ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

‘অলৌকিক’: অ্যামাজনে বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর জীবিত ৪ শিশু উদ্ধার

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ বছর আগে) ১০ জুন ২০২৩, শনিবার, ৫:৪৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

mzamin

অবশেষে খোঁজ মিললো  অ্যামাজনের গভীর জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া কলম্বিয়ার চার শিশুর। জঙ্গলে বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর শিশুদের জীবিত থাকা কোনো অলৌকিক ঘটনার থেকে কম নয়। শিশুদের মধ্যে একজনের বয়স মাত্র ১১ মাস। মনে করা হচ্ছে উদ্ধারকারীদের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে তারা এতদিন বেঁচে ছিলো। ঘন জঙ্গলে যেখানে প্রতি পদে রয়েছে বিপদের হাতছানি, শিকারী প্রাণী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীদের আনাগোনা এমনকি ঝড়ের দাপটও কম নয় সেখানে। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখিয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে তারা। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট  গুস্তাভো পেট্রো বলেছেন, "পুরো দেশ তাদের খবরে আনন্দিত। তারা আমাদের  সামনে বেঁচে থাকার একটি উদাহরণ তৈরি করেছে।''

চার ভাইবোন  বয়স ১৩, ৯, ৪ এবং ১১ মাস তারা হুইটোটো আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছিল। উদ্ধারের পর যদিও তারা অপুষ্টিতে ভুগছিল, তবে কোনও শিশুর অবস্থাই গুরুতর ছিল না, এমনকি সবচেয়ে ছোট শিশুটিও সুস্থ ছিলো। স্থানীয় আদিবাসী নেতা  জন মোরেনো বলেছেন -''অনুমান করা হচ্ছে যে, তারা অনুসন্ধান দলের দ্বারা জঙ্গলে ফেলে দেয়া খাবার খেয়ে বেঁচেছিল তবে তারা তাদের দাদির কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছিলো সেটাও  কাজে লেগেছে। ''

উদ্ধারের পর  শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়নের জন্য সান জোসে দে গুয়াভিয়ার শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

চার ভাইবোন ১লা মে সকালে অ্যামাজনাস প্রদেশের সান জোসে দে গুয়াভিয়ার শহর থেকে আরাকুয়ারার উদ্দেশে একটি Cessna 206 বিমানে উড়েছিল যখন এর পাইলট ইঞ্জিনের ব্যর্থতার কারণে  সতর্কতা জারি করেন। দুই সপ্তাহ পরে বিমানটি পাওয়া যায়, সান জোসে দে গুয়াভিয়ারের ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ক্যাকুয়েটা প্রদেশের জঙ্গলের গভীরে। শিশুদের ৩৩ বছর বয়সী মা সহ তিনটি প্রাপ্তবয়স্ক মৃতদেহ ঘটনাস্থলে উদ্ধার হলেও শিশুদের কোনো দেখা মেলেনি। আশা ছাড়েননি উদ্ধারকারীরা। পরের দিনগুলোতে দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০মিটার দূরে, অনুসন্ধান দল  শিশুদের পায়ের ছাপ, চিবানো ফল এবং ব্যবহৃত ন্যাপি  উদ্ধার করে। 'অপারেশন হোপ' নামে আয়োজিত এই উদ্ধার কার্যের গতি বাড়ানো হয়।

স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাথে  ১৫০ জন সৈন্য,  ২০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং সেই সাথে ১০টি বেলজিয়ান মেষপালক কুকুরের একটি দল ৩২৩ বর্গ কিমি এর বেশি এলাকা জুড়ে উদ্ধারকাজ চালাতে থাকে। পাশাপাশি অনুসন্ধান দলটি একটি হেলিকপ্টারে স্পিকার লাগিয়ে  হুইটোটো ভাষায় বাচ্চাদের দাদির বার্তা তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে থাকে। সময় যত এগোতে থাকে শিশুদের জীবিত খুঁজে পাওয়ার প্রাথমিক আশা দ্রুত কমে আসতে থাকে। এদিকে দুর্ঘটনার আড়াই সপ্তাহের মাথায় তৈরি হয় বিভ্রান্তি। শিশুগুলো জীবিত উদ্ধার হয়েছে বলে বার্তা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো।

এর দু’ দিন না পেরোতেই আবার জানানো হয়, মেলেনি সন্ধান। তবে গভীর জঙ্গলে চালু ছিল জোরালো অনুসন্ধান। অবশেষে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে সেনাবাহিনী সেই ‘অলৌকিক ঘটনার'  সাক্ষী হয়।  ১০ জন সৈন্য এবং আটজন আদিবাসী স্বেচ্ছাসেবকের দল  শিশুদের একটি  নতুন ট্র্যাক আবিষ্কার করেছিল এবং তাদের অনুসরণ করেছিল। যেখান থেকে খোঁজ মেলে ৪ শিশুর। শুক্রবার, সামরিক বাহিনী ছবি টুইট করেছে যেখানে দেখা গেছে  সৈন্য এবং স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল বাচ্চাদের সাথে পোজ দিচ্ছে, তাদের  কম্বলে মোড়া অবস্থায় রাখা হয়েছিলো। কলম্বিয়ার সামরিক কমান্ড টুইট করে লিখেছেন, "আমাদের প্রচেষ্টার ফলে আজ এই দিন এসেছে।" প্রেসিডেন্ট পেট্রো এদিকে বলছেন,'' জঙ্গল তাদের বাঁচিয়েছে। তারা জঙ্গলের সন্তান, এবং এখন তারা কলম্বিয়ারও সন্তান।"

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status