো: যেকোনো বয়সের লোকই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষের তুলনায় নারীদের ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার আগে লিভারে সিরোসিস দেখা দেয়, তবে এর ব্যতিক্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। লিভার ক্যান্সারের রোগীরা প্রায়ই পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে অথবা বুকের ঠিক নিচে মাঝ বরাবর ব্যথা অনুভব করেন, যার তীব্রতা রোগী ভেদে বিভিন্ন রকম। সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, পেট ফাঁপা, ওজন কমে যাওয়া আর হালকা জ্বরজ্বর ভাব এ রোগের অন্যতম লক্ষণ। লিভার ক্যান্সার রোগীদের প্রায়ই জন্ডিস থাকে না, আর থাকলেও তা খুবই অল্প। রোগীদের খাওয়ায় অরুচি, অতিরিক্ত গ্যাস কিংবা কষা পায়খানার কমপ্লেন থাকতে পারে। পেটে পানি থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। যেভাবে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় বা শনাক্ত করা হয়- লিভার ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ উপায় একটি নির্ভরযোগ্য আল্ট্রাসনোগ্রাম। কখনও কখনও সিটি স্ক্যানেরও দরকার পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য আরও আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন- এমআরআই ও সিটি এনজিওগ্রামের দরকার পড়তে পারে। রক্তের এএফপি পরীক্ষাটি লিভার ক্যান্সারের একটি মোটামুটি নির্ভরযোগ্য টিউমার মার্কার। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোনো ব্যক্তিরই উচিত প্রতি ৬ মাসে একবার এএফপি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা। তবে লিভার ক্যান্সারের ডায়াগনসিস কনফার্ম করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমনকি সিটি গাইডেড এফএনএসি জরুরি। যেকোনো ক্যান্সারই শুরুতে ধরা পড়লে এবং সুচিকিৎসা পেলে রোগীরা ভালো থাকে। লিভারে আকারে ছোট টিউমার থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে এ টিউমার লিভার থেকে কেটে বাদ দেওয়া যায়। পাশাপাশি আছে বিনা অপারেশনে টিউমার অ্যাবলেশন বা টিউমারকে পুড়িয়ে দেয়া। আশার কথা হলো- বর্তমানে বাংলাদেশে লিভার ক্যান্সার চিকিৎসা সাফল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। দেশের লিভার কান্সারে আক্রান্ত রোগীরা সচেতন কম থাকার কারণে মাত্র ৫ শতাংশ রোগী সময়মতো ডাক্তারের কাছে আসেন। আর বাকিরা এমন পর্যায়ে আমাদের কাছে আসেন, তখন চিকিৎসকরাও সক্‌ড হয়ে পড়েন।

লিভার কান্সার প্রতিকারে করণীয়: লিভার কান্সার একটি ভাইরাসজড়িত রোগ। যেসব ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত, সেসব ভাইরাস প্রতিরোধ করা গেলে লিভার ক্যান্সার কমে আসবে। যেমন- বি-ভাইরাস, সি- ভাইরাস। বি-ভাইরাস ছোটবেলায় টিকা দিলে মুক্তি মেলে। সি- ভাইরাস রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই যখন মানুষ রক্তদান করবেন বা ইনজেকশন নেবেন, নতুন সিরিঞ্জ নিয়ে রক্ত নিতে হবে এবং দিতে হবে। একটু সচেতনভাবে যদি জীবন চলে তাহলে অবশ্যই লিভার ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল,
মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। হটলাইন-১০৬০৬।

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status