শরীর ও মন
হাঁটু বা পা বেঁকে গেলে...
ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
৩১ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবারনারী, পুরুষ শিশু ও বয়স্ক বা বৃদ্ধ বয়সীদের হাঁটু বা পা বেঁকে যেতে পারে। সমস্যাটি একটি ফিজিওলজি সমস্যা। বাঁকা (বো) একটি টেকনিক্যাল শব্দ যা একটি শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির অংশ। তবে জানা প্রয়োজন কোনটা স্বাভাবিক (ফিজিওলোজিক) বৃদ্ধির অংশ এবং কোনটা রোগের (প্যাথলোজিক) কারণে হয়েছে। হাঁটু ভেতরের দিকে বাঁকা হলে একে জেনু ভেরাস বলে এবং বাহিরের দিকে বাঁকা হলে, একে জেনু ভালগাস বলে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য বাঁকা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু রোগের কারণে বাঁকা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে বাঁকা বৃদ্ধি পাবে এবং অন্যান্য অসুবিধা দেখা দেবে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে লেগ ও হাঁটুর বাঁকা অংশ ৩ থেকে ৭ বৎসর বয়সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু বাঁকা অংশ এ সময় বৃদ্ধি পেতে থাকলে কারণ অনুসন্ধান করে ও বাঁকা অংশের চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।
মনে রাখতে হবে রোগটির শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। জন্মগত কারণে জোড়ার লিগামেন্ট ও পেশী না থাকলে বা থাকলেও ঢিলা বা সংকুচিত, হাড়ের অস্বাভাবিক আকৃতি ও অবস্থান হলে হাঁটু ও লেগ বেঁকে যেতে পারে। ভিটামিন ডি (রিকেট) ও ক্যালসিয়াম অভাব, বাউন্ট রোগ হলে এবং আঘাতে হাড়ের বৃদ্ধির তারতম্যের কারণে হাঁটুও লেগ বেঁকে যায়। বয়স্কদের ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম অভাব (ওসটিওপোরোসিস ও ওসটিওমালাসিয়া), হাড় ভাঙা ও জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট, পেজেটস ডিজিস এবং অর্থ্রাইটিস (রিউমাটয়েড অসটিওআর্থ্রাইটিস) হয়ে হাঁটু বেঁকে যায়। হাঁটু বেঁকে গেলে ব্যথা হয় এবং জোড়ার স্বাভাবিক গঠন, স্থিতিশীলতা ও ভারসম্য নষ্ট হয়ে জোড়ায় শক্তি কমে যায়। ফলে হাঁটতে, বসা থেকে উঠতে, উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটতে এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে অসুবিধা হয়।
যেসব বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে: দু’হাঁটু বাঁকা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিক বৃদ্ধির অংশ। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দু’হাঁটুর বাঁকা বেড়ে যাচ্ছে। রোগের কারণে হচ্ছে এবং এর চিকিৎসা প্রয়োজন। এক হাঁটু বাঁকা এবং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যা রোগের কারণে হচ্ছে এবং বাঁকা হাঁটু ও রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রতিরোধ: প্রতিরোধের প্রধান লক্ষ্য হলো জোড়ার স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য, স্বাভাবিক গঠন ও শক্তিমত্তা ঠিক রাখা এবং ভবিষ্যতে অসটিওআর্থ্রাইটিসের ভয়াবহ জটিলতা হতে জোড়াকে রক্ষা করা। পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিখাদ্য, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম সেবন করতে হবে। শিশু যাতে ডায়রিয়া ও মেলনিউট্রিশনে না ভোগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জন্মগত ত্রুটি থাকলে এর চিকিৎসা করতে হবে এবং ফিজিক্যাল স্ট্রেসিং ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ভয়াবহ ক্ষতি থেকে জোড়াকে রক্ষা করতে হবে। প্রথম অবস্থায় স্প্লিন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও লেগের স্বাভাবিক অবস্থায় ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে।
চিকিৎসা: বাঁকা হাঁটু ও লেগের চিকিৎসার শুরুতেই এর কারণ অনুসন্ধান করে, রোগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। যথোপযুক্ত চিকিৎসার অভাব হলে বা যথাসময়ে না হলে হাঁটুর অসুবিধার কারণে গোড়ালি, কটি ও মেরুদণ্ডের জোড়ায় জটিলতা দেখা দিবে। প্রথম অবস্থায় স্প্লিন্টিং, ব্রেচিং, হাঁটু সাপোর্ট এবং থেরাপিউটিক সু ব্যবহার করলে হাঁটু ও লেগের স্বাভাবিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে ফিরে আসবে। আঠার বছর বয়সের পূর্বে হাড়ের বৃদ্ধি স্থানের ক্লিপিং করে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধি স্থানের নিচে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় কেটে হাঁটু ও লেগ সোজা করতে হবে। আঘাত ও আর্থ্রাইটিসের কারণে জোড়ার ভয়াবহ ক্ষতি হলে জোড়া পুনঃস্থাপন করতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা। চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., শ্যামলী, মিরপুর রোড, ঢাকা-১২০৭। হটলাইন-১০৬৩৩, ০১৭৪৬৬০০৫৮২।