বাংলারজমিন
একটি হত্যাকাণ্ড এবং ভাইরাল ভিডিও ...
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
৫ জুন ২০২৩, সোমবারনিহত হাজী মো. দুলাল
নোয়াখালীতে সালিশ থেকে ন্যায়বিচার করে ফেরার পথে অন্যায়কারীদের হাতে গুলিবিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতার জবানবন্দির ভিডিও ভাইরালে চেয়ারম্যান বাহিনী আদালতে শনাক্ত হয়েছে। সুধারাম মডেল থানার তদন্তকারী ওসি নিজাম উদ্দিন পাঠান গতকাল মানবজমিনকে বলেন, হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. সবুজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নাম বলেন। এলাকাবাসী জানান, দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) হাজী মো. দুলালের আহত অবস্থার ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই করা হয়েছে বলে তার নিহতের বড় ছেলে আবদুল আজিজসহ একাধিক সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৪১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও’র শুরুতে নিহত দুলাল মেম্বারকে বলতে শোনা যায়, ‘একগা সুমইন্যা’ (একজন সুমন)। এ সময় পাশে থাকা একজন তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘সুমন ইগা কে? কার লগে চলাফেরা করে?’ (সুমন কে? কার সঙ্গে চলাফেরা করে?) জবাবে দুলাল মেম্বার বলেন ‘চেয়ারম্যানের লোক’।
পাশে থাকা ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করে ‘বর্তমানে জসিম চেয়ারম্যানের লগে রানিং চলাফেরা করে?’ (বর্তমান চেয়ারম্যান জসিমের সঙ্গে চলাফেরা করে?) উত্তরে মেম্বার বলে, ‘জসিম চেয়ারম্যানের লোক। আরেকগা অইছে ইছুবিয়ার ভাই ফারুক মাঝির...’ (জসিম চেয়ারম্যানের লোক। আরেকজন হচ্ছে ইউছুপের ভাই ফারুক মাঝির....)। পাশে থাকা ব্যক্তি জানতে চায়, ‘ফিরোইজ্যা?’ (ফিরোজ?)। দুলাল মেম্বার বলে ‘ফিরোইজ্যা ইগার নাম। আরেকগা অইলো নুর হুসুইন্নার হোলা সবুইজ্জা’। (ওর নাম ফিরোজ। আরেকজন হলো নুর হোসেনের ছেলে সবুজ।) তখন অন্য ব্যক্তি দুলাল মেম্বারকে বলেন, ‘আন্নে এই তিনুগারে দেখছেন?’ (আপনি এই ৩ জনকে দেখেছেন?)। জবাবে দুলাল মেম্বার বলেন, ‘আর গুনরে চিনি ন।’ (আর কাউকে চিনি নাই)।
ওই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে ‘এই তিনগারে চিনছেন নি কি?’ (এই ৩ জনরে চিনছেন?) জবাবে দুলাল মেম্বার সম্মতিসূচক উত্তর দিলে ওই ব্যক্তি নামগুলো আবার বলতে বলে। তখন মেম্বার বলে, অকগা সবুজ, অকগা ফিরোজ, অকগা সুমন।’ ভিডিওটি’র বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত দুলাল মেম্বারের ছেলে আবদুল আজিজ বলেন, ভিডিওটি কে করেছে তা আমি জানি না। তবে ভিডিওটি বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় করা হয়েছে এবং কণ্ঠ আমার বাবার। আন্ডারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ভিডিও’র বিষয়ে বলেন, আন্ডারচর ইউনিয়নের ৪০ হাজার লোকই আমার লোক। ভিডিওতে যে সুমনের কথা বলা হয়েছে সে আমার লোক না। সে আমার এলাকার লোক। আমার সঙ্গে যারা গত নির্বাচনে ভোট করেছে তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছে। যেহেতু বক্তব্যে সুমনের নাম এসেছে তাই প্রশাসনসহ আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি’র বিষয়ে সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ইতিমধ্যে দুলাল মেম্বার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় সবুজ নামের একজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি এবং সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি এবং পর্দার আড়ালে যারা রয়েছে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য, ২৫শে মে রাত ৯টার দিকে এলাকায় সালিশি বৈঠক শেষে বাসায় ফেরার পথে ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) হাজী মো. দুলাল হোসেন (৪০) দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।