শেষের পাতা
লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ বিএনপি’র
জেলায় জেলায় অবস্থান, পাবনায় হামলা-সংঘর্ষ
স্টাফ রিপোর্টার
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। ঢাকায় মতিঝিলের ওয়াপদা ভবনের সামনে অবস্থান নিতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে স্মারকলিপি জমা দিয়ে কর্মসূচি শেষ করে ঢাকা জেলা বিএনপি। ওদিকে কর্মসূচি শেষে মিছিল নিয়ে ফেরার পথে পাবনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপি’র ১০ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি।
রাজধানীতে মতিঝিল বিদ্যুৎ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে জেলা বিএনপি মিছিলসহ নয়াপল্টনস্থ সিটিহার্ট মার্কেটের সামনে থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আরামবাগ নটর ডেম কলেজের সামনে গেলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণের শক্তির কাছেই মাথানত করতে হবে। আজকে সরকারের পতন অত্যাসন্ন। বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ১৫৪টি প্লান্ট। তার মধ্যে শুধুমাত্র ৪৯টি কোনোরকম চালু আছে, ১০৪টি প্রায় বন্ধ। এগুলো তাহলে কোথায় গেল। আপনার সরকারের এক এমপি বলেছিলেন, ফেরি করে নাকি বিদ্যুৎ বিক্রি হবে সেই ফেরির বিদ্যুৎ কোথায় গেল?
উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে দুর্জয় সাহস নিয়ে আজকে যে কর্মসূচি পালন করছেন এই কর্মসূচি থেমে থাকবে না। আমাদের এই কর্মসূচির লক্ষ্য দুঃশাসনের অবসান করা, কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান করা।’ পরে ঢাকা জেলা বিএনপি সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক এবং সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি নিয়ে ওয়াপদা ভবনে যান।
স্টাফ রিপোর্টার, পাবনা থেকে জানান, পাবনায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ‘অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতি’র প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপি’র অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে ফেরার পথে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা শহরের বড় ব্রিজের পাশে আব্দুল হামিদ রোডের লতিফ টাওয়ারের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালপুরস্থ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের পাওয়ার হাউজ পাড়াস্থ বিদ্যুৎ অফিসের দিকে রওনা হয়। কিন্তু পথে বড় ব্রিজের মাথায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে নেতাকর্মীরা শান্ত হয়। তারা বড় ব্রিজের পাশে ঘোড়া স্ট্যান্ডে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এদিকে একই সময়ে পাবনা জেলা পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ শেষে ফেরার পথে লতিফ টাওয়ারের সামনে আসলে ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেয়া যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টুসহ ১০ আহত হয়।
এ সময় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা লতিফ টাওয়ার মার্কেটে আত্মরক্ষা করলে সেখানেও যুবলীগ-ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শহরজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। হামলার সময় পুলিশ ও ডিবির বিপুল পরিমাণ সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাদের কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতেই নারকীয় হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমাদের জেলা আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমাদের নেতাকর্মীরা দোকানপাটে লুকিয়ে পড়লেও সেখানে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তবে হামলা করার বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে আসার পথে নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিহত করেছে মাত্র। বিরোধী কারও ওপর হামলা চালানোর নির্দেশনা নেই। এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ডি.এম. হাসিবুল বেনজীর বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ সমাবেশ করছিল। পাশ দিয়ে বিএনপি নেতাকমীরা যাওয়ার সময় একটা হট্টগোল হয়েছে। কোনো হামলা হয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। আমরা তদন্তের পর জানাতে পারবো।