শরীর ও মন
অটিজম শিশুও কথা বলতে পারবে
ডা. এম এ হক, পিএইচডি
৫ জুন ২০২৩, সোমবার
বর্তমান সময়ে অটিজম একটি বড় সমস্যা। অটিজমের শিশুদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা অর্থপূর্ণ কথা বলতে পারে না। আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো কেন এমনটি হয়? একটি শিশু সাধারণত ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা বলে, ১৬ মাসের মধ্যে কোনো একটি শব্দ বলে। ২৪ মাস বয়সের মধ্যে দুই বা ততোধিক শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে। তবে, অটিস্টিক শিশু এই সময়ে কথা বলে না বা বলতে পারে না।
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো:
সহজভাবে বুঝার জন্য আমাদের শরীরকে মোবাইল ফোনের সঙ্গে তুলনা করা হলো। মোবাইল অন করার জন্য একটি অপারেটিং সফটওয়্যারের যেমন প্রয়োজন হয় তেমনি মানব শরীরও একটি অপারেটিং সফটওয়্যার দ্বারা পরিচালিত হয়। এ কারণে আমাদের ক্ষুধা, ঘুম, শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগ, মলমূত্র ত্যাগ, রক্ত চলাচল, কিডনির কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। মোবাইলে অতিরিক্ত কাজ করার জন্য আমরা যেমন বিভিন্ন প্রোগ্রামিং অ্যাপস ইনস্টল করি তেমনি আমরা আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন অ্যাপস অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ করি। যেমন: লেখাপড়া, গাড়ি চালানো, সাঁতারকাটা ইত্যাদি। তেমনি আমরা শিশু বয়স থেকেই যোগাযোগ করার জন্য মাতৃভাষায় কথা বলা শিখি।
কারণ:
মাতৃগর্ভে মানব ভ্রƒণ সৃষ্টির প্রথম দিনেই শিশুর অপারেটিং সফটওয়্যার ইনস্টল শুরু হয় এবং এই সিস্টেমের মধ্যে নেগেটিভ ও পজিটিভ ২টি ফ্যাক্টর কাজ করতে শুরু করে। এদের মধ্যে যে ফ্যাক্টরটি জয়লাভ করে সেটির প্রভাবই আমাদের অপারেটিং সফটওয়্যারে প্রতিফলিত হয়। পিতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ শুক্রাণুর মাধ্যমে এবং মাতার বংশের জেনেটিক ফ্যাক্টরসমূহ ডিম্বাণুর মাধ্যমে সন্তানের শরীরে প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে, সন্তান পিতা-মাতার বংশের জেনেটিক পজিটিভ ও নেগেটিভ ফ্যাক্টর নিয়ে বেড়ে উঠে। মাতার গর্ভধারণের সময় থেকেই এই ক্রিয়া শুরু হয় এবং মাতার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিষয়ও অপারেটিং সফটওয়্যারকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। মাতার গর্ভকালীন সময়ে গর্ভের সন্তানের মধ্যে নেগেটিভ ফ্যাক্টর জোরালো থাকলে গর্ভের সন্তান এবোর্শন হওয়া অথবা অসুস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হতে পারে। এভাবে যখন নেগেটিভ ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত ভূমিষ্ঠ হওয়া একটি শিশুর ক্রমোজম এবং মস্তিষ্কের নিউরোনের মধ্যে যখন জটিলতা তৈরি হয় অর্থাৎ অপারেটিং সফটওয়্যার ত্রুটিযুক্ত হয় এবং শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এ ধরনের ত্রুটিযুক্ত অপারেটিং সফটওয়্যার নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুকেই আমরা অটিজমে আক্রান্ত শিশু বলি। এদের অনেক অ্যাপস বা শিক্ষা স্বাভাবিকভাবে ইনস্টল করা সম্ভব হয় না। এরা সঠিকভাবে কথা বলতে বা শিখতেও পারে না।
সমাধান কি?
সমাধানের জন্য পিতা-মাতা উভয় পরিবারের জেনেটিক তথ্য সংগ্রহ করে ত্রুটি খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী জেনেটিক ট্রিটমেন্ট করলে এর সমাধান সম্ভব। আমরা আমাদের চিকিৎসায় এভাবেই সফলতা পাচ্ছি।
লেখক: পিএইচডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল (স্বাস্থ্য), ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর (জি-৪), ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০৩১০