ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, ৮ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

জন্ডিস হলে সঠিক চিকিৎসা নিন

ডা. মামুন আল-মাহতাব স্বপ্নিল
১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার

যকৃতের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ব্যাধি লক্ষণ হলো  জন্ডিস। রক্তে অতিরিক্ত বিলুরুবিন জমে জন্ডিস রোগের সৃষ্টি হয়।  যদি  রক্তে বিলুরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.২-০.৮ মিলিগ্রাম। এ মাত্রা ২ মিলিগ্রামের উপরে উঠলে চোখের সাদা অংশ হলুদ রং হয়। প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় জিহ্বার নিচের শৌল্কিক ঝিল্লিও হলুদ। আবার শরীরের চামড়াও হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
প্রকার ভেদ
জন্ডিস রোগকে কারণ অনুসারে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
(১)  পিত্তকোষে পাথর হয়ে পিত্তনালীর পথ বন্ধ হয়ে গেলে, পিত্তনালীর গাত্রে ক্ষত সৃষ্ট হলে, পিত্তনালীর বাইরে চাপ সৃষ্টি হয়ে যেমন: টিউমার হয়ে পিত্তনালীর পথ সরু হয়ে রক্ত চলাচল বাধা সৃষ্টি হলে জন্ডিস রোগ হয়।
(২) ম্যালেরিয়া, ব্ল্যাকওয়াটার ফিভার প্রভৃতি রোগে লহিত রক্ত কণিকা নষ্ট হলে পিত্ত বেশি সৃষ্টি হয়ে অর্থাৎ বিলুরুবিন রূপে সাধিত হয় এবং জন্ডিসে আক্রান্ত হয়।
(৩) অনেক জীবাণু বা ভাইরাস দ্বারা কিংবা কতোগুলো ওষুধে লিভারের উপর (রি-অ্যাকশন) বা বিষক্রিয়ার ফলে পিত্তনালীর পথ বন্ধ হয়ে গেলে জন্ডিস রোগের উৎপত্তি হয়। 
মনে রাখবেন জন্ডিস একটা লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। যেমন জ্বর কোনো রোগ নয়। তেমনি জন্ডিস কোনো রোগ নয়। লিভার বা যকৃতে পিত্তনালীর পথ যেকোনো ভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তা জন্ডিসের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

বিজ্ঞাপন
প্রথমত জন্ডিস রোগের কোনো ওষুধ নাই।
অনেক সময় দেখা যায়, লোহিত কণিকার ভাঙনজনিত জন্ডিস (সাধারণ সমস্যার) ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে এই রোগ এমনিতেই সেরে যায়। কারণ- দেহে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত বিলুরুবিন তৈরি হচ্ছে। রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন। তাই অনেক ক্ষেত্রে ১২০ দিন বা ৩ মাস পর দেখা যায় পূর্বের লোহিত কণিকার ভাঙনজনিত সমস্যা নতুন রক্ত কণিকা তৈরি হওয়ার কারণে জন্ডিস ভাব দূর হয়ে এমনিতেই সেরে যায়।
পিত্ত পাথরির কারণে পেট ব্যথায় করণীয়:
রোগ চলাকালীন অবস্থায় তরল, হালকা ও পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। ডাবের পানি, ঘোল, ছানার পানি, ফলের রস, খুব উপকারী পথ্য। চর্বিযুক্ত খাদ্য, ঘি, মাখন ইত্যাদি না খাওয়াই উত্তম। মনে রাখবেন- যদি আপনা থেকেই এই রোগ ভালো হয়, তবে বুঝতে হবে- পাথর  বের হয়ে গেছে। আর তা না হলে চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ, গাছের শিকড় ইত্যাদি দিয়ে অনেককে ধোঁকা দিয়ে নিজেদের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। আসলে এদের কোনো কৃতিত্ব আছে বলে কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। মজার কথা হলো- যারা জন্ডিসের ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, গাছের শিকড় ইত্যাদি দিচ্ছেন, তারা অনেকেই জানেনই না জন্ডিস আসলে কি?
আবার অন্য কোনো  কারণে জন্ডিস দেখা দিলে, অনেক ক্ষেত্রে তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। উপরোক্ত ৩টি কারণের মধ্যে যে কারণে এই রোগের সৃষ্টি হয়েছে তা বের করে, ঐ কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
জন্ডিস হলে প্রাথমিক করণীয়:
পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। লিভার বা যকৃতের বিশ্রামের জন্য শরবত, প্রচুর আখের রস খাওয়াতে হবে। রুচি থাকলে ভাত, চর্বিবিহীন মাছ, তরকারি, পাউরুটি, সর ছাড়া দুধ ইত্যাদি দেয়া যাবে। অরুচি বা জ্বর না থাকলে ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি খাওয়া যাবে, অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। জন্ডিসের সঙ্গে জ্বর থাকলে, বমি বমি ভাব বা বমি থাকলে, চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।

রোগ ভালো না হওয়া পর্যন্ত নিম্নের ওষুধ   কোনো ক্রমেই সেবন করা যাবে নাÑ সিডেটিভ (ঘুমের ওষুধ), এন্টিএমিটিক (বমির ওষুধ), প্যারাসিটামল, কো-ট্রেমাক্সাজল, টিবি বিরোধী ওষুধ।  চিকিৎসক দেখানোর পর  কারও উপদেশে চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিত কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। এতে সমস্যা জটিল হতে পারে।
লেখক: অধ্যাপক ও ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঞ্চলিক পরামর্শক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চেম্বার: ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। 
হটলাইন-১০৬০৬

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status