শেষের পাতা
তুরস্কে নতুন ইতিহাস গড়লেন এরদোগান
মানবজমিন ডেস্ক
৪ জুন ২০২৩, রবিবার
ঐতিহাসিক নির্বাচনে দুই দশকের বেশি ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। শনিবার নতুন ৫ বছর মেয়াদে ১২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে টার্কিশ গ্রান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে শপথ নেন তিনি। এরপরই তিনি দেশের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে যান অনিতকবিরে। এর মধ্যদিয়ে তিনি হলেন তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে নতুন মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা করার কথা তার। এই নতুন মন্ত্রিপরিষদের কাজ হবে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালনা করা। এরই মধ্যে সংকটে পড়ে সেখানে মুদ্রাস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ধস নেমেছে স্থানীয় মুদ্রা লিরা’র। একদিকে এরদোগান যেমন মুসলিম বিশ্বের কাছে জনপ্রিয়, তেমনি তিনি পশ্চিমাদের সঙ্গে বোধগম্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। দেশে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আয়োজন করা হয় বিলাসবহুল অনুষ্ঠান। সেখানে যোগ দেয়ার কথা বিশ্বের কয়েক ডজন নেতার।
গত ২৮শে মে দ্বিতীয় দফার ভোটে শক্তিধর বিরোধী জোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেন এরদোগান। দেশে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকট এবং ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর তা নিয়ে কড়া সমালোচনার পরও তিনি জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। নির্বাচনে তিনি শতকরা ৫২.২ ভাগ ভোট পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগলু পেয়েছেন শতকরা ৪৭.৮ ভাগ ভোট।
আঙ্কারা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ওসামা বিন জাভিদ বলেছেন, এরদোগানের নতুন মেয়াদের অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৭৮ জন সদস্য যোগ দেন। এর মধ্যে আছেন কয়েক ডজন প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এ সময়ে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এরদোগান শুধু তার দৃষ্টিভঙ্গিই ঘোষণা করবেন তাই নয়। একই সঙ্গে তার মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণা করবেন। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার শতকরা ৪৩.৭ ভাগ। এর মধ্যে দেশের অর্থনৈতিক সংকট হবে এরদোগানের শীর্ষ অগ্রাধিকার।
নির্বাচিত এমপিদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। এতেও যোগ দিয়েছেন এরদোগান। তার জোট ৬০০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে ন্যাটোর মিত্ররা উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছে সুইডেনের বিষয়ে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে চায় সুইডেন। তাতে আঙ্কারার আপত্তি আছে। তাই সবাই তাকিয়ে এখন এরদোগানের দিকে। তিনি সুইডেনের বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন কিনা। জুলাইয়ে ন্যাটোর সামিট আছে। সবাই তার কাছে আশা করছে এর আগেই এরদোগান সবুজ সংকেত দেবেন। কিন্তু এরদোগান নিজে এক্ষেত্রে গড়িমসি করছেন। তার দেশে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষিত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতাকর্মীদের ঠাঁই দিয়েছে সুইডেন। ফলে তিনি নিষিদ্ধ এই গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার কারণে সুইডেনের সদস্যপদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এরদোগানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গের। তবে তাতে এরদোগানের মন গলবে কিনা বলা যায় না। তবে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোবিয়াস বিলস্টর্ম টুইটারে বলেছেন- এই প্রক্রিয়া নিয়ে তুরস্ক এবং হাঙ্গেরির বিষয়ে ওসলোতে ন্যাটোর মিটিং থেকে একটি পরিষ্কার বার্তা পাওয়া গেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, সুইডেন আমাদের বন্ধু। তাদের প্রতি একটি ক্রিস্টাল পরিষ্কার বার্তা।