ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

চিরনিদ্রায় শায়িত সিরাজুল আলম খান

স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা ও নোয়াখালী
১১ জুন ২০২৩, রবিবার
mzamin

নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক সিরাজুল  আলম খান। গতকাল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। বাদ আসর শৈশবের বেগমগঞ্জ পাইলট স্কুল মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষেই তাকে সমাহিত করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সিরাজুল আলম খানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আসম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক, বিএনপি নেতা আবদুস সালামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। 

জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ১৯৬২ সালে পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামে একটা দেশ হবে এটা যখন কেউ চিন্তা করেনি তখন তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিউক্লিয়াস গঠন করেছেন। সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা এই জানাজায় আছেন দলমত নির্বিশেষে। উনি স্বাধীনতার পরে যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল যেটা এখন জেএসডি হিসেবে পরিচিত। ব্যক্তিগত জীবনে উনার কোনো লোভ-লালসা ছিল না। সিরাজুল আলম খান ব্যক্তি-পরিবারের সম্পত্তি নয়, সিরাজুল আলম খান দলের সম্পত্তি নয়, সিরাজুল আলম খান ১৮ কোটির মানুষের সম্পত্তি, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উনার স্বপ্ন ছিল সকল পেশার মানুষকে নিয়ে জনগণের একটা সরকার গঠন করা।

বিজ্ঞাপন
এই মানুষটির অসমাপ্ত কাজ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তবায়ন করবো-এটাই হোক আমাদের শপথ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ। তার ভূমিকা অসাধারণ এবং তাকে অস্বীকার করার কারও কোনো সুযোগ নেই। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দেশ ও জাতি একজন মহান রাজনীতিক এবং ত্যাগী একজন সংগঠককে হারালো। তার এই শূন্যস্থান পুরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সিরাজুল আলম খানের অবদান আইয়ুব সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-সেটি ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি ও পটভূমি রচনায় তার যে অবদান সেটা জাতির ইতিহাসে চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক মতপার্থক্য হয়েছে কিন্তু তার এই অবদান জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃতি দিল না, আমি মনে করি এটা একটা অপরাধ, জাতির পক্ষ থেকে একটা অপরাধ করা হলো, তাকে সম্মান দেয়া হলো না। তবে সিরাজুল আলম খানের অবদানের কথা ইতিহাসে কেউ মুছে দিতে পারবে না।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন অসাধারণ সংগঠক এবং পুরো স্বাধীনতার আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। খুবই দুর্ভাগ্যজনক আমাদের জাতির এই সূর্য সন্তানকে জাতির পক্ষ থেকে, জনগণের পক্ষ থেকে যে সম্মান জানানো উচিত ছিল আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার সেই সম্মান তাকে জানাতে পারেনি। সিরাজুল আলম খানের এই প্রয়াণে আজকে জাতীয় শোক দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। সিরাজুল আলম খানকে সম্মান জানানোর অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানানো, স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো, ৩০ লক্ষ শহীদকে সম্মান জানানো। 

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,  সিরাজুল আলম খানকে সম্মান জানালে রাষ্ট্র ছোট হতো না। কোনো ক্ষতি হতো না, রাষ্ট্রের কোনো ক্ষয় হতো না। আজকে দেখেন জানাজাতে সরকারি দলের একজন মানুষও নাই। অথচ সরকারি দলের বাঘা বাঘা কয়েকজন নেতার নাম বলা যাবে এখন জীবিত, তাদের বয়স বেশি হয়েছে বটে তবে আসতে পারতেন এই জানাজায়। ইতিহাস বলবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে উনার যে অবদান এগুলো অস্বীকার করা যাবে না। সত্যি কথা হচ্ছে, সিরাজুল আলম খান না থাকলে এই স্বাধীনতা কীভাবে বিকশিত হতো, কীভাবে আসতো এটা নিয়ে অনেক গবেষণার ব্যাপার আছে। 

ঢাকা থেকে সিরাজুল আলম খানের লাশ নেয়া হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। পরে সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের শাড়িতে মুড়িয়ে মায়ের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল আলমের দাফনের আগে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এর আগে গতকাল দুপুরের দিকে পৈতৃক ভিটায় সিরাজুল আলমের লাশ আনা হয়। সেখানে এলাকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন সিরাজুল আলম খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন  তিনি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status