ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণ পাইলট প্রকল্প অবিলম্বে স্থগিতের আহ্বান জাতিসংঘের

মানবজমিন ডেস্ক
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পণ বিষয়ক পাইলট প্রকল্প অবিলম্বে স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর টম অ্যানড্রুজ বৃহস্পতিবার এ আহ্বান জানান। এতে তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জীবন এবং স্বাধীনতা এখনো মারাত্মক ঝুঁকিতে। তিনি আরও বলেছেন,  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কূট ও জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ ব্যবহার করছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। টম অ্যানড্রু বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার অনুকূলে নয় মিয়ানমার পরিস্থিতি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছিল যে বাহিনী, তার কমান্ডে ছিলেন সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং। বর্তমানে নৃশংস সামরিক জান্তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। তারা বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছে। তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং অন্য মৌলিক অধিকারগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। 

বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ১১৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি গ্রুপকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। তবে তারা এর তারিখ নির্দিষ্ট করে জানান নি।

বিজ্ঞাপন
তাদের হিসাবে এ বছরের শেষ নাগাদ ৬০০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপে মনে হচ্ছে প্রথম গ্রুপকে ফেরত পাঠানো হবে অবিলম্বে। যারা সরকারের পরিকল্পনার বিরোধিতা করবে তাদেরকে গ্রেপ্তার, ডকুমেন্ট জব্দ এবং অন্যান্য প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়ে বার বার হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। টম অ্যানড্রু বলেন, শরণার্থীরা ফিরে যেতে রাজি হলে তাদেরকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়ার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি ক্যাম্পে যেসব শরণার্থী আছেন প্রতিদিন তাদের প্রতিজনের খাবারের রেশন ০.২৭ ডলার কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে তাদেরকে। ফিরে যেতে রাজি হওয়া পরিবারগুলোকে যে অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা কোথা থেকে আসবে, সে বিষয়টি অস্পষ্ট। 

এই পাইলট প্রকল্পের অধীনে যেসব শরণার্থী ফিরে যাবেন তাদেরকে নিজেদের গ্রামে ফিরতে দেয়া হবে না। ২০১৭ সালে গণহত্যা চালানোর সময়ে এসব গ্রামের বেশির ভাগই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। শরণার্থীরা মংডুর ‘রিসেপশন’ এবং ‘ট্রানজিট’ সেন্টারের  ভেতর দিয়ে যেতে হবে। এরপর নতুনভাবে গড়ে তোলা ১৫টি ‘গ্রাম’ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। ওইসব গ্রাম থেকে স্বাধীনভাবে তারা বের হতে পারবেন না। 

বাংলাদেশের ক্যাম্পে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃপক্ষের দুটি সফরকে মার্চে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। রিপোর্ট অনুযায়ী, শরণার্থীদের কিছু সংখ্যককে সামরিক জান্তা কর্তৃপক্ষের (এসএসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ভেরিফিকেশন’ বিষয়ক সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাংলাদেশ ও সামরিক জান্তা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সমন্বয়ের সঙ্গে রাখাইন রাজ্যে সফরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। বাংলাদেশি কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিরে যাওয়ার জন্য যে আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে তাতে ‘জেনারেল স্যাটিসফ্যাকশন’ প্রকাশ করেছেন শরণার্থীরা। কিন্তু যারা ওই সফরে অংশ নিয়েছিলেন তাদের রিপোর্ট এই নিশ্চয়তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

তাতে প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। টম অ্যানড্রু বলেন, এই অবস্থার মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যার্পণ করলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ঠেলে দেয়া হবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভবিষ্যতে তাতে আরও বড় অপরাধ হবে। অবিলম্বে এই প্রত্যার্পণের পাইলট প্রকল্পকে স্থগিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। টম আরও বলেন, কথায় এবং কাজে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status