শরীর ও মন
অতিরিক্ত ঘাম কি কোনো বড় রোগের লক্ষণ
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল হাই
১৯ আগস্ট ২০২৩, শনিবার
গরমে ঘর থেকে বেরুলে, একটু আধটু হাঁটাহাঁটি করলে শরীরে ঘাম আসতেই পারে। এটা পুরোই স্বাভাবিক। কারও ঘাম একটু কম হয়, কারও একটু বেশি হয়। এটা ব্যক্তিবিশেষে তারতম্য হতে পারে। জেনেটিক কারণে অনেকের শরীরে ঘাম কমবেশি হয়। আবার কিছু কিছু রোগ যেমন থাইরয়েডের অসুখ, নিউরোলজিক্যাল কিছু ডিজিজ ইত্যাদি কারণে শরীরের ঘাম অতিরিক্ত হতে পারে। কিন্তু কেউ হঠাৎ করে দর দর করে ঘামছেনÑএটা অনেক সময় গুরুতর রোগের লক্ষণের পর্যায়ে পড়ে। অনেকেই গরমের ঘাম ভেবে বিষয়টি চেপে যান। এতে করেই আকস্মিক দুঃসংবাদ শুনতে হয় আজকাল। মনে রাখতে হবে হঠাৎ করে বেশি ঘাম হওয়াটা একটা মারাত্মক লক্ষণ।
গরম ছাড়াও অন্য যেসব কারণে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে-
হার্টের সমস্যা: ঘামের সঙ্গে বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে সেটি হার্টের রোগের লক্ষণ।
হার্ট অ্যাটাক হলেও ঘামজনিত সমস্যা হয়। রোগী তখন কার্ডিওজেনিক শকে চলে যায় অর্থাৎ সিস্টোলিক প্রেসার খুব কমে গিয়ে ৯০’র মধ্যে নেমে যায়। তখন হার্ট শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পরিমিত রক্ত পাম্প করে শরীরকে প্রদান করতে পারে না, ফলে রোগীর দেহে প্রচণ্ডমাত্রায় ঘাম হয় এবং ত্বক শীতল হতে থাকে।
ব্লাড সুগার ও থাইরয়েডের ওঠানামা: ডায়াবেটিস রোগীদের অতর্কিতভাবে ব্লাডসুগার কমে গেলে শরীরে অস্বস্তির সঙ্গে প্রচুর ঘামের সৃষ্টি হয়। থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতার কারণে বেশি ঘাম হতে পারে। হাইপার থাইরয়েডের জন্য মানুষের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়, ফলে রোগীর খিদে বেড়ে যায় কিন্তু তারপরও সে রোগা হতে শুরু করে, ওজন কমতে থাকে এবং প্রচণ্ড ঘামের প্রবণতা বেড়ে যায়।
সংক্রমণ ছড়ালে: সেপসিস অর্থাৎ আচমকা রক্তে কোনো প্রকার ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে শরীর উত্তপ্ত হয়। এ সময় ব্লাড প্রেসারও নেমে যেতে পারে। তখন ঘামের পরিমাণ বাড়তে থাকে।।
ব্রেন স্ট্রোক: আচমকা মাথার যন্ত্রণা, শরীরে প্যারালাইসিসের মতো অনুভূতি হলে প্রচুর ঘাম হয়। সেই পরিস্থিতি স্ট্রোকের কারণেও হতে পারে।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা: মাথায় টিউমার, খিঁচুনির মতো যেকোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যার অগ্রিম পর্যায়ে অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ অবশ্যম্ভাবী। শুধু সঠিক সময়ে তা বুঝতে পারলে গুরুতর শারীরিক ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
টেনশন ও ভয়: শরীরে কোনো স্ট্রেস, টেনশন বা ভয়ের কারণ হলে অ্যান্ড্রিনালিন ও নন-অ্যান্ড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে গিয়ে অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায় এবং ঘামের সৃষ্টি করে। যদিও এই ধরনের ঘাম খুব বিপজ্জনক হয় না।
কী করবেন?
মাত্রাতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ সাধারণত প্রয়োগ করা হয় না, কিন্তু ঘাম হওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড বুকে ধড়ফড়ানি হলে উপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এমন ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে কিছু মৌলিক কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। স্ট্রেস বা উদ্বেগের কারণে রোগীর সর্বদা বেশি ঘাম হলে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং’র দ্বারা সমস্যাটি প্রতিরোধ করা যায়।
হাইপার থাইরয়েড থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো থাইরয়েডকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে অতিরিক্ত ঘামের অস্বস্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ঘাম বেশি হলে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বাই-কার্বোনেট বেরিয়ে যায়, ফলে শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে দুর্বল ও অস্থির অনুভূত হয়। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, ফলের রস, সরবত খেয়ে শরীরকে হাইড্রেট রাখা খুবই জরুরি।
এটা মনে রাখতে হবে যে, হঠাৎ অতিরিক্ত ঘাম হলে, কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে গুরুতর বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট।
ফোন: ০১৭১২-২৯১৮৮৭
মন্তব্য করুন
শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন
শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত
৯৫ ভাগ কিশোরীকে টিকা দেয়ার টার্গেট/ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা পেল ১১ শিক্ষার্থী

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]