শরীর ও মন
জিম ছাড়াই ফিট থাকার সেরা উপায়
ডা. মো. বখতিয়ার
১০ জুলাই ২০২৩, সোমবারজীবনের প্রতিটি প্রহরে সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিহার্য। কিন্তু দেখা যায়, অনেকেরই বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে ঘরে বসে বা জিমে গিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করা বা ব্যায়াম করা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। তাহলে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখবো কীভাবে? একটা সহজ উপায় আছে তা হলো কাজের সময় বা হাঁটার সময় বাড়িতে একটু বাড়তি সময় বের করে দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানো। এটা করলে আপনার প্রতিদিনের ব্যায়ামের ঘাটতি দূর করতে পারে অনেকটা। আর মনে রাখতে হবে ব্যায়াম হিসেবে দৌড়ানো ভীষণ উপকারী। এতে শরীর ঝরঝরে বা পাতলা রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানো, এমনকি হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতেও এটা দারুণ সহায়ক। সাধারণত দেখা যায়, শুরুর দিনগুলোতে একটু দৌড়ালেই শরীরে ক্লান্ত ধরে যায়। অনেকে তাই শুরু করেও কিছুদিনের মধ্যেই ছেড়ে দেন। তা না করে দৌড়ানো শুরু করতে পারেন কিছু উপায় তৈরি করে। যা কিছুদিন অভ্যাস করলে আপনি বেশ সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকবেন।
প্রথমে দৌড়ানোর জন্য প্রতিদিনের রুটিন থেকে আধা ঘণ্টা বা ১ ঘণ্টা সময় বের করে নিন। সময়টা সকালে হলে ভালো হয়। পাশাপাশি দিনের শুরুতেই ব্যায়াম করলে তার ভালো প্রভাব থাকবে আপনার সারা দিনের অতিবাহিত সময়ে। এরপর সপ্তাহ ধরে ধরে চালিয়ে যেতে হবে। একটু একটু করে নিজের সীমা বা দৌড়ানোর পরিধি বাড়াতে হবে।
প্রথম সপ্তাহ বা শুরুর সময়
শুরুতে মনস্থির করবেন হাঁটার মাধ্যমেই আপনার শরীরের চর্চা শুরু হলো। শুরুতে ১ মিনিট হাঁটবেন। তারপর ৩০ সেকেন্ড দৌড়াবেন। এভাবে আধা ঘণ্টা দৌড়াতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৪-৫ দিন। এভাবে রুটিন করে প্রথম সপ্তাহ কন্টিনিউ করবেন।
দ্বিতীয় ৭ দিন
১ মিনিট হেঁটে ১ মিনিট দৌড়াবেন। এভাবে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন দৌড়াতে হবে।
তৃতীয় সপ্তাহ বা ৭ দিন
১ মিনিট হাঁটার পর ২ মিনিট করে দৌড়াবেন। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন।
প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে নিজের সীমা বাড়াতে হবে ।
চতুর্থ সপ্তাহ
১ মিনিট হেঁটে ৩ মিনিট দৌড়াবেন। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন।
পঞ্চম সপ্তাহ
৩০ সেকেন্ড হেঁটে ৩ মিনিট দৌড়াবেন। এভাবে প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন দৌড়াতে হবে।
ষষ্ঠ সপ্তাহ
৩০ সেকেন্ড হেঁটে ৫ মিনিট দৌড়াবেন। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন।
মনে রাখবেন আপনি এভাবে ৬ সপ্তাহ এই রুটিন মেনে চললে আপনার শরীর দৌড়ানোর জন্য একরকম তৈরি বা মানিয়ে নেবে। আপনার শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য এই নিয়মগুলো প্রথমে একটু কঠিন লাগতে পারে। যদি কঠিন মনে হয় তাহলে আধা ঘণ্টার বদলে ১০ মিনিট করে শুরু করতে পারেন। কিংবা শুরু করতে পারেন স্রেফ ১০ মিনিট হাঁটার মাধ্যমে। পরের সপ্তাহে আরও ১০ মিনিট হাঁটা বাড়িয়ে নিলেন। এভাবে প্রথমে আধা ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস করে তারপর দৌড়ানো শুরু করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে হঠাৎই আপনি দৌড়ানো শুরু করবেন না। দৌড়ানোর আগে-পরে করতে হবে সাধারণ কিছু ব্যায়াম বা শরীর ওয়ার্মআপ করে নেবেন। আর দৌড়ানোর পরে হালকা ব্যায়াম করে শরীরকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। একে বলে কুলডাউন করা।
একইসঙ্গে বদল আনতে হবে আপনার দিনের সামগ্রিক রুটিনেও। এ সময় মেনে চলতে হবে ঘুমের সময়। অন্তত শুরুর দিনগুলোয় তা একটু কড়াকড়িভাবেই মানতে হবে। এক-দেড় মাস তা মেনে চলে অভ্যাস করে ফেললে, তারপর আর এনিয়ে খুব একটা কড়াকড়িরও প্রয়োজন হবে না। এমনিতেই আপনার শরীর নতুন এ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে এবং ফিরে আসুক আপনার প্রতিদিনের চাঞ্চল্যতা।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদজোদা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।