শেষের পাতা
পাকিস্তানে মাইনাস ইমরান ফর্মুলা!
মানবজমিন ডেস্ক
২ জুন ২০২৩, শুক্রবার
রাওয়ালপিণ্ডির কেন্দ্রীয় কারাগার। নাম আদিয়ালা জেল। তার ভেতরে রাজনৈতিক গোপন বৈঠক। শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে ফাওয়াদ চৌধুরীর বৈঠক। সেই বৈঠকে ‘মাইনাস ইমরান’ ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা। পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দল থেকে কয়েকদিনে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। এর মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপিরা। তাদের কেউ কেউ এখন ইমরান খানকে মাইনাস করে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার পরিকল্পনা করছেন। এদের মধ্যে একজন ইমরান খানের সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ফাওয়াদ চৌধুরী। তিনি বুধবার গোপনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে এ নিয়ে গোপন বৈঠক করেন আদিয়ালা জেলে।
তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সিন্ধুর সাবেক গভর্নর ইমরান ইসমাইল, আমির কিয়ানি এবং মেহমুদ মৌলভী। তাদের জন্য জেলখানার মধ্যে একটি আলাদা রুমে আয়োজন করা হয় সাক্ষাতের ব্যবস্থা। শাহ মেহমুদ কুরেশিকে টোপ দেন পিটিআই ত্যাগ করতে। কিন্তু সেই টোপ গেলেননি কুরেশি। ফলে তারা লক্ষ্য অর্জনে সফল হননি বলেই মনে হচ্ছে। কুরেশির ছেলে জাইন কুরেশি টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তার পিতার সম্পর্কে লিখেছেন, মাখদুম সাহেব দলের (পিটিআই) ভাইস চেয়ারম্যান। একটি আদর্শের নাম। পিটিআই এবং ইমরান খানের আদর্শের পক্ষে আছি আমরা। তিনি (কুরেশি) শুধু নীতি এবং সেবার জন্য রাজনীতি করেন। পদ বা লোভের জন্য নয়। ইমরান খানের সঙ্গে তিনি আগেও ছিলেন। এখনো আছেন।
৯ই মে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানে ব্যাপক সহিংসতা ঘটায় তার নেতাকর্মীরা। তাদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি ক্যান্টনমেন্ট ও সেনা কর্মকর্তারা। এ জন্য বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সামরিক আইনে বিচার হচ্ছে। ইমরান খানের বিচারও এই আইনে করার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে। জেল দেয়া হয়েছে অনেককে। সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে দল বা রাজনীতি ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরানের বিশ্বস্ত সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী, মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী শিরিন মাজারি, দলের সেক্রেটারি পদ ত্যাগ করেছেন আসাদ উমর। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক এমপি, নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগী এসব নেতাকর্মীর মধ্যে নতুন করে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে অবশ্যই তা ইমরান খানকে বাদ দিয়ে। অর্থাৎ মাইনাস ইমরান ফর্মুলা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন তারা।
ইমরান খান যে আইনি প্যাঁচে পড়েছেন তাতে তার যেকোনো সময় জেল হতে পারে। যদি সত্যি সত্যি সামরিক আইনে বিচার হয়, তাহলে তার ভবিষ্যৎ কী তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। এমন অনিশ্চয়তার মুখে এক সপ্তাহ আগে ইমরান খান ঘোষণা করেছেন, যদি তাকে গ্রেপ্তার বা অযোগ্য ঘোষণা করা হয় তাহলে দলের নেতৃত্ব দেবেন শাহ মেহমুদ কুরেশি। এ জন্যই ফাওয়াদ চৌধুরীরা তার সামনে টোপ ফেলেছেন। যদি কুরেশিকে সেই টোপ গেলাতে পারেন, তাহলে পিটিআই মারাত্মকভাবে অস্তিত্ব সংকটে ভুগবে।
জেলখানায় গোপন বৈঠক হলেও খবর জানাজানি হয়ে যায়। এর বাইরে ততক্ষণে সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। মিটিং শেষে ফাওয়াদ চৌধুরী ও অন্যরা বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) জোট সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য এ সরকারকে দায়ী করেন। ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, (সাবেক প্রেসিডেন্ট) আসিফ আলি জারদারি, (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) নওয়াজ শরীফ এবং (জামায়াতে ইসলামী উলেমা ফজলুর চেয়ারম্যান) মাওলানা ফজলুর রেহমানের করুণার ওপর পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষকে ছেড়ে দেয়া যায় না। ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তার ভাষায়- আমরা স্থিতিশীল একটি সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি।
আটক থাকা পিটিআই’র কয়েক হাজার নেতাকর্মীর প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেছেন, ৯ই মে সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক ছিল না তাদের বেশির ভাগের। তাদেরকে মুক্ত করানোর দায়িত্ব দলের। তিনি আশা করেন সহিংসতার সময়ে বেসামরিক এবং সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়েছিল। যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে তা হতে হবে আইন অনুযায়ী।
তিনি এ মন্তব্য করলেন এমন এক সময়ে যখন সারা দেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে জল্পনা চলছে। বলা হচ্ছে, পিটিআই ত্যাগ করেছেন যেসব নেতা, তারাই এই দল গঠনে কাজ করছেন। এ বিষয়ে ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন তিনি পিটিআই’র সাবেক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বলেন, আমরা এরই মধ্যে আসাদ উমরের সঙ্গে বিস্তারিত মিটিং করেছি। যোগাযোগ করেছি আসাদ কায়সার, ফাররুখ হাবিব, শাহজাদ ওয়াসিম, আলি জাইদি, হাম্মাদ আজহার, পারভেজ খাত্তাক এবং অন্য নেতাদের সঙ্গে। এসব উদ্যোগের মধ্যদিয়ে তারা কী অর্জনের চেষ্টা করছেন, তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে যে, তারা মাইনাস ইমরান ফর্মুলা নিয়ে কাজ করছেন।
এ লক্ষ্যে শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, পিডিএম নেতৃত্বাধীন সরকারকে সক্রিয় বিরোধী দল ছাড়া একটি খোলা মাঠ ছেড়ে দেয়া যায় না। বলেন, দেশ যে সমস্যা মোকাবিলা করছে তার সমাধান প্রয়োজন। দুর্ভাগ্য হলো, দেশ রক্ষার ভূমিকা পালনের জন্য কেউই নেই। উল্লেখ্য, পিটিআই থেকে পদত্যাগের পর এটাই ছিল মিডিয়ার সামনে প্রথম বক্তব্য ফাওয়াদ চৌধুরীর। ওদিকে ফাওয়াদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন আসাদ কায়সার। ফাররুখ হাবিবও একই রকম মন্তব্য করেছেন। তিনি টুইটে বলেছেনÑ ইমরান খানকে ছাড়া কোনো রাজনীতি নয়।