শেষের পাতা
বিসিসি নির্বাচনের শেষ হিসাবটাও গোলমেলে
জিয়া শাহীন, বরিশাল থেকে
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
বাকি মাত্র তিন দিন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ হিসাবটা গোধূলি লগ্নে এসেও ক্রমশ জটিল হচ্ছে। নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হাতপাখা-লাঙ্গল সমানে সমান ছিল বেশ কিছুদিন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঘড়ির উত্থানে হিসাবটা অনেকটাই পাল্টে যাচ্ছে। নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বীর দৌড়ে তিন প্রার্থীর কোমর কষে লড়াইটা কিছুটা সহজ করে দিচ্ছে নৌকার খোকন সেরনিয়াবাতকে- এমনটা মনে হলেও হিসাবটা গোলমেলে হয়ে উঠছে শেষ সময়ে বিএনপি’র আর সাদিকপন্থিদের ভোটব্যাংক হিসাব করতে গিয়ে। ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে সাদিকপন্থিদের ভোটব্যাংকের বড় একটা অংশ নৌকায় যাবে না। আর বিএনপি থেকে রুপনকে বহিষ্কার করলেও বেশ কিছু ভোট যাবে তার বাক্সে। সাদিকের ভোট কোনদিকে যাবে সেটাই এখন হিসাবের বড় বিষয়। ১২ই জুন বরিশাল নগরবাসী তাদের নগরপিতা বেছে নেবে। ১২৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৭ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯শ’ ৭ জন। ১২৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৮টিই এবার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় নৌকার জন্য অনেকটা সহজ হিসাব করা হয়েছিল। গাজীপুরের মতো নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা না হওয়ার সুবিধাটাও ছিল। সুবিধাটা ছিল বর্তমান মেয়র সাদিক বিরোধী অবস্থানের কারণে খোকন সেরনিয়াবাতকে নিয়ে। প্রথমদিকে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা এবং জাতীয় পার্টির লাঙ্গলকেই বিবেচনা করা হচ্ছিল। যদিও এই দুই প্রার্থীরই বরিশালে তৃণমূল সমর্থক কম। হাতপাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার প্রচারণায় নামা কর্মীদের বড় অংশই প্রতিদিন চরমোনাই থেকে নদী পার হয়ে বরিশালে আসেন। সন্ধ্যায় ফিরে যান। এরা বরিশাল সিটির ভোটার নন। আবার লাঙ্গলেরও তৃণমূল কর্মী সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এরা দুজনই বিএনপি’র ভোটব্যাংকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এখন তাকিয়ে আছেন সাদিকপন্থিদের ভোটের দিকে। সে হিসাবে নিজস্ব কর্মীবাহিনী নিয়ে নৌকা বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। সাদিকের কর্মীদের বড় একটা অংশ বাদ দিয়েই এরা হিসাব কষছেন প্রতিদিন। সেই শূন্য স্থান পূরণে তারাও বিএনপি’র ভোটব্যাংকের দিকে তাকিয়ে আছেন।
তবে হিসাবটা গোলমেলে হয়ে পড়ে, ঘড়ি মার্কার শেষদিকে নীরব উত্থানে। সাবেক মেয়র, বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান রূপন বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার হলেও বিএনপি’র কর্মীদের ভোট তার বাক্সে পড়বে এটি এখন মনে করা হচ্ছে। তবে সে কারণে নৌকার চেয়ে আতঙ্কিত হাতপাখা ও লাঙ্গল। তারা হিসাব করেছিল, বিএনপি’র ভোট ঘড়িতে যাবে না। তারা পাবেন। তাদের হিসাবটা গড়মিল হয়ে পড়েছে। এখন ভরসা সাদিকপন্থিদের ভোট।
মাঠ পর্যবেক্ষণে নৌকার পর এখন বাকি তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রায় এক কাতারে চলে এসেছে। হাতপাখার মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, লাঙ্গলের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস এবং ঘড়ির কামরুল আহসান রূপন। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে কিছুটা এগিয়ে হাতপাখা। হাজার হাজার মুরিদ রয়েছে তাদের। তবে সব মুরিদ আবার হাতপাখার ভোটার নয় এটিও সত্য। সে কারণে আওয়ামী লীগের সাদিকপন্থিদের ভোটের দিকেও তারা তাকিয়ে আছেন। গুঞ্জন রয়েছে, সাদিকপন্থিদের সঙ্গে তার গোপন সমঝোতা হয়েছে। এ সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের এক কাউন্সিলর প্রার্থী তো বিস্ফোরণমূলক বক্তব্য রেখে দলীয় পদ হারিয়েছেন, খেয়েছেন মামলা। ঠিক একই ভাবে অপর এক কাউন্সিলর প্রার্থীর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি সাদিক অনুসারী। হাতে নিজের লিফলেট নিয়ে লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।
নৌকার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য কাজী মফিজুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী নৌকায় ভোট দেবেন এটা নিশ্চিত। কিছু ভোট হয়তো অন্য বাক্সে পড়তে পারে, তবে সেটি হবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তার মতে, খোকন সেরনিয়াবাত একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। নগর পিতা হিসেবে অন্য প্রার্থীদের থেকে তিনি এদিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে। এ কারণে বিএনপি’র অনেক ভোটার খোকন সেরনিয়াবাতকে ভোট দেবেন।
হাতপাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম গতকাল তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় বলেন, বিসিসি’র উন্নয়নের কথা বিবেচনা করলে নগরবাসী তাকেই ভোট দেবেন।
লাঙ্গলের ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস গতকাল বরিশাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তিনিই জয়লাভ করবেন। তবে শেষ লগ্নে এসে শুধু বিএনপি’র ভোট নয়, সাদিকপন্থিদের ভোটের দিকেও চেয়ে আছেন নৌকার তিন প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন পর্যন্ত এককভাবে বিএনপি’র ভোট কেউ পাবে না- তা মাঠেই বোঝা যাচ্ছে। তবে সাদিকপন্থিদের ভোট কোনদিকে যাবে সে হিসাবটাই এখন কষছেন সবাই। তবে খুবই গোলমেলে সে হিসাব।