প্রবাস
স্পেনে খালেদা রুমির সংগ্রামী জীবন এবং নারীদের অপার সম্ভাবনা
বকুল খান
(১ বছর আগে) ১ আগস্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, ৪:১৫ অপরাহ্ন
স্পেনে নারীদের উদ্যোক্তা এবং স্বাবলম্বী হওয়ার অপার সুযোগ এবং সম্ভাবনা রয়েছে। ইউরোপের মধ্যে নারীদের নানা রকম সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে স্পেন শীর্ষে অবস্থান করছে। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্টে নারীদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযোগী দেশ হিসেবেও স্পেন প্রথম। এসব নিয়ে কথা বলেছেন খালেদা রুমি । তিনি একজন সমাজ কর্মী । পাশাপাশি নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। নারীদের মোটিভেশন করেন। স্পেনের ইমিগ্রান্ট লাইফ নিয়ে তার নানা অভিজ্ঞতা ও সম্ভাবনা নিয়ে জানিয়েছেন বিস্তারিত।
খালেদা রুমি একজন সংগ্রামী নারীর নাম। বেশিদিন হয়নি স্পেন আসার । মাত্র ছয় বছর ব্যবধানে পেরুতে হয়েছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত । তবুও তিনি থেমে যাননি। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে এরকম কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিলেন না। তারপরও খুব সুন্দরভাবে সামলিয়ে নিয়েছেন ।
তিনি একজন কর্মজীবী নারী । কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবরক্ষক পদে । দেশে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স করেছেন । একসময় বিমান সংস্থায় কাজ করেছেন । এভিয়েশন বিষয়ে সিংগাপুরে উচ্চতর কোর্স করেন। ভাষাগত দুর্বলতা এবং পরিবার থেকে নিরুৎসাহীই মূলত আমাদের দেশের নারীদের প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন রুমি । তিনি জানান ,প্রত্যেকটি শহরের প্রত্যেকটি এলাকাগুলোতে বিনামূল্যে ভাষার জন্য কোর্স চালু আছে। মেয়েদের কাজের ক্ষেত্র রয়েছে নানা সুযোগ । যে দেশে যাবেন অন্তত সেই দেশের ভাষার উপর দক্ষতা থাকা জরুরি ।
কাজের সময় নিতে পারবে বাড়তি সুযোগ সুবিধা,যদি তিনি গর্ভবতী হন । বাচ্চা লালনপালনের জন্য রয়েছে উভয়ের ছুটি। যে দেশেই আমরা থাকি না কেন ওই দেশের মূল ধারার সাথে মিশতে হবে।তবেই আপনার সংস্কৃতি আপনি ভিন্ন দেশে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন বলে মনে করেন খালেদা রুমি। তিনি বলেন, সমস্যাটা হলো আমরা নিজেরা একটি গন্ডি তৈরি করে রেখেছি ,যার বাইরে আমরা যেতে পারি না । যে কারণে অনেক নাগরিক অধিকার এবং সংষ্কৃতি আদান প্রদান করতে পারছি না । জামালপুরের মেয়ে রুমি ,ছোট থেকে বড় হয়েছেন পারিবারিক শিক্ষা এবং কঠোর নিয়ম শাসনের মধ্য দিয়ে । বাবা প্রয়াত আমির খসরু একজন ব্যাংকার। যার উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রেরণা যুগিয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে । যাকে তিনি জীবনের একজন আইকন ভাবেন । দুইভাই, একবোন, মা থাকেন দেশে ।
রুমি মনে করেন,বিদেশে যারা বের হবেন নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন,তাকে যেকোনো বিষয়ে অবশ্যই দক্ষ হয়ে আসা উচিত । তবেই তিনি সহজেই কাজ করার সুযোগ পাবেন । নইলে তাকে ওড জব করতে হবে।
চাকুরী বা উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশাসনিকভাবে যে প্রাধান্য দেয়া হয় যা পুরুষ থেকে বেশি ,সবচেয়ে বড় বিষয় নিরাপত্তা সেটা স্পেন অনেক এগিয়ে । রাত বিরাত কাজ শেষে নিঃসংকোচে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা আছে আর তা শতভাগ বলে আমি মনে করি। স্পেন এমন একটা দেশ যদি আপনি এগুতে চান নারী হিসেবে আপনাকে সব ধরনের হেল্প করবে। ইংলিশ জানলেও চলবে তাও যদি না জানেন দোভাষী নিয়েও আপনাকে নানা ধরনের সহযোগিতা করবে । এক কথায় দৃঢ় মন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং আপনাকে শুরু করতে হবে কাজের ব্যাপারে জজ বলেন ,রাস্তার ঝাড়ুদার সবাই সমান। কাউকেই তারা ছোট করে দেখে না । আমার অভিজ্ঞতা থেকেই এই বিশ্বাস হয়েছে।
স্পেনে আসার আগে রুমি ঢাকা বিমানবন্দরে মালিন্দো এয়ারওয়েজের স্টেশন ম্যানেজার হিসেবে দুই বছর কাজ করেছেন । আর এর আগে ঢাকা বিমানবন্দরে প্রায় পাঁচ বছর এমিরেটসের গ্রাউন্ড অফিসার হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সে কাজ করেছেন তিনি।
কাজের রয়েছে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা। কোনো কাজ জীবনে বিফলে যায় না । যদি আপনি সঠিকভাবে করে থাকেন । জীবনের কোন না কোন সময় সে অভিজ্ঞতা দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ।
স্পেনে আমার সংগ্রাম এর সিঁড়ি একাই ভাঙতে হয়েছে। একাই পথ হেঁটেছি। তবু মনোবল হারাইনি । যেকারণে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি । আপনারা নারী হিসেবে নিজেকে অসহায় ,অবলা ভাবার সুযোগ নেই । সুযোগ রয়েছে অফুরন্ত, আগ্রহ এবং পরিশ্রম দিয়েই দাঁড়িয়ে যাবেন ।