শেষের পাতা
৬ মাসেও হয়নি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ক্ষুব্ধ পদপ্রত্যাশীরা
স্টাফ রিপোর্টার
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবারছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৬ই ডিসেম্বর। সম্মেলনের ১৪ দিনের মাথায় ২০শে ডিসেম্বর দুই সদস্যের কমিটির অনুমোদন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে বের হয়ে ওইদিন গণমাধ্যমের সামনে নব গঠিত কমিটির নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কমিটিতে সভাপতি করা হয় সাদ্দাম হোসেনকে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হন শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। নতুন কমিটির দায়িত্ব পেয়ে ছাত্রলীগকে ‘স্মার্ট সংগঠন’ করার ঘোষণা দেন তারা। কিন্তু ৬ মাসেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি সাদ্দাম-ইনান।
দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটির এক-চতুর্থাংশ সময় পার হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করায় ক্ষুব্ধ পদপ্রত্যাশীরা। তাদের দাবি কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে তারা সংগঠনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন। ছাত্রলীগের গত কমিটিতে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী এক পদপ্রত্যাশী মানবজমিনকে বলেন, তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন স্মার্ট ছাত্রলীগ করবেন। কিন্তু ৬ মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারা কোনোভাবেই স্মার্ট ছাত্রলীগের কাজ হতে পারে না।
গত ১৯শে এপ্রিল ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যৌথ সভায় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে ঈদের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কমিটি গঠন না করায় উপেক্ষিত হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও। এর আগে ৩০শে মার্চ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন সাদ্দাম-ইনান। সে সময়ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
এর আগে ৬ই জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সে সময় তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। অনেক কর্মী আশা নিয়ে বসে আছে। বাকি কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে যেন বেশি সময় না নেয়া হয়। আমাদের আর দেরি করার সুযোগ নেই। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এদিকে গত ১১ই এপ্রিল সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে নতুন ৮টি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়।
পদগুলো হলো- অটিজম বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মাদ্রাসা শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রী ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বিষয়ক সম্পাদক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক। এরপর নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়; পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু এরপরও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করায় হতাশা বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
সরজমিন দেখা যায়, পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সময় দিচ্ছেন। এমনকি সাদ্দাম-ইনানের হলের সামনেও প্রটোকল দিচ্ছেন তারা। এই দুই নেতা হল থেকে বের হওয়ার পর থেকে হলে ফেরা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। নিজেকে নেতার অনুগত প্রমাণে চেষ্টার কমতি নেই তাদের। একইসঙ্গে সংগঠনের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সংগঠনের প্রতি নিজের ত্যাগ ও পরিশ্রমের প্রমাণও দিচ্ছেন তারা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী গত কমিটির এক উপ-সম্পাদক বলেন, দিনের পর দিন সংগঠনের প্রতিটা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি মধুর ক্যান্টিন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। কিন্তু শীর্ষ দুই নেতা আমাদের পরিশ্রমের কোনো মূল্যায়ন করছেন না। কোথাও নিজের পরিচয় দিতে পারি না। আমাদেরও যে একটা জীবন আছে তা তারা বুঝতে চেষ্টা করছেন না। তিনি বলেন, আমরা চাই সংগঠনের জন্য কাজ করতে। কিন্তু কোনো পদপদবী না থাকায় সাংগঠনিক কোনো কাজ করতে পারছি না। আশা করি শিগগিরই কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন তারা। গত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকারী আরেক পদপ্রত্যাশী বলেন, ৬ মাসেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়া দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেদের ক্ষমতা হ্রাস পাবে ভেবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না। অল্প সময়ের মধ্যে মাঠের কর্মীদের পরিশ্রমের মূল্যায়ন করা উচিত।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান মানবজমিনকে বলেন, নির্ধারিত করে কোনো তারিখ বলা যাবে না। তবে আমরা শিগগিরই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবো। কমিটিতে পরিশ্রমী ও ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা বঙ্গবন্ধু ও দেশরত্নের বিষয়ে আপোষহীন এবং আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় যারা ভূমিকা রাখতে পারবে। বিতর্কিতদের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিতর্কিতরা কমিটিতে স্থান পাবেন না। আবার আমরা ঢালাউভাবে সবাইকে বিতর্কিত বলতেও চাই না। কারণ অনেক সময় অনেকে প্রোপাগান্ডার শিকার হয়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই কমিটি গঠন করা হবে।