বাংলারজমিন
বিদ্যুৎ বিভ্রাট
মানুষের কষ্টের শেষ নেই
৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার
কোরবানি সামনে নিয়ে শঙ্কায় গরু খামারিরা, হাতপাখাই যেন ভরসা
ঝিনাইদহ
আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে: প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়িত জেলা ঝিনাইদহে চলছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে- বিদ্যুৎ স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন তারা ১০ ঘণ্টার অধিক সময় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু গ্রাম ও শহরের বাস্তব চিত্র ভিন্ন। শিশু ও বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে হাঁপিয়ে উঠেছে গৃহপালিত পশুও।
সার্কিট হাউজ পাড়ার ইমতিয়াজ শাহাদৎ জানান, প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। বিদ্যুতের আসা- যাওয়ার কারণে শুধু মানুষই কষ্ট পাচ্ছে না, ইলেক্ট্রনিক পণ্যগুলোও নষ্ট হচ্ছে। শহরের চাকলাপাড়া এলাকার গরুর খামারি তরুণ মেম্বার জানান, তার খামারে ৮/১০টি গরু আছে। প্রতিটি গরুর দাম হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বাধ্য হয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হচ্ছে। গরুগুলোর হিটস্ট্রোকের আশংকা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদ অতি নিকটে। যে কারণে আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি কখন গরু স্ট্রোক করে। প্রতিদিন নিজেরা না ঘুমিয়ে তালের পাখা দিয়ে গরুকে বাতাস দিয়ে থাকি।
এদিকে শহরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও নাজুক। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কলেজছাত্র মো. সংগ্রাম হোসেন জানান, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে তার এলাকার মানুষ হাঁফিয়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে সেচ দিতে পারছে না। গ্রামের পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সর্বত্রই যেন হাহাকার উঠে গেছে। তার ভাষ্যমতে গ্রামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখারও চরম ক্ষতি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম ইমদাদুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহে তাদের গ্রাহক আছে চার লাখ ১৪ হাজার। ৮৩টি ফিডারের মাধ্যমে এই বৃহৎ পরিবারের বিদ্যুতের যোগান দিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিদিন মোট ৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু তিনি দাবি করেন চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জিএম’র ভাষ্যমতে ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে।
ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এলাকায় মিল- কারখানাসহ এক লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এই বিশাল গ্রাহকের চাহিদা মিটাতে ঝিনাইদহে প্রতিদিন ৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩২ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে আর এই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি।
মানিকগঞ্জ
রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে: ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিরামহীন লোডশেডিংয়ে আর তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের পোল্ট্রি মুরগির খামারিরা। প্রতিদিনই খামারগুলোতে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মুরগি। অনেকে লোকসানের আশঙ্কায় খামারে মুরগি তোলা বন্ধ রেখেছে। ঘনঘন লোডশেডিং ও গরমে মুরগি খাওয়া কমিয়ে দেয়ায় প্রতিটি খামারের মুরগির ওজন কমে যাচ্ছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে খামারিরা জানিয়েছেন। খামারিরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় গড়ে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। গেল কয়েক দিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করায় তারা পোল্ট্রি মুরগি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সরজমিন মানিকগঞ্জের কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সঙ্গে তীব্র গরমে পোল্ট্রি মুরগি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। ঘনঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করায় ফ্যান চালানো কার্যত বন্ধ এবং মটর দিয়ে পানি তুলতে না পারায় মুরগির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। প্রচণ্ড গরমের কারণে মাঝারি এবং বড় মুরগিগুলো প্রতিটি খামারে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। রাতের বেলায় বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারণ করায় অন্ধকারে মুরগিগুলো খাবার খেতে চায় না।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী খামারি নজরুল ইসলাম রানা বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে মুরগির খামার পরিচালনা করে আসছি। বিগত দিনে কখনোই এ রকম বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখিনি। ব্যবসা ভালো ভাবেই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড গরমে দুইটি শেডে ১০০০ মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ঘনঘন বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। দিনে-রাতে খাবার কম খাচ্ছে মুরগিগুলো। আর খাবার কম খাওয়ার কারণে মুরগির ওজনও কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা খামারিরা লোকশানে আছি।
মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বড় খামারিদের একজন উদয় সাহা। মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় যার খামারের চারটি শেডে সর্বক্ষণই কম করে হলেও দশ হাজার মুরগি থাকতো। লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে কিন্তু তিনি মুরগি উঠানো বন্ধ করে রেখেছেন। উদয় সাহা বলেন, বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং এবং তীব্র গরমের যে অবস্থা এতে করে শেডে মুরগি উঠানো হলে লোকশান ছাড়া আর কিছুই পাবো না। তাই ঝুঁকি নিয়ে লোকসান গুনতে রাজি নই বলেই খামারে মুরগি তুলছি না। আমরা মূলত বিদ্যুতের উপর নির্ভর করেই এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বর্তমানে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে তা বিগত দিনে কখনোই হয়নি।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাঠুইমুড়ি বেড়িবাঁধের তাড়াইল এলাকার যুবক আমিরুল ইসলাম তার খামারে ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তিনি বলেন, ঘনঘন লোডশেডিং এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে প্রতিদিনই আমার খামারে মুরগি মারা যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা অন্তত ১৫-১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ প্রয়োজন। বিদ্যুতের ব্যবস্থা এত খারাপ থাকলে যে কোনো সময় খামার বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
মানিকগঞ্জ পোল্ট্রি ডিলার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন মিয়া হাসিন বলেন, লোডশেডিং এবং গরমের কারণে প্রতিটি খামারেই কমবেশি করে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে। এদিকে মানিকগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিংনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

চাঁপাই নবাবগঞ্জ
ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে: ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চাঁপাই নবাবগঞ্জের মানুষের জনজীবন। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতিতে চাঁপাই নবাবগঞ্জের অটোমেটিক রাইসমিলগুলোতে কমেছে চালের উৎপাদন। পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় বাজেটে উন্নয়নখাতের বরাদ্দ ৮৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎখাতে বাজেট বাড়ানো কথা বলছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
জানা গেছে, শহরে সারা দিনে প্রায় ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর গ্রামে থাকছে না ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুমাতে পারছে না মানুষ। এতে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। শিল্পউৎপাদন কমেছে। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কমছে কর্মঘণ্টাও। লোডশেডিংয়ের কারণে চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিল্প কলকারখানা ও কৃষিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বিদ্যুৎ সংকটে অটোমেটিক রাইস মিলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বড় চালকলগুলোর অবস্থান চাঁপাই নবাবগঞ্জে। তিন-চার দিন ধরে উৎপাদন কম-বেশি ৪০ শতাংশ ব্যাহত হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। মিনার অটোমেটিক রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মো. মাসুদ বলেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় চাল উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমেছে। এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতিরও ক্ষতি হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে চালের মানও খারাপ হচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদন খরচও। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে। সদর উপজেলার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, সারা দিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। নাচোল উপজেলার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শহরের চেয়ে গ্রামে আরও বেশি সমস্যা। গ্রামে কারেন্ট গেলেই মনে হয় আর আসার খবর নাই।
শহরের পিটিআই মাস্টারপাড়ার গৃহিণী ফারিহা খান বলেন, বিদ্যুৎ যায় আর আসে। এক ঘণ্টা থাকলে আবার দেড় থেকে দুই ঘণ্টা থাকছে না। বাচ্চার ঠিকমতো পড়াশোনাও হচ্ছে না। চাঁপাই নবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৫৫-৭০ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫-৪৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘাটতি থাকায় জেলায় দিনে ও রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম জানান, এ বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৩৬ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ১৮-২০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য লোডশেডিং।
নীলফামারী
দীপক আহমেদ, নীলফামারী থেকে: তীব্র তাপদাহের রেকর্ড যখন উত্তরের জেলা নীলফামারীর তখন লোডশেডিং-এর রেকর্ডও যেন এ জেলারই। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ২-১টি ফিডার ছাড়া সবক’টি ফিডারেই লোডশেডিং হচ্ছে এক ঘণ্টা পর পর। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তেতিয়ে উঠেছে সবকিছুই। পিচঢালা সড়কে চলাচল কমেছে মানুষের। প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই বের হচ্ছেন না। কাঠফাটা রোদে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা ও ভ্যান চালকেরা। হাঁসফাঁস করছে পশুপাখিও। কোথাও যেন গরমের নিস্তার নেই। নীলফামারী বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিমুল ইসলাম সেলিম জানান, গত মঙ্গলবার নীলফামারী সদরে ছিল বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট। বিপরীতে মিলে মাত্র ৯থেকে ১০ মেগাওয়াট। ফলে শহরের ১১টি ফিডারের সবক’টি ফিডারেই লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়ে যায়। এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, লোডশেডিং নিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সঙ্গে বাদানুবাদের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়তই। অনেকে গ্রাহক মোবাইল ফোনে গালাগালি করছেন। এদিকে ভয়াবহ তাপদাহ আর লোডশেডিং এর মধ্যেই স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিতে শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, চরম গরম আর লোডশেডিং-এ পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া উচিত ছিল শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের। অনেক শিক্ষার্থীই স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলেও জানা গেছে। ওদিকে একই অবস্থা জেলার উপজেলা সদর সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরে। তবে গিঞ্জি শহর সৈয়দপুরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। লোডশেডিং এর কারণে দিনের বেশীরভাগ সময় ছোট-বড় অনেক কারখানা বন্ধ থাকায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সমাজে। শহরগুলিতে পানীয়জল নিয়েও দেখা দিয়েছে সংটক। লোডশেডিং এর কারণে বেশির ভাগ সময় পৌরসভার পানি সরবরাহের পাম্পগুলি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী।
মাগুরা
মো. শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা থেকে: মাগুরায় সপ্তাহব্যাপী ধরে তীব্র তাপদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় বাড়ছে ভোগান্তি। এরমধ্যে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্তরের অর্ধ-সাময়িক পরীক্ষা। সকালে-দুপুরে আর রাতের বেলা নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকাতে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। ঠিকমতো পড়াশোনা করতে না পারায় অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।মাগুরা শুভেচ্ছা প্রিপারেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাহার ছড়া জানান, গতকাল থেকে আমাদের অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রচণ্ড তাপদাহ অব্যাহত থাকার কারণে কোথায় স্বস্তি পাচ্ছি না। তারপর আবার বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং থাকায় ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পাচ্ছি না। মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান বলেন, সপ্তাহখানেক ধরে তীব্র তাপদাহ ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে আমরা খুবই নাজেহাল অবস্থার মধ্যে আছি।
দিনে রাতে কোথাও কোনো জায়গায় স্বস্তি ফিরে পাচ্ছি না। মাগুরা নালিয়ারডাঙি গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক দিনে রাতে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকাতে আমাদের চাষাবাদ খুবই মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে প্রচণ্ড তাপদাহে আমরা মাঠে কাজ করতে পাচ্ছি না। বিদ্যুতের অভাবে আমরা কৃষি জমিতে সেচ দিতে পারছি না। ফলে নানা সমস্যার মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। এদিকে ঘন ঘন লোড লোডশেডিংয়ের ফলে মাগুরা সদর হাসপাতালের রোগীরা পড়েছেন বিপাকে। হাসপাতালে নেই জেনারেটর। ফলে বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকাতে অনেক মুমূর্ষু রোগীরা কষ্ট পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে রোগীরা আরও ভয়ানক অবস্থার মধ্যে আছে।
মাগুরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মঞ্জরুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৭ মেগাওয়াট। কিন্তু সেখানে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০-১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে দিনে রাতে শিফমেন্ট করে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এর অবস্থা কবে উন্নতি হবে তা তিনি বলতে পারেনি। তবে জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় ও পায়রা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলা শহরগুলোতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। আগামীতে বিদ্যুতের আরও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে তিনি জানান।
নওগাঁ
ইখতিয়ারউদ্দীন পত্নীতলা (নওগাঁ) থেকে: বরেন্দ্র ভূমি এলাকা খ্যাত নওগাঁ জেলা। জেলায় প্রচণ্ড তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিংও। আবহাওয়া চরম উত্তপ্ত বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে চলমান বিদ্যুৎ বিভ্রাট (লোডশেডিং)এর কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকাভেদে ৭-১১ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এতে বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন অন্যরাও। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় এই চিত্র দেখা গেছে। পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের দীঘিপাড়ার বাসিন্দা আজিজার রহমান (৬০) জানান, আগে লোডশেডিং তেমন হতো না। গত সপ্তাহ ধরে এতবেশি লোডশেডিং হচ্ছে যে, তা চিন্তা করার মতো নয়। আমি শ্বাসকষ্টে ভুগছি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। লোডশেডিংয়ের সময় গরমের ঠেলায় আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত।
উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের হাসানুজ্জামান (৩৭) বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনের বেলায় ধান শুকাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমার দুই কন্যা সন্তান। গরমের ফলে অসুস্থ হয়ে ছটফট করছে। উপজেলার হরিপুর গ্রামের গৃহিণী হেনা পারভীন (৪২) বলেন, আমার মেয়ে শিশুর বয়স (২) বছর। এই চলমান লোডশেডিংয়ে ও তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রাতে ঘুমাতে পারছে না। তাই দিনরাত অসহনীয় গরমে দিন দিন স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের মশরইল গ্রামের আব্দুল মান্নান (৬৪) বলেন, আমরা কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। দিনে প্রচণ্ড তাপদাহ সহ্য করে মাঠের কাজ করি। রাতে লোডশেডিংয়ের সময় ঘরে ঘুমাতে পারি না। তাই ঘরের বাহিরে পুকুর পাড়ে গিয়ে পুরুষেরা অনেকেই বিছানা করে রাতে ঘুমাই। নজিপুর পৌর শহরের আলহেরা পাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিনের বেলা প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে বিল্ডিং পুরোটাই উত্তপ্ত। তাই ঘনঘন চরম লোডশেডিংয়ের কারণে রাতে আমি বাসার ছাদে চৌকি ফেলে বিছানায় ঘুমাই। নওগাঁর নজিপুর পৌর সদরের জনস্বাস্থ্যবিদ প্রভাষক ডা. এম.এ গফুর বলেন, আমার চেম্বারে আসা রোগীদের মধ্যে ৯০% মা ও শিশু। তাদের অধিকাংশই গরমজনিত কারণে নানা রকম রোগে ভুগছে।
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের সময় তীব্র লোডশেডিংয়ে সুনামগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত। জেলার ১২টি উপজেলার সর্বত্রই লোডশেডিং চলমান। দিন-রাতে সব সময় লোডশেডিং হলেও রাতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেশি হচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানান। এরফলে দোকানপাট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস আদালতে কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, একদিকে বিদ্যুৎ নেই, অন্যদিকে অত্যধিক গরমের কারণে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের ফলে রাতে ঘুম না হওয়ায় দিনের বেলায় এর প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া নবজাতক ও রোগীরা লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন ধরে একদম অসহ্য হয়ে যাচ্ছি লোডশেডিংয়ে। একে তো অনেক গরম, তার ওপরে বার বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানাতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে যায়। দেখা গেছে, মধ্যবিত্তদের আইপিএস বা জেনারেটর চালানোর মতো অবস্থা নাই। চার্জার ফ্যান-লাইট যে কিনবে, তাও সম্ভব হচ্ছে না। সব কিছুর দাম এত বেশি, সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে তারা। এগুলোর জন্য আলাদা বাজেট করার মতো অবস্থা নাই মধ্যবিত্তদের।
সুনামগঞ্জ পিডিবি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় তাদের গ্রাহক রয়েছেন ৩২ হাজার। পিক আওয়ারে সাড়ে ১০ মেগাওয়াট আর অফ-পিক আওয়ারে সাড়ে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। উভয় সময়ই গড়ে ২০ থেকে ২৫ ভাগ কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে লোডশেডিং এর কবলে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।
সুনামগঞ্জ পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান জানান, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে গত ২ দিন ধরে তুলনামূলক কম লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র জানায়, জেলায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার। আর সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা। সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বললে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ও বরাদ্দ কতো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তা জানাননি।
রংপুর
জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে: রংপুরে ভয়াবহ অবস্থা। একদিকে তাবদাহ, অপরদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়। তীব্র গরম আর লোডশেডিং এ দুইয়ের প্রতিযোগিতার জনজীবন অতিষ্ঠ। অচলাবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্য কলকারখানায়। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। সবমিলে পিঠ ঠেকে গেছে দেয়ালে। জীবন যেন আর চলছে না। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এমন ভয়াবহ অবস্থা কখনো হয়নি। মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে অতীতের নিম্নআয়ের দেশ থাকেলও এতটা কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। এমন মন্তব্য উঠে এসেছে মানুষজনের বক্তব্যে। বিদ্যুৎ না থাকায় মসজিদে ওজুর পানি থাকে না। দিন-রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্করা জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। নেসকো সূত্রে জানা যায়, রংপুরে বুধবার ৯৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে।
৩০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকার কারণে নেসকো’র আওতাধীন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং দেয়া হয়েছে। নেসকো ডিভিশন-১ এ বুধবার চাহিদা ছিল ৩০ মেগাওয়াট, পাওয়া গেছে ১৭ মেগাওয়াট, ডিভিশন-৩ এ চাহিদা ছিল ২০ মেগাওয়াট, পাওয়া গেছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমিয়ে আনায় লোডশেডিং তীব্র হয়েছে। নেসকো রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কবে নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ঠিক হবে তা আমার জানা নেই। মন্ত্রী মহোদয় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত জানিয়েছেন। এদিকে রংপুরে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গতকাল রংপুরে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩৮ দশমিক ৬, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৮, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৩৯ দশমিক ৫ ও ডিমলায় ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুরে তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছে। তবে কিছু এলাকায় বুধবার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমে আসবে।
মৌলভীবাজার
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে: প্রচণ্ড গরমে রাত-দিনে সমান তালে চলা দীর্ঘ সময়ের বিদ্যুৎ বিভ্রাটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মৌলভীবাজারের মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসানের সঙ্গে কাটছে নির্ঘুম রাতও। তীব্র গরম, অনাবৃষ্টি ও সেই সঙ্গে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এ জেলার চা ও আগর-আতর শিল্পের। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন লোডশেডিংয়ে কারণে প্রতিদিনই তাদের উৎপাদন কমছে। এ ছাড়াও অন্য ব্যবসায়ীরাও দুশ্চিন্তায়।
জেলার বিদ্যুৎ (পিডিবি ও পল্লী) বিভাগের তথ্য মতে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদানুযায়ী প্রাপ্ত অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ দিয়ে চালাতে হচ্ছে। প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত এ জেলায় দীর্ঘদিন থেকে বয়ে চলা গ্রাহক হয়রানির নানা গুরুতর অভিযোগের সঙ্গে এখন নতুন সংযোজন ঘনঘন চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। জেলা শহরসহ প্রতিটি উপজেলার গ্রাম ও শহরের নাগরিকদের এখন একই অবস্থা। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় যেমন চরম ব্যাঘাত হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলা ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসারত রোগীরাও অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা বলছেন, আমরা তো এক টাকাও বিল বকেয়া রাখতে পারি না।
টাকা বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তা হলে কেন দেশে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হবে। আর আমরা কষ্ট পাবো। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা কিছুটা স্বস্তি পেতে ইলেকট্রিক চার্জার ফ্যান, আইপিএস ও লাইট কিনতে ভিড় করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার মানবজমিনকে জানান, পুরো জেলায় তাদের গ্রাহক পরিসংখ্যান প্রায় ৮০ হাজার। ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলে এখন ১৬-১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ওই পরিসংখ্যান সবদিনই একই থাকছে না।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম (টেকনিক্যাল) প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা মুঠোফোনে মানবজমিনকে জানান, জেলায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার। পিক আওয়ারে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা ১শ’ মেগাওয়াট আর অফ পিকে ৭০। বিপরীতে তারা জাতীয় গ্রিড থেকে পাচ্ছেন প্রায় ৬০ মেগাওয়াট। তবে এই প্রাপ্তি প্রতিদিনই একহারে নয় তা কম বেশি হচ্ছে।
পঞ্চগড়
সাবিবুর রহমান সাবিব, পঞ্চগড় থেকে: তীব্র দাপদাহের পাশাপাশি অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড় জেলার মানুষের জীবনযাপন। সে সঙ্গে সর্বক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বেশ কয়েকদিন ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পঞ্চগড় পৌর এলাকায় এক ঘণ্টা পর পর এক ঘণ্টা করে ও গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। দিনে ও রাতে মানুষ ৩-৪ বার গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছে না। রাতে ঘুমাতে পারছে না লোকজন। বিশেষ করে অভিভাবকরা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে পড়েছে চরম বিপাকে। হাত পাখা দিয়ে শিশুদের বাতাস করতে গিয়ে তাদের আর ঘুম হচ্ছে না। এ ছাড়া, বিদ্যুতের অভাবে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কল কারখানায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। গত মঙ্গলবার তাপদাহ সংক্রান্ত জেলা প্রশাসকের এক সভায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকোর কোনো কর্মকর্তা যাননি। পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ী ইউনিয়নের ঠাটপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানায়, একবার বিদ্যুৎ গেলে ২-৩ ঘণ্টা আসে না। এ জন্য রাতের বেলা ঘুমাতে পারি না। দিনের বেলাতেও কাজ কর্ম করা যাচ্ছে না।
আটোয়ারী উপজেলার সুখ্যাতি এলাকার আহসান হাবিব বলেন, দিনের বেলা কোনো সময় টানা ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে। রাতের বেলা ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। এতে ঘুমানো যাচ্ছে না। ছোট সন্তানদের নিয়ে আমরা সবাই খুব সমস্যায় আছি। একদিন রাতে প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে না পেরে আমার অসুস্থ বাবা (এমদাদুল হক ৮৩) কাউকে কিছু না জানিয়ে বাথরুমে গোসল করতে যান। তেঁতুলিয়ার এসকে দোয়েল বলেন, তাপদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিনে জীবনযাত্রায় স্থবিরতা ও রাতে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পঞ্চগড় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান দেওয়ান বলেন, আমাদের আওতায় গ্রাহকের সংখ্যা ৩৫ হাজার। এসব গ্রাহকের জন্য দিনে ১৮ ও সন্ধ্যা রাতে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেখানে দিনে ১১-১৪ মেগাওয়াট ও রাতে ১২-১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।
পঞ্চগড় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মো. মেহেদী হাসান বলেন, সদর, আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় আমাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার। এ গ্রাহকদের জন্য সান্ধ্যকালীন প্রায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেখানে ১৫ থেকে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে।